Sylhet View 24 PRINT

মৌলভীবাজারে যেভাবে খুন করা হয় প্রতিবন্ধী আরিফকে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০১-১৯ ০০:০২:০০

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী আরিফ হোসেন হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন হত্যারহস্য উদঘাটনের কথা জানিয়েছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে আরিফ হত্যারহস্য উদঘাটনের কথা জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের লিখিত বক্তব্য দেয়া হয়। ওই বক্তব্য থেকে জানা যায়, গত বছরের ২৪ জুন সকাল ১১টার দিকে কাইয়ুমের স্ত্রী সুফিয়া থালা-বাসন ধৌত করতে তাদের যৌথ পুকুরে যায়। এ নিয়ে সুফিয়ার সাথে ইয়াকুত মিয়ার চাচা মশ্ববের কথা কাটাকাটি হয়। হত্যার ব্যাপারে আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে আরবেশ আলীর চাচাত ভাই কালাম মিয়ার ঘরে ইয়াকুত মিয়া, জুনায়েদ, বেলাল ও তোফায়েল আহমদসহ একত্রে বসে সিদ্ধান্ত নেয় যে এ বিষয় নিয়ে আব্দুল খালেক ঝগড়া বাঁধালে তারা ইয়াকুব মিয়ার ভাতিজা প্রতিবন্ধী আরিফ হোসেনকে হত্যা করে তাদের ফাঁসাবে। পরে বিকেলে কথা কাটাকাটির বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাঁধলে দু’পক্ষের মধ্যে ইট পাটকেল ছুড়াছুড়ি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন।

লোকজন আহতদের উদ্ধার করে মৌলভীবাজার হাসপাতালে প্রেরণ করে। ঝগড়ার আধা ঘণ্টা পর ঘরের সামনে থাকা প্রতিবন্ধী আরিফ হোসেনকে ইয়াকুত মিয়া একটি বাঁশের টুকরা দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। চাচার আঘাতে আরিফ রক্তাক্ত হয়। জোনায়েদ, বেলাল ও তোফায়েল আরিফকে ধরাধরি করে কালামের ঘরের বারান্দায় নিয়ে যায়। পরে ইয়াকুব মিয়ার নির্দেশ দেয় আরিফকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে হত্যা করার জন্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী জুনায়েদ যায় অটোরিকশা আনতে আর তোফায়েল যায় শ্রীমঙ্গলে।
জুনায়েদ আহত আরিফকে নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার (মৌলভীবাজার-থ-১২-৩১৪০) চালক শামসুল হককে নিয়ে হাসপাতালে দিকে রওয়ানা হয়। রাত সোয়া ৮টার দিকে জুনায়েদ ফোন দিয়ে তোফায়েলকে দা আনতে বলেন। তোফায়েল দা কিনে শ্রীমঙ্গলের রাজাপুর মেইন রোডে দাঁড়ান। পরে অটোরিকশা এলে সেটিতে ওঠে পড়েন।

অটোরিকশা নিয়ে তারা মাজদিহি চা বাগানের ৭নং সেকশনে যায়। সেখানে আরিফকে নামিয়ে তার পায়ের গোড়ালিতে কোপ দেয়। সে জায়গা নিরাপদ না হওয়ায় তারা আরিফকে নিয়ে গিয়াসনগরের দিকে যায়। একপর্যায়ে আরিফের ঘাড় ও মাথায় কোপানো হয়। জোনায়েদ আরিফের মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলাচেপে ধরে। এরপর তারা আরিফকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরের দিন কালাম মিয়ার ঘরে বসে ইয়াকুত মিয়া, জুনায়েদ, বেলাল ও তোফায়েল মিলে প্রতিজ্ঞা করে, ‘জীবনে মৃত্যু আসতে পারে, ঝগড়াঝাটি হতে পারে আমরা এ খুনের কথা কাউকে বলব না।’ তারা চালক শামসুল হককে ৩ হাজার টাকা দিয়ে এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য বলে। বললে তাকে এ ঘটনায় ফাঁসানো হবে বলে হুশিয়ার করে দেয়।

পিবিআই এ ঘটনায় তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে তাদের তদন্ত শুরু করে। কোন মারামারির ঘটনা ঘটলে একাধিক ব্যক্তি আহত হলে গুরুতর ব্যক্তিকে হাসপাতালে আগে নেওয়া হয়। মৃত আরিফের সুরতহাল ও ময়না তদন্ত রিপোর্টে তার মাথার পিছনে ও দু’পায়ের গোড়ালির উপর ধারালো অস্ত্রের আঘাত এবং গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি আসে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আপন ভাতিজা বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী আরিফুল ইসলাম আরিফ হত্যা করা হয়। এ বিষয়ে প্রথমে শ্রীমঙ্গল থানায় আরিফের বাবা আরবেশ আলী বাদী হয়ে ১৮ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। পরে শ্রীমঙ্গল থানা ১৮ জন আসামীর মধ্যে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র পাঠায়। ৩ জনের নাম বাদ দেয়ার কারণে আদালতে নারাজি দেন বাদী। আদালত পিবিআইকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। পিবিআই হত্যার মূলপরিকল্পনাকারী মামলার ২নং সাক্ষী ইয়াকুত আলী ও তোফায়েল আহমেদ গ্রেফতার করে। পরে তারা আদালতে আরিফকে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত একটি সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধার করে পিবিআই।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ জানুয়ারি ২০১৮/ওফানা/আরআই-কে

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.