আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটের সেই ‘মৃত’ ব্যক্তি গ্রেফতার, করতেন কুফরি কালাম!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৪-১৮ ২২:৪৮:১৬

রফিকুল ইসলাম কামাল :: অভিযোগ ছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। ফয়জুর রহমানকে পুলিশ সদস্যরা অপহরণ করে হত্যা করে লাশ গুম করেছে-এমন অভিযোগে আদালতে দরখাস্ত করেন তার স্ত্রী ফারহানা বেগম। সেই দরখাস্ত তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কিন্তু এরইমধ্যে ঘটেছে চমকপ্রদ ঘটনা। যাকে ‘অপহরণ করে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে’ বলে অভিযোগ, সেই ফয়জুর রহমানকে ফাঁদ পেতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একইসাথে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় হলেও কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকায় জ্বিন-ভুত তাড়ানোর নামে তাবিজ-কবজ এবং কুফরি কালামে লিপ্ত ছিলেন ফয়জুর।

পুলিশ জানায়, ভৈরব শহরের দুর্জয় মোড় থেকে গত মঙ্গলবার দুপুরে ফয়জুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে কানাইঘাটে নিয়ে এসে তার বাড়ির সামনে কলাবাগানের মধ্য থেকে মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় একটি পাইপগান ও একটি লম্বা ছোরা উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আগেই কানাইঘাট থানায় একটি মামলা ছিল। গ্রেফতারের পর অস্ত্র উদ্ধার করে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ফয়জুর রহমানকে।

কানাইঘাট উপজেলার চরিপাড়া গ্রামের মৃত আবু ছিদ্দিকের ছেলে ফয়জুর রহমান (৪০)।

সিলেটভিউ২৪ডটকমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম।

জানা যায়, মামলা নং ১৬/২০/০২/২০০৯, জিআর ৩০/০৯নং এবং দায়রা ৫৯/১১নং মামলার আসামি কানাইঘাট উপজেলার চরিপাড়া গ্রামের মৃত আবু ছিদ্দিকের ছেলে হবিবুর রহমান ওরফে হরুহুনাকে গ্রেফতার করতে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে তার বাড়িতে অভিযান চালায় থানা পুলিশ।

পুলিশের দাবি, ওই সময় ‘ডাকাত’ হবিবুর রহমান ও তার সহযোগিরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপর আক্রমণ করে। এসময় এসআই বশির আহমেদসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ডাকাতরা পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাকালে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে। কিছু সময় পর ডাকাতরা ফের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও মাটিতে শুয়ে পাল্টা গুলি চালায়। গুলাগুলি চলার সময় হবিবুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন।

পুলিশ বলছে, হবিবুর রহমান তার সহযোগিদের গুলিতেই গুলিবিদ্ধ হন এবং পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে, তবে তার সহযোগিরা পালিয়ে যায়।

গুলাগুলির খবর পেয়ে কানাইঘাট থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। তারা আহত পুলিশ সদস্য ও হবিবুর রহমানকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা হবিবুর রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় কানাইঘাট থানার এসআই আবু কাউছার বাদী হয়ে ৯ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১২/১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-০৯/২২/১২/২০১৭ এবং ধারা-১৪৩/৩৪১/১৮৬/২২৪/৩৩২/৩৩৩/৩০৭/৩৫৩/৩০২)। মামলার প্রধান আসামি করা হয় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হবিবুর রহমানের ভাই ফয়জুর রহমানকে।

সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম জানান, ওই গুলাগুলির ঘটনার পর ‘সহযোগি ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের প্ররোচনায়’ ফারহানা বেগম বাদী হয়ে আদালতে একটি দরখাস্ত করেন। সেখানে তিনি কানাইঘাট থানার ওসিসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তার স্বামী ফয়জুর রহমানকে অপহরণ করে লাশ গুম করার অভিযোগ করেন (কানাইঘাট সিআর নং-৩৭১/১৭)। এই দরখাস্তটি তদন্তের দায়িত্বে আছে পিবিআই।

এদিকে, ০৯/২২/১২/২০১৭ নং মামলার প্রেক্ষিতে আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছিলেন কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ নুনু মিয়া। গোপন সংবাদের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে, ফয়জুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকায় জ্বিন-ভুত তাড়ানোর নামে তাবিজ-কবজ এবং কুফরি কালামে লিপ্ত। তাকে গ্রেফতারে ভৈরব থানা পুলিশের সহায়তায় একজন মহিলাকে রোগী সাজিয়ে ফাঁদ পাতা হয়। সেই ফাঁদে পা দেন ফয়জুর রহমান। গত মঙ্গলবার দুপুরে ভৈরব শহরের দুর্জয় মোড় থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে।

সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম জানান, গ্রেফতারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুর রহমান তার নিকট আগ্নেয়াস্ত্র থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। বুধবার ভোর রাত সাড়ে ৪টায় তাকে নিয়ে তার কানাইঘাটস্থ বাড়ির সামনের কলাবাগানের মধ্যে অভিযানে যায় পুলিশ। সেখানে মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় দেশীয় তৈরী একটি পাইপগান ও একটি লম্বা ছোরা উদ্ধার করা হয়। ফয়জুর রহমান তার দলের নিকট ‘আরো আগ্নেয়াস্ত্র আছে’ বলে ‘স্বীকার করেছেন’।

এই অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ নুনু মিয়া অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছেন (নং-১৩/১৮/০৪/২০১৮)।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ এপ্রিল ২০১৮/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন