আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সুনামগঞ্জে বেশিরভাগ স্কুলেই খোলা হয় না কম্পিউটার ল্যাব!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-২২ ০০:১৪:১২

সিলেট :: কক্ষের সামনে লেখা কম্পিউটার কক্ষ, ভেতরে কোনো কম্পিউটার নেই। কিছু অব্যবহূত মালপত্র ও পুরাতন বই রাখা আছে। কম্পিউটারের ব্যবহারিক ক্লাস কোথায় হয় নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে তারা অবাক হয়ে তাকাল, যেন এমন শব্দের সঙ্গে পরিচিত নেই তাদের। সুনামগঞ্জ শহরতলির ইয়াকুব উল্লাহ্‌ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবের এমন করুণ দশা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিল্লাল আহমদ বলেন, 'কম্পিউটার ল্যাবের ৫টি ডেস্কটপ ও ১টি ল্যাপটপ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা আছে। এগুলো বিদ্যালয়ে দেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই অকেজো। মেরামত করার চেষ্টা করেছি, হয়নি। কম্পিউটার ব্যবহারিক ক্লাস বিদ্যালয়ে হয় না।' বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেবল ইয়াকুব উল্লাহ্‌ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় নয়, ২০১০ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এবং পরবর্তীতে আইসিটি অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জেলার ১১টি উপজেলার বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে করা অনেক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ল্যাবেরই এমন করুণ অবস্থ্থা। প্রত্যন্ত এলাকার বেশিরভাগ স্কুলের কম্পিউটার ল্যাবের দরজাই খোলা হয় না।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'এক বছর আগে দোয়ারাবাজারের টেংরাটিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। কম্পিউটার ল্যাব দেখতে চাইলে দীর্ঘসময় ধরে খুঁজে তালার চাবি বের করা হলো, খুলে দেখলাম ল্যাপটপ নেই। এক শিক্ষক বললেন, প্রধান শিক্ষকের ছেলে ল্যাপটপ ঢাকায় নিয়ে গেছে। পরে এই বিষয়ে শোকজ করা হয়।'

শহরতলির মঙ্গলকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, 'বিদ্যুতের ভোগান্তি ল্যাব চালাতে প্রধান অন্তরায়, ইন্টারনেট সংযোগ পেতেও ভোগান্তি আছে। এ ছাড়া কম্পিউটার ল্যাবে পর্যাপ্ত ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ না থাকায়ও সমস্যা হয়। যেমন একটি বিদ্যালয়ে ১২ থেকে ১৭টি কম্পিউটার আছে। শিক্ষার্থী আছে ১০০ থেকে ২০০ জন। একসঙ্গে এসব শিক্ষার্থীর ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়া কষ্টকর হয়।'

অবশ্য সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক শওকত আলী আহমেদ বলেন, সদিচ্ছা থাকলে সীমিত সামর্থ্য দিয়ে ভালো করা যায়। আমাদের বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব সবসময় সচল থাকে। আমরা প্রতি ক্লাসের শিক্ষার্থীকে গ্রুপ করে একেকদিন একেক গ্রুপকে ব্যবহারিক ক্লাসে নিয়ে আসি এবং শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারভীতি দূর করা থেকে শুরু করে প্রাথমিক জ্ঞান এবং সহজসাধ্য অনেক প্রোগ্রামই শিখিয়ে দিচ্ছি। বিদ্যালয়ের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের সব ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ সচল এবং আপডেট রাখা হয় সবসময়।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের সহকারী প্রোগ্রামার নিজাম উদ্দিন বলেন, 'তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর থেকে সুনামগঞ্জের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৪৭টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে ২০১৭ সালে প্রথম ধাপে ১৭টি করে ল্যাপটপ, দ্বিতীয় ধাপে ১টি ডেস্কটপ ও ৪টি ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, আইসিটি অধিদপ্তর থেকে শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও আলাদা আলাদা কম্পিউটার ল্যাব করা হয়েছে। এগুলোর একত্রিত হিসাব না থাকলেও আনুমানিক সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় ১০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। এর মধ্যে কতগুলো সচল বা সক্রিয় সে হিসাব নেই।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সবক'টি স্কুলের কম্পিউটার ল্যাব চালু রাখার জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। ক্লাস্টার করে করে দায়িত্বশীলরা এখন বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২ মে ২০১৮/ডেস্ক/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন