আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে সাড়ে ৫শ’ কোটিতে ক্যাবল যাচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ডে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৬-১৩ ০০:০৫:২১

রফিকুল ইসলাম কামাল :: সিলেট নগরীর অন্যতম ‘জঞ্জাল’র হচ্ছে তার (ক্যাবল)। নগরীর সর্বত্র এলোমেলোভাবে, বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল। কোথাও কোথাও এসব ক্যাবল ঝুলছে ভয়ঙ্করভাবে। যে কোনো সময় এসব ক্যাবলের মাধ্যমে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। নগরীর এই জঞ্জালকে আন্ডারগ্রাউন্ডে (পাতাল বা মাটির নিচে) পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে পাঁচ শ’ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের পরপরই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের আওতায় সিলেট নগরীর বন্দরবাজারস্থ সার্কিট হাউজ থেকে চৌহাট্টা হয়ে আম্বরখানা পর্যন্ত, চৌহাট্টা থেকে পিডিবি মসজিদ পর্যন্ত, চৌহাট্টা থেকে কুমারপাড়া হয়ে নাইওরপুল পয়েন্ট পর্যন্ত এবং কুমারপাড়া পয়েন্ট থেকে শাহী ঈদগাহ আবহাওয়া অফিস পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে থাকা বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল মাটির নিচে নেয়া হবে।

সিলেট নগরীতে যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই চোখে পড়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল ঝুলে আছে। কোনটা বিদ্যুতের, কোনটা ইন্টারনেটের আর কোনটা টেলিফোনের ক্যাবল, তা বুঝার সাধ্য কার! বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে, বাসাবাড়ি কিংবা মার্কেটের পিলারের সাথে, এমনকি বাঁশের সাথে ঝুলিয়ে এখানে-সেখানে টানা হয়েছে ক্যাবল। এসব ক্যাবল একদিকে নগরীর সৌন্দর্যকে ম্লান করছে, অন্যদিকে দুর্ঘটনার শঙ্কাকে বাড়িয়ে তুলেছে।

শুধু তাই নয়, ওভারহেড (মাটির উপরস্থ) বিদ্যুতের ক্যাবলে সিস্টেম লস বেশি থাকে; ঝড়-তুফান কিংবা বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্থও হয় বেশি। এছাড়া নগরীতে বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল (বিদ্যুৎ, ডিশ, ইন্টারনেট, টেলিফোন) একসাথে ঝুলে থাকায় একটি মেরামত করতে গিয়ে অন্যটি কেটে ফেলার ঘটনাও ঘটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন বছর আগে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার থেকে জিন্দাবাজার হয়ে চৌহাট্টা পর্যন্ত বৈদ্যুতিক তার মাটির নিচে নিতে উদ্যোগ নিয়েছিল সিটি করপোরেশন। ওই সময় সিসিকের প্রকল্পে পিডিবিও সায় দিয়েছিল। কিন্তু সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কারান্তরীণ হওয়ার পর থমকে যায় এই প্রকল্পটি। গেল বছরের শেষদিকে এই প্রকল্পটি পুনরোজ্জীবিত করেন মেয়র আরিফ। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয় পিডিবিতে।

বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সিলেটভিউ২৪ডটকম-এ ‘‘পাতালে যাচ্ছে সিলেট নগরীর ‘জঞ্জাল’’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল।

সূত্র জানায়, পিডিবিতে নতুন করে প্রস্তাব যাওয়ার পর বিষয়টির বিভিন্ন দিক বিবেচনা করতে সার্ভে (জরিপ) করা হয়।

ওই সময় (গেল ডিসেম্বরে) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস সিলেটভিউকে বলেছিলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবনার পর বন্দরবাজার থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত পাতাল বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের বিষয়ে আমরা সার্ভে করি। ঢাকা থেকে পিডিবির লোকজন আসে, সিলেট থেকে ছিলাম আমি। সার্ভেতে পাতাল বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের সুবিধা-অসুবিধাগুলো আমরা চিহ্নিত করি। পরবর্তীতে সেগুলো বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।’

সূত্র বলছে, প্রথমে বন্দরবাজার থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত আন্ডাগ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তা আরো কয়েকটি এলাকায় বিস্তৃত করা হয়।

মঙ্গলবার (১২ জুন) সিলেট সিটি করপোরেশনের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলের বিষয়ে কথা বলেন। মেয়র বলেন, ‘‘আমার অনেক দিনের স্বপ্ন এখন বাস্তবায়ন হতে চলেছে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক এলাকার ক্যাবলই আন্ডারগ্রাউন্ডে যাবে। সাড়ে পাঁচ শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ ঈদের পর শুরু করবে পিডিবি।’’

এদিকে সংশ্লিষ্টদের মতে, বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল মাটির নিচে নিয়ে যেতে মাস্টারপ্ল্যান প্রয়োজন। এই মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে গ্যাস ও পানির লাইনের সাথে সমন্বয় করে বিদ্যুৎ, ডিশ, টেলিফোন প্রভৃতির ক্যাবল মাটির নিচে স্থাপন করতে হবে। অন্যথায় পুরো প্রকল্পটি লেজেগোবরে অবস্থা হতে পারে।

এদিকে, সিলেট ক্যাবল সিস্টেমস (প্রা.) লিমিটেড নিজ উদ্যোগে তাদের ক্যাবল মাটির নিচে নিয়ে যেতে সিটি করপোরেশনের সাথে অনুমতি প্রদান সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক চুক্তি করেছে। মঙ্গলবার এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ জুন ২০১৮/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন