আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

কমলগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, সেনাবাহিনীর তৎপরতা অব্যহত

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৬-১৭ ২১:৩৬:৩৯

জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই নদী ও কুলাউড়ার শরীফপুরে মনু নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে বিভিন্ন সড়ক ও বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি নেমে যেতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। উপজেলার নিম্নাঞ্চল পতনউষার ইউনিয়ন, শরীফপুর ও হাজীপুরে পানিবন্দী মানুষজনদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর বিশেষ তৎপরতা শুরু হয়েছে।

শমশেরনগর-শরীফপুরের চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কের ভেঙ্গে পড়া কালভার্টটি দেবে যাওয়ায় শরীফপুরের লোকজন চলাচলের জন্য সড়ক জনপথ বিভাগ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কমলগঞ্জের-শমশেরনগর, শমশেরনগর-মৌলভীবাজার, শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়ক থেকে পানি নামতে শুরু করছে। ফলে রবিবার সকাল থেকে যানবাহন চলাচল শুরু করে। তবে শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়কের শমশেরনগর বিমানবন্দর এলাকায় সড়কের উপরে ৩ ফুট পরিমাণ পানি থাকায় এ পথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার নিমাঞ্চল শমশেরনগরের সতিঝিরগাঁও, মরাজানের পার, রাধানগর, মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রুপসপুর, বনবিষ্ণপুর ও পতনউষার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বসতবাড়ি থেকে পানি নেমে যেতে শুরু করায় বাড়ি ঘর থেকে পানি নেমে যাওয়ায় পানিবন্দীরা হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন।

শনিবার সন্ধ্যা থেকে সেনাবাহিনীর ২টি দল স্পিডবোট নিয়ে কুলাউড়ার শরীফপুর ও হাজীপুর কমলগঞ্জের পতনউষারে হাওর এলাকাসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে পানিবন্দী মানুষজনদের উদ্ধার করতে শুরু করছে।

মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাংসদ উপাধ্যক্ষ এম এ শহীদ কমলগঞ্জের মুন্সীবাজার ও রহিমপুর ইউনিয়নে এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের সতিঝিরগাঁও, মরাজানের পার, রাধানগরসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ও পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ, ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা বন্যাদুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করছেন। শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়ের আহমদ পানিবন্দী লোকদেরকে ঘরে ঘরে গিয়ে খাবার বিতরন করছেন। এছাড়া ব্যবসায়ী মুহিবুর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দীনসহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকেই পানিবন্ধী গ্রামে গিয়ে ও আশ্রয় কেন্দ্রে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হওয়ায় সঠিকভাবে খাদ্যসামগ্রী পৌছানো যাচ্ছিল না। তবে শনিবার বিকাল থেকে  দুর্গতদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ত্রাণের কোন সমস্যা নেই। প্রশাসনের পাশাপশি ব্যক্তি উদ্যোগে পানিবন্দীদের ও আশ্রয়ে কেন্দ্রে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। কমলগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টি না হলে আরও উন্নতি হবে বলে নির্বাহী কর্মকর্তা জানান।

কুলাউড়ার শরীফুর ইউনিয়নের মনু সেতু সংলগ্ন এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে একটি বড় কালভার্ট দেবে গেলে গত ১৩ জুন থেকে এ ইউনিয়নের মানুষজনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। আবারও এ কালভার্ট পুরাপুরি দেবে যাওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। সড়ক জনপথ বিভাগের সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা ও সেনাবাহিনীর ল্যাফটেনেন্ট কর্নেল শাহাব উদ্দীন ভেঙ্গে পড়া কালভার্ট পরিদর্শন করেন। এখানে একটি বেইলি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেইলি সেতু নির্মাণ করতে ২-১ দিন সময় লাগায় মানুষজনের ও হালকা যান চলাচলে এ কালভার্টের উপর বালির বস্তা ফেলে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করা হচ্ছে।

সড়ক জনপথ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, এখানে একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হবে। এতে সময় লাগবে ২-১ দিন। দেবে যাওয়া কালভার্টে বালির বস্তা ফেলে সড়কের সমান্তরাল করে দিলে পিকআপ, সিএনজি ও মোটরসাইকেল যাতায়াতের মাধ্যমে এখানকার লোকজন হাটবাজারে যেতে পারবে। তিনি আরও বলেন, দ্রুত সময়ে এ কালভার্টের উপর একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করার পাশাপাশি আমতলা বাজার থেকে চাতলাপুর চেকপোস্ট পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার করা হবে। তা হলে দুই দেশে যাতায়াতকারী ভিসাধারী যাত্রীরা আটকা পড়বে না।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৭ জুন ২০১৮/জেএ/পিডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন