Sylhet View 24 PRINT

সোনাই নদীর ভাঙনে রাস্তা বিলীন, দুর্ভোগ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৬-২১ ১১:৫৬:২৫

এ.জে লাভলু, বড়লেখা প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সোনাই নদীর ছয় স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। গত কয়েক দিনে চান্দগ্রাম বাজার সংলগ্ন নদীপাড়ের চান্দগ্রাম-ইউনিয়ন অফিস রাস্তার অন্তত ৬০ ফুট নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী ৫ গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।  

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৩ নম্বর নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে সুনাই নদী বয়ে গেছে। এবার বর্ষার শুরু থেকেই নদীর বাম পারে ভাঙন দেখা দেয়। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নদীতে পানি বাড়ায় ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। গত প্রায় ১০ দিনে নদীপারের চান্দগ্রাম-ইউনিয়ন অফিস রাস্তাটি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়। শিগগিরই নদীভাঙন রোধ করতে না পারলে চান্দগ্রাম বাজার, আশপাশ এলাকা ও আবাদি জমি প্লাবিত হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,  ঐ ইউনিয়নের উত্তর চান্দগ্রাম ও বাজার সংলগ্ন অন্তত ৭০০ মিটার, নদীর দৌলতপুর বাজার সংলগ্ন ৯০ মিটার, বিহাইডর বাজার সংলগ্ন ১৫০ মিটার, গল্লাসাংগন উত্তর জামে মসজিদের পাশে ৩০০ মিটার, হলদিরপার হেলাল আহমদের বাড়ি সংলগ্ন ১০০ মিটার এলাকায় ভাঙন চলছে। এর মাঝে দৌলতপুর বাজার সংলগ্ন ভাঙন এলাকার রাস্তাটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে পাকা খুঁটি দিয়ে রাস্তাটি বন্ধ করে রেখেছেন।

মঙ্গলবার (১৯ জুন) সরেজমিনে চান্দগ্রাম বাজার সংলগ্ন নদী পারের চান্দগ্রাম-ইউনিয়ন অফিস রাস্তায় ভাঙন দেখা গেছে। ভাঙনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এতে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী লোকজন বাধ্য হয়ে অন্য রাস্তায় যাতায়াত করছেন। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে ভাঙনের পাশ দিয়ে চলাচল করছেন। নদীপারের এ রাস্তা দিয়ে চান্দগ্রাম, ওয়াহিদপুর, নিজবাহাদুরপুর, গল্লাসাংগন ও ফকুয়া গ্রামের লোকজন চলাচল করেন।

ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী চান্দগ্রামের বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নদীর পাড় ভেঙে নদীতে বিলীন হচ্ছে। হঠাৎ রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে রাতের বেলা চলাচলে সমস্যা হয়। ভাঙন ঠেকানোর জন্য দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

হলদিরপার গ্রামের বাসিন্দা সুনাম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এই রাস্তায় আসা-যাওয়া করি। নদীতে পানি বাড়ি (বেড়ে) যাওয়ায় রাস্তাটি ভেঙে যাচ্ছে। খুব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এটি। যাওয়ার রাস্তা নেই। তাই কষ্ট করেও আসা-যাওয়া করছি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য কবির উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় এলাকার লোকজনের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। ঈদের দিন রাতে বাড়ি ফেরার পথে আমাদের সঙ্গের একজন নদীতে পড়ে যান। পরে তাকে নদী থেকে টেনে তুলেছি। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। রাস্তাটি দিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। ভাঙন অব্যাহত থাকলে পুরো এলাকা তলিয়ে যাবে।’

হলদিরপার লাল মাটির ডর এলাকার বাসিন্দা কামাল মেকার ও ইউপি সদস্য সামাদ আহমদ বলেন, ‘ভাঙনের বিষয়টি হুইপকে জানিয়েছি। তিনি ভাঙন দেখে গেছেন। এটা দীর্ঘদিন ধরে ভাঙছে। ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে এখানে কাজ করা দরকার।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘ভাঙনের অবস্থা খুব খারাপ। বিপদজনক অবস্থায় আছে। পানি বাড়লে আরো ভাঙবে। এ রাস্তা দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিদর্শন করেছেন। গ্রামের মানুষের হাটবাজারে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটি। আরো ভাঙলে পানি প্রবেশ করে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হবে। বাড়ি ঘর প্লাবিত হবে। বাজারও ঝুঁকিপূর্ণ হবে। বাজারেও পানি প্রবেশ করতে পারে। দ্রæত এটি মেরামত করা দরকার।’ 

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সুহেল মাহমুদ বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান সাহেবকে সাথে নিয়ে গত মঙ্গলবার (১৯ জুন) গিয়েছিলাম। পুরোপুরি ভেঙে গেলে এলাকায় পানি প্রবেশ করবে। ভাঙন রোধে দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা প্রকৌশলীকে ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথেও কথা হয়েছে।’ 

এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের পওর শাখা-৫ এর উপ-সহকারি প্রকৌশলী আরিফ হোসাইন বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে সোনাই নদীতে নতুন করে চান্দগ্রাম এলাকায় ভাঙনের খবর পেয়েছি। ইতোপূর্বে সোনাই নদীর ভাঙন কবলিত স্থানগুলো দেখেছিলাম। ভাঙন কবলিত স্থানগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সা¤প্রতিক সময়ে নদীর পানি বেশি হওয়ায় ভাঙন আরও বেড়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে সরেজমিনে ভাঙনস্থলগুলো পরিদর্শন করা হবে। বাজেট বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ভাঙন কবলিত স্থানগুলো মেরামতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে নদীতে পানি বেশি থাকায় এ মৌসুমে ভালোভাবে কাজ করানো সম্ভব হবে না। তাই আগামী শুকনো মৌসুমে কাজ করাতে হবে।’


সিলেটভিউ২৪ডটকম/২১ জুন ২০১৮/এজেএল/এক

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.