Sylhet View 24 PRINT

দলকে বিপর্যয় থেকে বাঁচাতেই প্রার্থী হয়েছি: আসাদ উদ্দিন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৬-২০ ১৯:৫৭:২৭

দিব্য জ্যোতি সী :: সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। কলেজ জীবন থেকে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া এই নেতা পালন করেছেন উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদের দায়িত্ব। ছিলেন সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মদন মোহন কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি, জিএস এবং অন্য পদেও। সরাসরি ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা সৎ ও পরিচ্ছন্ন এই রাজনীতিবীদ এবার চান সিলেট নগরীর দায়িত্ব নিতে।

আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে মেয়র পদে নির্বাচন করার ইচ্ছাপোষণ করেছেন তিনি। এ লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজও করে যাচ্ছেন তিনি। এছাড়া মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারেও শতভাগ আশাবাদি তিনি। সম্প্রতি সিলেটভিউ২৪ডটকম-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের রাজনৈতিক জীবন এবং সিটি নির্বাচন নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন এককালের তুখোড় এই ছাত্রনেতা।

প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে:
প্রায় চারদশক ধরে রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও এরআগে কখনো কোন নির্বাচন করেননি। এবার কেন নির্বাচন করতে চাইছেন এমন প্রশ্নে আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন- সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে প্রার্থী হতে গতবারও দলের একটি আমাকে বলেছিলেন কিন্তু, আমাদের রানিং মেয়র থাকায় আমি প্রার্থী হইনি। এবার প্রার্থী হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে আওয়ামী লীগকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা। আওয়ামী লীগের আগের মেয়র ১৮ বছর চেয়ারে ছিলেন। সেসময় তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন করলেও সেটি নগরবাসীর প্রত্যাশাপূরণে ব্যর্থ হয়। এবার মানুষ পরিবর্তন চাইছে। পরিবর্তন চাইছে দল এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোও।

দলের তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মী আর অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের চাপেই গত তিন-সাড়ে তিন বছর ধরে কাজ চালাচ্ছি। তবে, মানুষের সাথে যোগাযোগ, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে গেলেও আমি প্রার্থী হওয়ার কথা প্রকাশ করেছি একবছর আগে। এরআগে অনেকেই আমাকে প্রার্থীতার কথা ঘোষণা দেওয়ার পরামর্শ দিলেও আমি সেটি করিনি।

নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড ঘুরে, নাগরিকদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে নিজের অবস্থান ও দলের এবং বিপক্ষের প্রার্থীর অবস্থান বুঝেই আমি প্রার্থী হওয়ার ব্যপারে ইচ্ছাপোষণ করেছি।

সিলেট নিয়ে পরিকল্পনা:
সিলেটে উন্নয়নে বর্তমান সরকারের আমলে যে পরিমাণ বরাদ্দ এসেছে তা অতীতে কখনও আসেনি। কিন্তু, কাজগুলো হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। কোন পরিকল্পনা ছাড়া কাজ হয়েছে, যার সেটির সুফল পাননি নগরবাসী। বরং এসব অপরিকল্পিত কাজের জন্য দুর্ভোগ পোহাকে হয়েছে নগরবাসীকে।

সিলেটের উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যানজট। আমার ধারণা এর মুল কারণ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অবৈধ স্ট্যান্ড আর যেখানে সেখান গাড়ি পার্কিং করা। সুযোগ পেলে নগরীতে একটি বহুতল পার্কিং গড়ে তুলব। যাতে করে রাস্তায় কেউ গাড়ি পার্ক না করে।

একসময় এই সিলেটকে মানুষ চিনত সবুজের নগরী হিসেবে। সিলেটে ছিল আরো অনেক কিছু যেগুলো নিয়ে মানুষ গর্ব করত। ছিল সকল নাগরকি সুবিধা। কিন্তু, দিন দিন তা হারাতে বসেছে। সর্পোপরি সিলেটের নগর ভবনে বসতে পারলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব সিলেটের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে।

রাজনৈতিক জীবন:
আসাদ উদ্দিন আহমদের রাজনৈতিক জীবন শুরু ১৯৭৭ সালে কলেজে ভর্তি হয়ে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাঁর। পরের বছর ১৯৭৮ সালে ছাত্রলীগ মনোনিত প্যানেল থেকে খেলাধুলা সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে একই প্যানেল থেকে ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। এর পরের বারই ১৯৮০ সালে ছাত্রলীগের একাংশের প্যানেল থেকে মদন মোহন কলেজ ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচন করেন। এবছর ছাত্রলীগের চুন্নু গ্রুপ থেকে মোস্তাক-জিয়া পরিষদ এবং কাদের গ্রুপ থেকে মিসবাহ-আসাদ পরিষদ নামে দুটি প্যানেল অংশ নেয়। এই নির্বাচনে জিএস পদে বিপুল সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন আসাদ উদ্দিন। আর ১৯৮২ সালের নির্বাচনে তিনি মদন মোহন কলেজ ছাত্রসংসদের সহ সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। এসময় ছাত্রলীগ সমর্থিত প্যানেলটির নাম ছিল আসাদ-নিজাম পরিষদ।

মদন মোহন কলেজ ছাত্রসংসদের নেতৃত্ব দেওয়া ছাড়াও ১৯৮০ সালের শুরুতে কলেজ ছাত্রলীগের সম্মেলনে সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন। তবে, কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া তাজ উদ্দিন খান সেসময় বাকশালে চলে যাওয়ায় এ কমিটি খুব বেশিদিন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেনি। তবে ১৯৮১ সালে তিনি সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সদস্য মনোনিত হন। এরপর ১৯৮৩ সালে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের আরেকটি কমিটি গঠিত হয়। সে কমিটিতে সভাপতি হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি প্রায় নিশ্চিত থাকলেও সিনিয়রদের নির্দেশে তিনি ত্যাহ স্বীকার করেন। তখন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিজাম উদ্দিন। কিন্তু, তখন সংগঠন (জালাল-জাহাঙ্গির কমিটি) তাকে জাতীয় পরিষদ সদস্য করে। সেই সাথে জেলা কমিটির প্রথম সদস্য হিসেবেও স্থান পান তিনি। ১৯৮৬ সালে তিনি সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলাওর। একই সাথে তিনি ছাত্রলীগের সুলতান-রহমান কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্যও মনোনিত হন। পরের বছর সফল সম্মেলনের মাধ্যেমে বিদায় নিয়ে ছাত্ররাজনীতিতে ইতি টানেন তিনি। এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এবং তৎকালীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবং সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান।

ছাত্রলীগের এসব পদে দায়িত্ব পালনকালে ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের একজন নেতা হিসেবে তিনি ১৯ মিথ্যা মামলার আসামী হন এবং পরবর্তীতে সেগুলো থেকে মুক্তি পান।

ছাত্ররাজনীতি শেষ করে প্রায় ৩-৪ বছর পদহীন থেকেই রাজনীতি চালিয়ে যান তিনি। ১৯৯১ সালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি হলে সেই কমিটিতে তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক নির্বাচিত হন আসাদ উদ্দিন আহমদ। এই কমিটির সভাপতি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহিম এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এডভোকেট আবু নসর। প্রায় একযুগ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আসাদ উদ্দিন।

২০০৩ সালে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ গঠন হলে সেই কমিটির ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান এবং ২০১১ সালের নভেম্বরে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এখনো এই পদেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ জুন ২০১৮/ডিজেএস

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.