আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

ছাতকের আসিক ‘বাহিনীর’ বিরুদ্ধে অন্তহীন অভিযোগ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-১৫ ১৬:৫০:৩৫

সিলেট :: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের জামুরাইল গ্রামের ইদ্রিছ আলীর ছেলে আসিক মিয়া ও তার ‘বাহিনীর’ বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠেছে। মঙ্গলবার বেলা ২টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরেন একই গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে শাহীনুর রহমান বাবুল।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহীনুর রহমান বাবুল বলেন, ‘জামুরাইল গ্রামের ইদ্রিছ আলীর ছেলে মিম্বর, শফিক, সুন্দর ও সিরাজ দীর্ঘদীন ধরে সৌদিআরব থেকে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাচার করছেন। দেশে থাকা তাদের ভাই আসিক মিয়া ও মাসুক সরকার রেমিটেন্স ও কর ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে হুন্ডি ব্যবসা করছেন। স্থানীয় পুলিশের সাথে সখ্যতা করে এরা বাহিনী গড়ে তুলেছে। এ বাহিনীর মাধ্যমে হুন্ডি ব্যবসা চালানোর পাশাপাশি অসহায় মানুষের উপর নির্যাতন চালান আসিক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কিছু করতে পারবে না বলে তারা দম্ভ করে। নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে তারা অপরাধ কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ করে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন আসিক বাহিনীর অবৈধ ব্যবসা ও অপরাধ কর্মকা-ের তথ্য জানলেও রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকা পালন করে।’

আসিক বাহিনী শাহজালাল অটো ট্রেডার্স, শাহজালাল এন্টারপ্রাইজ, শাহজালাল পোল্ট্রি, আল রহমান ট্রাভেলসসহ আরও কয়েকটি বেনামি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে ‘হুন্ডি ও আদম ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে’-এমন অভিযোগ করে শাহীনুর রহমান বাবুল বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের কোটি কোটি টাকা রয়েছে। এসব টাকার উৎস খুঁজতে গেলে তাদের অবৈধ ব্যবসার তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বাবুল আরো বলেন, ‘২০১৭ সালের ২৬ আক্টোবর গ্রামের মৃত আনজুব আলীর ছেলে সৌদিপ্রবাসী আরজ আলীর (বাবুলের ফুফাতো ভাই) নিকট পাওনা টাকা দাবি করে তার উপর হামলা চালায় আসিক বাহিনী। হামলার ঘটনায় সালিশ বসে। সেখানে আসিক স্বীকার করেন তিনি ১৭-১৮ বছর ধরে হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। হামলার কথাও স্বীকার করেন তিনি। তার স্বীকারোক্তির ভিডিওচিত্র আমার কাছে আছে।’

আসিক বাহিনীর ‘অপকর্মের’ ফিরিস্তি তুলে ধরে শাহীনুর রহমান বাবুল বলেন, ‘গত ৪ জানুয়ারি সৌদিপ্রবাসী আরজ আলীর ভাতিজা জুয়েল আহমদের ৫টি গরু জোরপূর্বক নিয়ে যায় আসিক বাহিনী। এ ঘটনায় জুয়েল বাদী হয়ে আসিকসহ ১৩ জনের নামোল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। ছাতক থানার এসআই আনোয়ার হোসেন আসিকের গোয়ালঘর থেকে ২টি গরু উদ্ধার করলেও বাকি তিনটির হদিস মিলেনি। ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আবারও আসিক বাহিনীর হামলার শিকার হয় আমার ভাই ছালেহ আহমদ ও আরজ আলীর স্বজনরা। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে মামলা করি। আসিকের পূর্বপুরুষের হাতে গ্রামের আফতাব মিয়া ও বটই মিয়া খুন হয়েছিলেন। আসিক বাহিনীর অত্যাচারে আরজ আলীসহ অনেকেই আজ গ্রাম ছাড়া।’

শাহীনুর রহমান বাবুল লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, ‘জামুরাইল গ্রামের কবরস্থান একাংশ দখল করে মাটি কেটে নিয়েছেন আসিক। অবশিষ্ট অংশে মৃত কোনো ব্যক্তিকে কবর দিতে হলে আসিক বাহিনীর অনুমতি লাগে। গত ৫ মে আরজ আলীর বোন রহিমার উপর আসিক বাহিনী হামলা চালায়। এসময় তাদের চিৎকার গ্রামের সালিশী ব্যক্তিত্ব মাস্টার আব্দুল গফ্ফার এগিয়ে এলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তার উপরও হামলা চালায় আসিক বাহিনী। তাদের হামলায় আরো ৭ জন আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করি (নং-০৮)। মামলার এফআইআরকৃত আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।’

‘২০০৩ সালে আসিকদের মাত্র ২০ শতক জমি ছিল। বর্তমানে তারা বিশাল বাড়ি, গাড়িসহ সম্পদের পাহাড় গড়েছে’ উল্লেখ করে শাহীনুর রহমান বাবুল বলেন, ‘আসিক বাহিনীর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র‌্যাব-৯ সুনামগঞ্জের কমান্ডারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এসব অভিযোগের তদন্ত চলছে। আসিক আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। তাদের অব্যাহত হুমকিতে আমরা প্রাণনাশের আশঙ্কায় ভুগছি। আমাদের নিরাপত্তার প্রয়োজন। আসিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দুদক, পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে সৌদিপ্রবাসী আরজ আলীর ভাই আফরোজ আলী, আরজ আলীর ভাতিজা ফরিদ আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৫ মে ২০১৮/সিজেপ্রে/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন