আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৮২ লাখ টাকা নিয়ে উধাও সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-২৮ ১২:৫০:১১

ছাতক প্রতিনিধি:: সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার হুমায়ুন কবির বাবলু নামের এক বালু-পাথর ব্যবসায়ী জমির ভুয়া দলিল-পত্র দিয়ে ৮২ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ উত্তোলন করে উধাও হয়েছেন।

তিনি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের তরঙ্গিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তফাজ্জল হোসেন খোকন মাস্টারের ছেলে।

ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজসে তিনি এতো টাকা ঋণ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেছেন, ঋণ গ্রহিতা প্রকৃত কাগজ দিয়েই ব্যাংক ঋণ উত্তোলন করেছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ছাতারকোনা মৌজার ১৬৭৬ নম্বর দাগের ৭১ শতাংশ বাড়ি রকম ভূমির রেকর্ডভুক্ত মালিক প্যারী মোহন দাসের ছেলে পিন্টু দাসকে বিক্রেতা সাজিয়ে নিজে ক্রেতা সেজে বিশ্বম্ভরপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল (দলির নম্বর ৭১১/২০১৬) করেন হুমায়ুন কবির বাবলু।

অথচ প্যারীমোহন দাস ১৯৬৮ ইংরেজিতেই পুত্র পিন্টু দাসসহ পরিবার পরিজন নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ভারতে চলে গেছেন।

রেজিস্ট্রিকালে ৭১১ নম্বর দলিলে পিন্টু দাস হিসেবে যার ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে তিনি পিন্টু দাস নয় বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

এই জাল দলিল দিয়েই হুমায়ুন কবির বাবলু মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সুনামগঞ্জ শাখা থেকে ৮২ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ উত্তোলন করেন। জাল দলিলের এই বিষয়টি মেরুয়াখলার বাসিন্দা রইছ মিয়া লিখিতভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদেরও এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, হুমায়ুন কবির বাবলু মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সুনামগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপকের যোগসাজসে ভুয়া নামজারী, খতিয়ানের পর্চা এবং তার মা আমেনা বেগমের নামে ভূয়া বালু পাথরের ব্যবসা দেখিয়ে ৮২ লাখ টাকা উত্তোলন করে প্রায় এক মাস হয় সাউথ আফ্রিকা চলে গেছেন।

হুমায়ুন কবির বাবলুর বাবা সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তফাজ্জল হোসেন খোকন মাস্টার বলেন, ‘আমার ছেলেদেরকে আমি অনেক আগেই জমি-জমা ভাগবাটোয়ারা করে পৃথক করে দিয়েছি। আমার ছেলে হুমায়ুন কবির বাবলু কীভাবে কত টাকা ব্যাংক ঋণ উত্তোলন করেছে আমি জানি না। আমার নামের ১৬ শতাংশ জমি সে ব্যাংককে বন্ধ দেবার জন্য আমাকে অনুরোধ জানানোয় আমি দিয়েছিলাম। শুনেছি এক একর সাড়ে ৩৩ শতাংশ জমি ব্যাংকে বন্ধক দিয়েছে সে। আমার সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তারা যোগাযোগ করেছিলেন, আমি বলেছি, আমি এর দায় নেব না। আমি তাদেরকে বলেছি, আপনার কী জমির বিপরীতে, কত টাকা দিচ্ছেন যাচাই করে দেওয়া উচিৎ ছিল।’

এদিকে স্থানীয়দের মতে ছাতার কোনা মৌজায় ১ একর সাড়ে ৩৩ শতাংশ জমির মূল্য ৮২ লাখ টাকা হতে পারে না। এই এলাকায় প্রতি শতাংশ বাড়ি রকমের নিষ্কণ্ঠক জমি বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দরে। সেই হিসাবে বন্ধকি জমির মূল্য হতে পারে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা, এমন কম মূল্যের জমি জমি বন্ধক রেখে প্রকৃত মূল্যের কয়েক গুণ বেশি টাকা ঋণ দেয়ার বিষয়টিকে কেউ স্বাভাবিক হিসাবে গ্রহণ করছেন না।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সুনামগঞ্জ শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক জাহেদ হোসেন বলেন,‘প্রকৃত জমি দেখেই ব্যাংক বন্ধক নিয়ে ঋণ দিয়েছে। আমাকে অবৈধ সুবিধা দেবার বিষয়টি মনগড়া কথা। ৮২ লাখ টাকা ঋণ দেবার উপযুক্ত ছিলেন হুমায়ুন কবির বাবলু। ব্যাংক যথাযথ প্রক্রিয়ায় ঋণ দিয়েছে।’

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপক বদরুল ইসলাম বলেন,‘এই ঋণ নিয়ে শীঘ্রই অর্থ ঋণ আদালতে মামলা হবে। এই সপ্তাহেই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হবে। ঋণের বিপরীতে দেওয়া কাগজপত্র আপাতত সঠিক মনে করছি আমরা।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৮ মে ২০১৮/এমএ/আআ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন