Sylhet View 24 PRINT

অবহেলিত হাকালুকি হাওর বদলে দেওয়া মুজিব চৌধুরী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-২৭ ২৩:২৩:১৩

ফরিদ উদ্দিন, ফেঞ্চুগঞ্জ প্রতিনিধি :: সিলেটের হাকালুকি হাওর এক সময় শুধু মাছ ধরার জায়গা ছিল। এশিয়ার বৃহৎ এ হাওরে বিনোদনের  ব্যবস্থা ছিল না। অতীতে ছোট ছোট নৌকায় হাওরে ঘুরাফেরা করে আনন্দ উপভোগ করতেন লোকজন। কিন্তু নৌকডুবি সহ অন্যান্য নিরাপত্তাজনিত কারনে এসব ছোট নৌকায় ভ্রমন করেন না অনেকেই। কিন্তু বিশাল হাওরের উপভোগ থেকে মানুষ কি বঞ্চিত হবেন? এমন চিন্তা থেকে হাকালুকি হাওরকে পর্যটন এলাকায় বদলে দিতে কাজ শুরু করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মুজিবুর রব চৌধুরী।

সিলেটভিউকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি জানান, কয়েক বছর আগে তিনি হাকালুকি হাওরে অবসর যাপন করছিলেন। সে সময় উত্তাল হাওরে একটি নৌকা ডুবে যায়। তিনি ও তার সঙ্গীরা সাতরে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। সেই থেকে তিনি চিন্তা করেন হাওরে নিরাপদ ভ্রমন ব্যবস্থা করার। যেই ভাবা সেই কাজ।

তার উদ্যোগে একে একে হাকালুকি হাওরে সৌন্দর্য বাড়াতে থাকে প্রমোদতরী হাওর বিলাস-১, হাওর বিলাস২, কয়েকটি স্পিড বোট, জেটস্কি, স্কেডিং বোট,। বদলে যেতে থাকে অবহেলিত হাকালুকি। বাড়তে থাকে পর্যটক। দিন রাত পর্যটকদের উল্লাসে ব্যস্ত হাকালুকি সাদা ফেনায় ডেউ তুলে। থাকা খাওয়ার সুবিধা শীতাতপ সুবিধা সহ এসব প্রমোদতরী বদলে দেয় সাদামাটা হাকালুকি হাওর।

আস্তে আস্তে হাকালুকি হাওর নিরাপদ ভ্রমন এলাকা হয়ে উঠে। দেশের ভ্রমন পিপাসুরা নাম দেন "মিনি কক্সবাজার"। অবেহেলিত হাকালুকি হাওরকে মিনি কক্সবাজারের খ্যাতি এনে দেওয়া স্বপ্নবাজ মুজিবুর রব চৌধুরীর উদ্যোগে বিশাল বিনিয়োগ করে এলাকাতে খ্যাতি এনে দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান করে দিয়েছে অনেক পরিবারের।

তার পর্যটন নৌযানের সারেং মাঝি মাল্লারা বলেন, উনি আমাদের হাসন রাজা শিল্পপতি মুজিবুর রব চৌধুরী হাওরের প্রেমে এলাকাকে গড়ে তুলেছেন বিলাসে।। তার উদ্যোগের কারনে আমরা ঘুরে বেড়াই আবার বেতনে সংসার চলে।

কিন্তু অথৈ হাওরে নৌযানে ভ্রমনে নিরাপত্তার প্রশ্ন আসে। এ ব্যাপারে মুজিবুর রব চৌধুরী জানান, প্রত্যেক জাহাজ বোটে আসনের থেকে বেশি লাইফ জ্যাকেট আছে সাথে আছে সাপোর্ট বোট। সরেজমিনে দেখা যায় দুতলা বিশিষ্ট প্রমোদতরী ও অন্যান্য বোট চলাচলের সময় উদ্ধারকারী হিসাবে সাপোর্ট বোট নিয়ে তিনি নিজের আশপাশে থাকেন। তিনি জানান, হাওর বিলাস-১, নিজেই উদ্ধার জাহাজের কাজ করতে পারে।" ওয়াটার প্রুফ এ প্রমোদতরী উদ্ধার যন্ত্র সম্বিলিত। দেখা যায় এটি এমন ভাবে তৈরি করা যে "ডেক প্রুফ" ডিজাইনের কারনে এটি উলটে বা ডুবে যাবে না।

এ উদ্ধার যন্ত্র চালাতে নিয়োজিত আছেন প্রশিক্ষিত ৬ জন উদ্ধারকারী। তারা শুধু ব্যবসা নয় সেবা চিন্তায় হাওরে অন্যান আপদকালীন সময়ে বিনামূল্যে উদ্ধার কাজ করেন। মুজিবুর রব চৌধুরী বলেন, বিপদগ্রস্তদের উদ্ধারকাজে সাহায্য করি ইবাদত হিসাবে এখানে ব্যবসা দেখি না।

অন্য দিকে দেখা যায়, পর্যটক এলাকা সুনাম অর্জন করে এ মিনি কক্সবাজার ঘিরে উঠেছে দোকান পসরা।
পর্যটক ভিত্তিক এসব ব্যবসা করে চলছে হাওর পারের অসংখ্য পরিবার। হাওরে শুধু ব্যবসা নয় গরীবের শখ পুরন করেন মুজিবুর রব চৌধুরী। হাওরে বেড়াতে আসা নিম্ন বিত্তদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে ভ্রমন করান তিনি। তিনি বলেন, অনেক গরীব লোক আসেন প্রমোদতরী দেখে তাদের শখ হয় কিন্তু সাধ্যে হয় না। এমন লোকদের বিনা খরছে ভ্রমনের সুযোগ করে দেন তিনি।

এই মিনি কক্সবাজার খ্যাত হাকালুকি জিরো পয়েন্টে পর্যটকদের থাকার জন্য আধুনিক আবাসিক ভবন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন হাওরের হাসন রাজা খ্যাত মুজিবুর রব চৌধুরী।

যে ভাবে আসবে-
সিলেট শহর থেকে সড়ক ও রেল পথে ফেঞ্চুগঞ্জ এসে মাইজগাও রেল স্টেশন বা ফেরীঘাট বাস স্টেন্ড থেকে সিএনজি অটোরিকশায় যেতে পারেন ফেঞ্চুগঞ্জ ঘিলাছড়ার হাকালুকি হাওর জিরো পয়েন্টে। ব্যক্তিগত বা রিজার্ভ৫৮ গাড়ি হলে সিলেট শহর থেকে প্রায় ১ ঘন্টার দুরত্ব মাত্র। সদলবলে রাত্রি যাপন করতে পারেন প্রমোদতরী তে। সে ক্ষেত্রে খাবারের অর্ডার আগেই জানিয়ে দিতে হবে বা নিজের ব্যস্থায় রান্না করতে পারবেন। জাহাজের সুপারিস ডেকে করতে পারেন গানের আয়োজন। ভোরে পাবেন নানা জাতের ছোট বড় তাজা মাছ। কিনে নিতে পারেন বাসার জন্য। ঘিলাছড়ার বিখ্যাত লিচু কাঠাল তালিকায় রাখতে ভুলবেন না।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৭ মে ২০১৮/এফইউ/এমকে-এম

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.