আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

আগামীকাল বিশ্ব রক্তদাতা দিবস, সফলতা কামনায় 'সন্ধানী'

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৬-১৩ ২২:৩৮:৫৮

সিলেট:: প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ১৪জুন সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হতে যাচ্ছে “বিশ্ব রক্তদাতা দিবস”। স্বেচ্ছায় রক্তদানকে উদ্ভুদ্ধ করণ এবং রক্ত দাতাদের কে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের এক অন্যতম দিন এটি। দিবসটির এবারের স্লোগান, “Be there for someone else. Give blood. Share life.”

রক্তের গ্রুপ না জানা থাকার কারনে পূর্বে সরাসরি রক্তদানে নানান জটিলতা দেখা দিত, মৃত্যু হতো সুস্থতা প্রত্যাশী মানুষটির। প্রায় দেড়শো বছরের মতো রক্তদানের চেষ্টা বন্ধ রাখা হয়। এ সমস্যার সমাধান হয় ১৯০১ সালে বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারের যুগান্তকারী ABO Blood Grouping system আবিস্কারের ফলে।তখন ধীরে ধীরে আবারো শুরু হয় রক্তদানের সাহায্য মানুষের জীবন রক্ষার একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। প্রথিতযশা এই বিজ্ঞানী জন্মগ্রহন করেন ১৮৬৮ সালের ১৪ জুন। তার আবিস্কারকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৪ সালে তার জন্মদিন ১৪ই জুনকে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিবছরই ঘটা করে এই দিনটি পালিত হচ্ছে, রক্তদানকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হচ্ছে পুরো দিনব্যাপী নানারকমের কর্মশালা।

রক্তদানের কারণে একজন রক্তদাতাও নানাভাবে উপকৃত হয়ে থাকে। রক্তের মাঝে লৌহজাতীয় পদার্থের পরিমাণ যদি বেড়ে যায়, এর দরুণ হৃৎপিন্ডের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে; এমনকি হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। নিয়মিত রক্তদানের ফলে, আপনার প্রদত্ত রক্তের সাথে কিছু পরিমাণ লৌহও বেরিয়ে আপনার শরীরে এর পরিমাণ কমে আসছে। পরিসংখ্যান বলে যে, রক্তদানে যে পরিমাণ লৌহ কমে যায়, তাতে করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে আসে ৮৮ শতাংশ। এছাড়াও আপনার মস্তিষ্ক মনে রাখে যে, আপনার শরীরে রক্ত কম আছে, সেই অনুযায়ী দ্রুত রক্ত তৈরি করে আগের মতো পরিপূর্ণ করতে শুরু করে। এক ব্যাগ রক্তদানের মধ্য দিয়ে ৬৫০ ক্যালোরি ক্ষয় হয় আপনার, এটিও আপনার জন্য শারীরিকভাবে কল্যাণকর। রক্তে যেসকল বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয়, সেগুলো শরীর থেকে বেরোতে কিডনীতে গিয়ে জমা হয়, পরবর্তীতে মূত্রের সাথে বেরিয়ে যায়। নিয়মিত রক্তদানের ফলে সবসময় বর্জ্য পদার্থ পরিমাণে কম থাকে, যার দরুণ কিডনীর উপর চাপও কম পড়ে।

রক্তদানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংগঠনগুলোর কাজই হলো মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রয়োজন অনুসারে একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে রক্তদানে উৎসাহিত করে তোলা। ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিটি দেশে রক্তের চাহিদা স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা ৯৯-১০০% পূরণ হবে, এ লক্ষ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। আর আমাদের দেশে অগ্রগামী ভুমিকা পালন করছে ‘সন্ধানী’। ঢাকাস্থ নীলক্ষেত এ স্থাপিত হয়েছে ‘‘সন্ধানী কেন্দ্রীয় রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র’’। এদেশে পঞ্চাশ কিংবা একশো বছর আগে রক্তদানের কথা কল্পনাও করা যেতো না হয়তো। নির্ভর করতে হতো পরিবারের সদস্যদের উপর। আজও সিংহভাগ নির্ভরতা থাকে পরিবারের উপর। তবুও সন্ধানীর পাশাপাশি অন্যান্য সংগঠনের নিরলস প্রয়াসে এই একবিংশ শতাব্দীতে যেটুকু অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে, আরো পঞ্চাশ-একশো বছর সন্ধানী যদি আপন গতিতে শ্রম দিয়ে যেতে পারে, রক্তের চাহিদা আরো অনেকাংশে নিশ্চিত করা সম্ভব। এরই ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা অবশ্যই একটি ভাল দিক। এ সকল কাজের এক গর্বিত অংশীদার সন্ধানী সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ইউনিট। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ৮ তা পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া হেলথ ক্যাম্প, ভাক্সিনেশন, শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন জনসেবামূলক কার্যক্রম তারা পরিচালনা করে থাকে।

সন্ধানীতে রক্তদানের একটি বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। আপনার দানকৃত রক্ত একজন মানুষের শরীরে দেবার পূর্বে বেশ কিছু জীবনের হুমকিস্বরূপ রোগের পরীক্ষা করা হয়। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আপনার দেয়া রক্তে আছে কিনা সেটি দেখা হয়। রোগটি যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় তখন আপনার কাছে এর লক্ষণ প্রকাশ পাবে, এসময়ে চিকিৎসা করে খুব একটা উপকার পাবেন না আপনি। কিন্তু যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইরাসের উপস্থিতি থেকে থাকে, আর সন্ধানীতে রক্তদানে সেটি নিশ্চিত হয়, সন্ধানী কর্তৃপক্ষ নিজ থেকে আপনাকে এ ব্যাপারে দ্রুত অবহিত করবে। ফলে আপনি এর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও নিতে সক্ষম হবেন।

আজকের এই দিনে সকল রক্তদাতা, সন্ধানীতে পর্দার আড়ালে কাজ করে যাওয়া মানুষগুলো, সর্বোপরি রক্তদানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি জন্য রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। হয়তো এমন একদিন আসবে, যেদিন আর রক্তের জন্য মানুষকে অনুরোধ করার প্রয়োজন হবে না, বরং কারো রক্ত প্রয়োজন হলে একজন অপরিচিত মানুষ-ই স্বেচ্ছায় রক্তদান করবে। সেদিন সন্ধানীর কাছে সাহায্য চাইতে আসা কাউকে হয়তো আর ফিরিয়ে দিতে হবে না।

দীর্ঘজীবী হোক বাস্তব জীবনের সেই সকল নায়কেরা যারা নিজের রক্ত দিয়ে অন্যের মুখে হাসি ফোঁটায়, দান করে নতুন জীবন। বেঁচে থাকুক সন্ধানী। সফল হোক ‘বিশ্ব রক্তদাতা দিবস২০১৮’।


@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন