আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বড়লেখায় চড়ের প্রতিশোধ নিতেই গাড়ি চালকই খুন করে স্কুলছাত্র হাসানকে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-২৪ ২০:২৯:৩৯

বড়লেখা প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র আব্দুল্লাহ হাসান (১৫) হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

 হাসান হত্যার ঘটনায় জড়িত তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক এরশাদ মিয়া বুধবার বড়লেখা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. হাসান জামানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

চড়ের প্রতিশোধ নিতে সে হাসানকে হত্যা করেছে বলে আদালতে জানিয়েছে। গাড়ি চালক এরশাদ মিয়া ভোলা জেলার শশীভূষণ থানার চরমায়া গ্রামের কবির মিয়ার ছেলে। সে হাসানের বাবার ব্যক্তিগত কার চালক ছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকান্ডের প্রায় তিন মাস আগে হাসান তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক এরশাদকে চড় মারে। গ্যারেজে গাড়ি রাখতে গিয়ে কিশোর হাসানের শরীরে গাড়ি লাগিয়ে দেয় এরশাদ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাসান এরশাদকে চড় মারে ও গালিগালাজ করে। পরে অবশ্য এ ঘটনায় হাসান গাড়ি চালকের নিকট কয়েকবার ক্ষমাও চেয়েছিল। কিন্তু পাষন্ড এরশাদ মিয়া তাকে ক্ষমা করেনি। ঘটনার প্রায় তিন মাস পর সুযোগ বুঝে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে এ অপমানের প্রতিশোধ নেয়। অপমান বোধ থেকেই সে হাসানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। জরুরী কথা বলবে বলে হাসানকে সে নির্জন টিলায় নিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

এ হত্যা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইতে) স্থানান্তরের প্রায় তিন মাসের মাথায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেন।

তিনি বলেন, ‘স্কুলে দিয়ে আসার সময় হাসান এরশাদকে চড় মারে ও গালি গালাজ করে। এতে এরশাদের মনে ক্ষোভ জন্মে। এ থেকেই সে ঘটনাটি ঘটিয়েছিল বলে স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে। সে (এরশাদ) ঠান্ডা মাথায় পূর্বপরিকল্পনা মতে এ হত্যাকান্ড ঘটালেও থেকেছিল সন্দেহের ঊর্ধ্বে। তার (এরশাদের) তিনটি কর্মকান্ডের উপর ভিত্তি করে আমরা তদন্ত করি। এর মধ্যে সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আত্মগোপন করে। এতে সন্দেহ আরো বেড়ে ওঠে। এসব কারণে থাকে আটকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শনিবার (১৯ মে) থাকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু সে ৩ দিনের মধ্যে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তি প্রদান করে।’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জানুয়ারি রাতে আব্দুল্লাহ হাসান বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়। সে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুর রহিমের ছেলে এবং সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মনির আহমদ একাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্র। ছেলে নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে ২৩ জানুয়ারী দেশে ফিরেন আব্দুর রহিম। নিখোঁজের ১০ দিন পর ২৮ জানুয়ারী রাতে মোহাম্মদনগর এলাকার একটি নির্জন টিলার ঢালু স্থানে আব্দুল্লাহ হাসানের খন্ডিত পচা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি নিহত আব্দুল্লাহ হাসানের বাবা প্রবাসী আব্দুর রহিম ৩ জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। পরদিন পুলিশ আব্দুর নূর বলাই (৫০), তার ভাই বদরুল ইসলাম এবং বাদির ভাতিজা তারেক আহমদকে (২২) গ্রেফতার করে। হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ আসামীদের ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়।

এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা বড়লেখা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আসামীদের রিমান্ড শেষে স্কুলছাত্র হাসান হত্যাকান্ডের ব্যাপারে তাদের নিকট থেকে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। এর পরবর্তীতে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইতে) স্থানান্তর হয়।’


সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৪ মে ২০১৮/এজেএল/এসডি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন