আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

রাজনগরে মনু নদীর বাঁধ ভেঙ্গে বন্যা, পানিবন্দি ৪০ হাজার মানুষ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৬-১৩ ২১:৪১:২৫

রাজনগর প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের মনু নদী তীরবর্তী কয়েকটি এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। গত ১২ জুন দিবাগত ভোর রাতে কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর, তারাপাশা সহ বেশ কয়েকটি স্থানে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে  প্রায় ২০টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পরেছেন প্রায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। বিরামহীন বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে মনু নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে আরো ১৫/২০ টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছেন নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজন।

বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মনু নদীর উজানে ভারতের ধর্মনগর, কৈলাশহর সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গত কয়েকদিনের বৃষ্টির পানি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের রাজনগরে মনু নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর এলাকার মনু নদীর বাঁধ গত ১২ জুন মঙ্গবার দিবাগত ভোররাতে ভেঙ্গে যায়। এতে রাজনগর উপজেলার ভোলানগর, কোনাগাঁও, দস্তিদারের চক, ইসলামপুর জালালপুর, তেঘরি, করাইয়া, মৌলভীরচক, আদমপুর, কামারচাক, খাসপ্রেমনগর, বিশালী, মিঠিপুর সহ প্রায় ২০টি গ্রামের ৪০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও পানি বৃদ্ধির কারণে কামারচাক ইউনিয়নের চাটিকোনাগাঁও, মুর্তিকোনা, মশাজান, প্রেমনগর, মেলাগড়, শান্তকুল, পঞ্চানন্দপুর, একাসন্তোষ, হাটিকরাইয়া, এবং টেংরা ইউনিয়নের হরিপাশা, আকুয়া, কোনাগাঁও, টগরপুর, ভাঙ্গারহাটসহ নতুন আরো ১৫/২০ টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছেন দুর্গত এলাকার মানুষ। প্লাবিত এসব এলাকায় খাবার পানি, গোখাদ্য সহ নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় দুর্গত এলাকার লোকজন মনু প্রতিরক্ষা বাঁধের উচু জায়গায় আবার অনেকে পার্শ্ববর্তী আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে  মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ১০টি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কে বারবার তা মেরামতের আবেদন জানালে পাউবো কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় কংক্রিটের বøগের পরিবর্তে  বাঁশ ও মাঠি ভর্তি বালির বস্তা দিয়ে দায়সারা গোচের কাজ সম্পন্ন করলেও ঐ একই স্থানে আবার ভাঙ্গন দেখা দেয়। এতে বিগত বছরের মত এবারও রাজনগরের কামারচাক ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষকে দুর্গতি পোহাতে হচ্ছে।

ভোলানগর গ্রামের মোঃ ফারুক মিয়া (৫০) জানান, গত মঙ্গরবার দিবাগত ভোর রাতে ভোলানগর এলাকায় আলম তরফদারের বাড়ির উপর দিয়ে মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলে এলাকার লোকজন বাঁশ ও মাটির বস্তা ফেলে ভাঁঙ্গন ঠেকাতে পারেননি। ভোর রাতে সদ্য নির্মাণকৃত প্রায় ৫’শ ফুট দীর্ঘ বাঁধ ভেঙ্গে গেলে পানি প্রবল বেগে প্রবেশ করে কামারচাক ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামকে প্লাবিত করে। তিনিসহ দুর্গত এলাকার সহস্রাধিক পরিবারের লোকজন বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ও আশপাশের এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে তিনি জানান।

কামারচাক ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার কাজ করতে এলে এলাকার মানুষ সহযোগিতা করেন নি। বাঁধ প্রশস্ত করতে বাঁেধের পাশ্ববর্তী বাড়িঘর সড়াতে এলাকার মানুষকে বারবার অনুরোধ করলেও তারা তা সড়াননি। ফলে ঠিকাদার এই অংশে কাজ না করেই চলে গেছেন। এখন ঐ স্থান দিয়েই ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করেছে।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পাউবো’র এস.ও মোঃ কিবরিয়া বলেন, কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর এলাকার মনুনদীর সংস্কারকৃত কাজ সম্পর্কে সিডিউল না দেখে কিছু বলা যাবে না।

রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী আক্তার বলেন, দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। দুর্গতদের জন্য দ্রুত যথাযথ সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ জুন ২০১৮/এআরএস/এমকে-এম

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন