Sylhet View 24 PRINT

টিলাগড় থেকে ‘সাবধান’ ও কিছু কথা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০১-১১ ১১:২২:১৬

কামাল হোসেইন খান ::
সম্প্রতি সিলেট নগরীর টিলাগড়ে ছাত্রলীগ কর্মী খুনের ঘটনায় ভার্চুয়াল জগতে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে এলাকাকে ঘিরে। বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক আইডিতে বৃহত্তর টিলাগড় এলাকার নাম ব্যবহার করে নানা ধরনের নেতিবাচক পোস্ট দেখা যাচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা হিসেবে আমাদের জন্য এটা বড় মনোকষ্টের।

প্রিয় টিলাগড়। এখানে আমার জন্মস্থান নয়। তবে ২৯ বছর থেকে এই টিলাগড়ে বসবাস করছি। কৈশোর থেকে আজ অবধি টিলাগড়েই আছি। জন্মস্থানের চেয়ে কোন অংশে কম মায়া নয়। আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এলাকার জন্য। রাজনৈতিক, সামাজিক সম্প্রীতির এক অনন্য মেল-বন্ধনে আবদ্ধ টিলাগড়বাসী।

মুক্তিযুদ্ধে টিলাগড়ের রয়েছে বিশাল ভূমিকা। সিলেটের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজ, সরকারী কলেজ, শিশু বিদ্যালয় এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ টিলাগড়ে অবস্থিত। শিক্ষা বিস্তারের চারণভুমি এই টিলাগড় প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা। সিলেটের কৃতি সন্তানেরা যারা আজ জাতীয় পর্যায়ে গিয়েছেন, তারা টিলাগড় এমসি কলেজ থেকে রাজনীতি করে আজ জাতীয় পর্যায়ে।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মরহুম এডভোকেট শফিকুর রহমান, বিয়ানীবাজার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল খালিক মায়ন সাহেবের মত মানুষ এই টিলাগড়ের বাসিন্দা ছিলেন।  সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী এই টিলাগড়ের বাসিন্দা।

গ্রামাঞ্চলের ন্যায় বৃহত্তর টিলাগড়ে মুরব্বীদের নিয়ে আছে পঞ্চায়েত কমিটি। ছোটখাটো সব সমস্যা আমাদের মুরব্বীরা পঞ্চায়েতের সালিসের মাধ্যমে শেষ করে দেন। কোন সমস্যা হলেই থানায় যেতে হয়না। এই এলাকার মুরব্বীরা ছায়ার মত আগলে রাখেন মানুষজনকে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে ৩০/৪০ টি ছাত্র/ছাত্রী ম্যাচও এই টিলাগড়ে বিদ্যমান আছে। সেখান তারা নিজের বাড়িঘরের মত থাকছে এবং নির্বিগ্নে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এই এলাকার মানুষের স্নেহ ভালোবাসা ও সহযোগীতায় অনেক রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মধ্য অন্যতম আজাদুর রহমান আজাদ ও রঞ্জিত সরকার। তাদের সুসময়ে দু:সময়ে এলাকার মানুষ পাশে থেকেছে এবং দিয়ে যাচ্ছে নৈতিক সমর্থন।  জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এই দুই সৈনিক রাজনীতির জন্য বিসর্জন দিয়েছেন জীবনের অনেক কিছু।

আওয়ামী লীগের চরম পরীক্ষিত কর্মী শেখ হাসিনার সিলেটের দুই ভ্যানগার্ড আজাদুর রহমান আজাদ মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং রঞ্জিত সরকার সুনামগঞ্জ -১ আসনের এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী। যা টিলাগড়বাসীর জন্য আনন্দ ও গর্বের বিষয়।

আওয়ামীলীগ এর চরম দু:সময়েও টিলাগড় আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এই ঘাটির মধ্য কোথায় যেনো বড়ো ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। খুন খারাবির জন্য সমগ্র সিলেট তথা জাতীয় দৈনিকের ও টিভি চ্যানেলের শিরোনাম হয়ে যাচ্ছে টিলাগড়।

ঐতিহ্যবাহী টিলাগড়ের ঐতিহ্য ম্লান হয়ে যাচ্ছে। সিলেটের মানুষ টিলাগড় নিয়ে টিজ করে।  ফেসবুকে ভাইরাল করা হচ্ছে  ‘সাবধান, সামনে টিলাগড় ’ বলে ব্যঙ্গ কার্টুন। বাস্তবে তা সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু টিলাগড় এলাকার বাসি›ন্দাদের হৃদয় ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে।

এলাকার বাসিন্দা হিসেবে আমাদের প্রিয় দুই নেতার- আজাদ ভাই রঞ্জিত দা’র কাছে আকুল আবেদন, একমাত্র আপনারাই পারেন এই টিলাগড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে।

এলাকার মানুষ আপনাদের দিকে চেয়ে আছে, আপনাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখে- মেয়র হবেন, এমপি হবেন।
আপনারা মূল দলের রাজনীতি করেন, কিন্তু আপনাদের দেখেই তো ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে তরুণ সমাজ। হাজারো কর্মী আপনাদের পেছনে।

আর যাতে কোন মায়ের বুক খালি না হয়,
আর যাতে রক্তে রঞ্জিত না হয় টিলাগড়,
আর যাতে কেউ টিলাগড় নিয়ে টিজ না করে-
আপনারা এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে বৃহত্তর টিলাগড়ের ভালোবাসার ঋণ পরিশোধ করবেন।
এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ আপনাদের দিকে চেয়ে আছে।

লেখক: সাবেক সভাপতি, টিলাগড় শাপলা সংঘ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.