আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

ওসমানীনগরে পূজা উদযাপন পরিষদ: কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষা, ক্ষোভ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৭-১৭ ১৩:৫৩:৫৬

সিলেটভিউ ডেস্ক ::  পূজা উদযাপন পরিষদ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিনিধিত্বকারী সবচেয়ে বৃহৎ সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এই সংগঠনের লক্ষ্য পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সম্প্রতি ওসমানীনগর উপজেলায় পুজা উদযাপন পরিষদের কমিটি নিয়ে বহুমুখী দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। ক্রমশ এই দ্বন্দ্ব আরো সাংঘর্ষিক রুপ নিচ্ছে। এতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এখন বহুধা বিভক্ত। বিষয়টি নিয়ে সনাতন ধর্মের নেতৃস্থানীয় লোকজন বিব্রতবোধ করেছেন। উদ্ভট পরিস্থিতিতে সংগঠনটির অভিভাকত্ব নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। 

সংগঠনের গঠনতন্ত্র মতে- কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে কমিটি গঠনের নিয়ম রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের মতামতকে উপক্ষো করে জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ এক তরফা ভাবে ওসমানীনগর উপজেলা পূজা পরিষদের কমিটি ঘোষনা করেছেন। এতে সংগঠন পরিপন্থি কার্য্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে সংগঠনের উপজেলার শাখার নেতৃবৃন্দরা অভিযোগ তুলেছেন।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে- গত ৫ মে ওসমানীনগর উপজেলা পূজা পরিষদের অনুষ্টিত দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ৩১ জন কাউন্সিলরের প্রত্যক্ষ ভোটে বা তাদের মতামত নিয়ে কমিটি ঘোষনার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচনের সকল প্রক্রিয়া শেষ করেও ওই সময়ে অজ্ঞাত কারণে জেলার নেতারা নির্বাচন স্থগিতের ঘোষনা দিয়ে সম্মেলন শেষ করেন।

পরবর্তী সময়ে জেলার নেতারা এক তরফাভাবে তাদের মনোনিত লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করে কৌশলে ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষনা করেন। গঠনতান্ত্রিকভাবে কাউন্সিলরদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠনের কথা থাকলেও তাদের মতামতকে অবজ্ঞা করায় ঘোষিত কমিটির সভাপতি সত্যেন্দ্র কুমার পাল কানু, সহ-সভাপতি জয়ন্ত কুমার যুব, সহ-সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর দত্ত ও সাংগঠনিক সম্পাদক শশাঙ্ক পাল এই কমিটি মেনে নিতে পারেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনের উপজেলার শাখার নেতৃবৃন্দরা অভিযোগ করে বলেন- কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন করে কমিটি ঘোষনার দাবিতে ঘোষিত কমিটির চারজনসহ অধিকাংশ কাউন্সিলররা এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে সবার ঐক্যমতে কমিটি ঘোষনার দাবি জানান। এমনকি একই দাবিতে জেলার নেতাদের নিকট কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত আবেদনও দেয়া হয়। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা শীঘ্রই সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি গঠনের আশ্বাস দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জেলা শাখার বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন ঘোষ কেন্দ্রীয় নেতা মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলাকে ম্যানেজ করে সম্পুর্ণ অনৈতিকভাবে আবারও কাউন্সিলরদের অবজ্ঞা করে ১৩ জুলাই জেলা শাখার বর্ধিত সভায় নতুন করে পকেট কমিটি ঘোষনার পাঁয়তারা করেন। ওই বর্ধিত সভায় রঞ্জন ঘোষের মনোনিত ঘোষিত বিতর্কিত কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্যদেরকে দাওয়াত করা হলেও সাবেক আহবায়ক ও বর্তমান সভাপতি সত্যেন্দ্র কুমার পাল কানুসহ উপজেলা পূজা পরিষদের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দকে দাওয়াত করা হয়নি। কমিটি নিয়ে রঞ্জন ঘোষের পক্ষপাতিত্বে এমনটাই প্রমানিত হচ্ছে সংগঠনটি তিনির ব্যক্তিগত সম্পদ।

এদিকে- কমিটি নিয়ে জেলা শাখার নেতৃবৃন্দের পক্ষপাতমূলক আচরণের বিষয়টি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা অবহিত হন। বর্তমানে আর কোনো কমিটি ঘোষনা না করতে জেলার নেতাদের প্রতি কেন্দ্রীয় নেতারা নির্দেশ দেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে জেলার নেতারা উপজেলা পূজা পরিষদের কাউন্সিলরদের বাদ দিয়ে কৌশলে কমিটি ঘোষনার চেষ্টা অব্যাহত রাখায় কাউন্সিলরসহ উপজেলা পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের ঘোষিত কমিটিরি সভাপতি সত্যেন্দ্র কুমার পাল কানু বলেন- সংগঠন কারো ব্যক্তি সম্পদ নয়, এটিকে ব্যক্তি সম্পদ ভাবাটাও ঠিক হবেনা। স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে মূল্যায়ন না করে জেলা কমিটি তাদের ইচ্ছেমত কমিটি প্রকাশ করেছেন। এতে স্থানীয় কাউন্সিররা ক্ষুব্দ হয়ে জেলার নেতাদের কাছে লিখিত আবেদন দিলেও তারা বিষয়টি আমূলে নেননি। পরবর্তীকালে নির্বাচিত কাউন্সিলরসহ উপজেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা ওই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এরপরও জেলার নেতারা এক তরফাভাবে কমিটি ঘোষনায় তোড়জোড় চালাচ্ছেন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত সেন দিপু বলেন- ওসমানীনগরে পূজা পরিষদের কমিটি নিয়ে জটিলতা নিরসনে আমি সিলেটে গিয়ে নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বসে সমঝোতার চেষ্টা করব। তবে বর্তমানে যে পরিস্থিতে রয়েছে সেই পরিস্থিতে সমঝোতা ব্যতিত এখন নতুন করে আর কোনো কমিটি দেয়া হবেনা।

সংগঠনের সিলেটের দায়িত্বশীল আরেক কেন্দ্রীয় নেতা মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা বলেন-সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী কমিটি দেয়া হয়েছিল, কিন্তু পদপ্রাপ্ত কয়েকজন কমিটির দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ায় নতুন কমিটি ঘোষনার বিষয়ে জেলা কমিটির নেতারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। এতে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। এছাড়া এই কমিটিতো আজীবনের জন্য নয়, মেয়াদ শেষ হলে আবারও কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব আসবে। এবিষয়ে সংগঠনের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জন ঘোষের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। অনৈতিক সুবধা নেয়ার বিষয়সহ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে জেলা শাখার সভাপতি নিরঞ্জন কুমার দেব বলেন- ওসমানীনগরের কমিটির বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটি অবগত রয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ মোতাবেক কাজ করব।

বাংলাদেশ পূজা উদয্পন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী বলেন-সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত ওসমানীনগরে নতুন করে কমিটির না দেয়ার জন্য আমি রঞ্জন বাবু এবং ভোলা বাবুকে বলে দিয়েছি। 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৭ জুলাই ২০১৮/আরপি/এক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন