Sylhet View 24 PRINT

জকিগঞ্জে কমছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৬-২১ ০০:১৩:৩৩

আল হাছিব তাপাদার, জকিগঞ্জ প্রতিনিধি :: জকিগঞ্জে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমতে থাকলেও বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ বাড়ছে। অধিক বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা ঢলের কারনে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো বন্যায় আক্রান্ত হয়। ঘরবাড়ি ও মৌসমুী ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বন্যাক্রান্ত গ্রামগুলোর বাসিন্দারা নিজেদের ঘরে ফিরতে পারছে না। একইসাথে বিশুদ্ধ খাবারের পানির সংকটও রয়েছে।

বিশুদ্ধ পানির অভাবে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত হ্েচ্ছন বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন। গৃহপালিত পশুপাখির খাবারও সংকট রয়েছে।

এদিকে, বন্যার পানিতে রাস্তাঘাটও তলিয়ে গিয়েছিল। এখন পানি নেমে যাওয়ায় পর বেরিয়ে আসছে সড়কের ক্ষত-বিক্ষত চিত্র। এতে করে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। অনেক এলাকায় পানি নেমে গেলেও কাদা ও ভাঙা ব্রিজ, কালভার্ট ও রাস্তার কারণে মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ বেড়েছে। চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে গ্রামঞ্চলের মানুষের। জকিগঞ্জ-সিলেট প্রধান সড়কের অবস্থা আগেই নাজুক ছিল। বন্যার পরে সড়কটির ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

অন্যদিকে, ফিটনেসহীন অবৈধ পরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্যও চরমে। বিশেষ করে বিদ্যুৎচালিত টমটম ও অবৈধ লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশাচালকদের কাছে জিম্মি বন্যাকবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন। বন্যার সুযোগে চালকরা ভাড়া বাড়িয়েছে চরম মাত্রায়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, বিরশ্রী, বারঠাকুরী, কসকনপুর, কাজলসার, বারহাল, মানিকপুর ইউনিয়নের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে এসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। বিভিন্ন ফিশারির কয়েক কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আউশ ক্ষেত ও আমনের চারা, মৌসুমী শাকসবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে কৃষকদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা।

অনেক এলাকার স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের শ্রেণি কক্ষে এখনও পানি জমে আছে। কিছু কিছু এলাকায় পানি কমতে থাকায় বিভিন্ন স্থানে আশ্রিত মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে ঘরবাড়ি বাসযোগ্য না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে তারা। বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ না থাকায় দিনমজুররা বসে আছেন বেকার হয়ে। উজান এলাকায় পানি নেমে গেলেও ভাটি এলাকার গ্রামগুলোর পানি এখনো নামা শেষ হয়নি।

অনেক এলাকায় নলকূপের পানি দূষিত হয়ে পড়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। সিলেট জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন ব্যক্তিগণ বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এই ত্রাণ অপ্রতুল। এ অবস্থায় দুর্ভোগের শেষ নেই বন্যাদুর্গত এলাকায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গত তিনদিন থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় ও ভারতের ঢল না নামায় পানি কমতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতি বহাল থাকলে পানি দ্রুত নেমে যাবে।\\\' তবে উজানে পানি কমতে শুরু করলেও ভাটিতে পানি ধীরগতিতে কমছে।

বন্যাক্রন্তদের দাবি, শুধু ত্রাণ নয়, তাদের দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন প্রয়োজন। যেসব দিনমজুর বেকার হয়ে বসে আছেন, তাদের কাজের সুযোগ করে দেয়ারও দাবি জানান তারা।

সিলেট জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান জানান, সিলেট জেলার বন্যাদুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ২৩১ মেট্রিক টন চাল ও তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলোতে সব ধরনের সরকারি সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ জানান, জকিগঞ্জের বন্যাদুর্গতদের জন্য ৩৭ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। এখনও বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে। অনেক এলাকায় বন্যার পানি থাকায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পানি কমার পর পরই চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের তালিক প্রস্তুত করে সরকারি সহায়তা দেয়া হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২১ জুন ২০১৮/আহাতা/আরআই-কে

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.