আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে সাধারণ কাউন্সিলর পদ: পিছিয়ে বিএনপি

বিএনপি প্রার্থী ৪০ জন, আওয়ামী লীগের ৫০

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৭-১৯ ১০:৩৮:৩৪

মিসবাহ উদ্দীন আহমদ :: সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচন ঘিরে সিলেটে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। দিন থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্তসময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। সাধারণ কাউন্সিলর পদে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক নেতারা অংশগ্রহণ করায় জমে ওঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লা, অলিগলিতে চলছে তুমুল প্রচারণা। পোস্টার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে ওয়ার্ডগুলো।

কাউন্সিলরপদে অংশগ্রহণকারী ১২৭ জন প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি সমর্থক প্রার্থী হচ্ছেন ৪০ জন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থী রয়েছেন ৫০ জন। জাতীয়পার্টির কোন প্রার্থী নেই। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ইসলামী রাজনৈতিক দল জামায়াত সমর্থক ১৩ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে জমিয়ত-হেফাজত সমর্থক একজন প্রার্থীও অংশ নিচ্ছেন।

সিলেট নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডে অংশ নিচ্ছেন ৯ জন কাউন্সিলর। বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত প্রার্থী বেশি। এরা হচ্ছেন সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, এজহারুল হক চৌধুরী মন্টু, ইকবাল আহমদ রনি, মুফতি কমর উদ্দীন কামু, আনোয়ার হোসেন মানিক ও সলমান আহমদ চৌধুরী। ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত রাসেল মামুন ইবনে রাজ্জাক। তিনি সাবেক ছাত্রদল নেতা। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে লড়ছেন ৬ জন। এদের মধ্যে ৩ জন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এরা হচ্ছেন ছালেহ আহমদ, মো. শামীম আহমদ চৌধুরী ও রাজীব কুমার দে।

৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৬ জন। এ বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িতরা হচ্ছেন সোহাদ রব চৌধুরী, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। এদের মধ্যে কয়েস লোদী মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন। তিনি টানা তিনবারের কাউন্সিলর। ৫ নম্বর ওয়ার্ডেও লড়ছেন ৬ প্রার্থী। এদের মধ্যে মো. কামাল মিয়া বিএনপি নেতা। তিনি পৌরসভা থাকাকালীন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ও ইয়ার মোহাম্মদ এনামুল হক। ফরহাদ চৌধুরী শামীম মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও ইমদাদ হোসেন চৌধুরী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

৭নং ওয়ার্ডে দু’জন ও ৮নং ওয়ার্ডে ৭ জন প্রার্থী লড়ছেন। এই দুই ওয়ার্ডে কোন বিএনপি সমর্থক প্রার্থী নেই।

১০ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ জনের মধ্যে অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরী বিএনপি নেতা। মোস্তফা কামাল ও মুজিবুর রহমানও বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। সালেহ আহমদ চৌধুরী একাধিকবারের কাউন্সিলর এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়রও। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে শেখ মো. কবির আহমদ বিএনপি সমর্থক। ১২নং ওয়ার্ডে ৬ প্রার্থীর মধ্যে সিকন্দর আলী ও সালাউদ্দিন মিয়া বিএনপি সমর্থক। সিকন্দর আলী একাধিকবারের কাউন্সিলর।

১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪ জনই আওয়ামী লীগ সমর্থক। আর বিএনপি সমর্থক একমাত্র প্রার্থী হচ্ছেন গুলজার আহমদ। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ জনের মধ্যে বিএনপি সমর্থক প্রার্থী নজরুল ইসলাম মুনিম। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন বিএনপি থেকে মুজিবুর রহমান ও আব্দুল গাফফার। স্বতন্ত্রপ্রার্থী ইফতেখার আহমেদ সোহেলের পরিবারের সদস্যরা বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত।

১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি সমর্থক প্রার্থীরা হচ্ছেন মির্জা বেলায়েত আহমদ লিটন ও তমাল রহমান। একমাত্র ব্যতিক্রম ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে কোন রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থী নেই। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি সমর্থক প্রার্থীরা হচ্ছেন এবিএম জিল্লুর রহমান ও মো. সালমান চৌধুরী।

১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি সমর্থক প্রার্থী রয়েছেন একজন। তিনি হচ্ছেন বর্তমান কাউন্সিলর দিনার খান হাসু। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মো. আজাদুর রহমান আজাদ। এই ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা আবদুল গাফফার মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়ন বাতিল করে। পরে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে আর আবেদন করেননি। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ প্রার্থীর মধ্যে মো. আব্দুর রকিব তুহিন ও মো. সাহেদুর রহমান বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।

২২ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ প্রার্থী জন। এদের মধ্যে শুধুমাত্র সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন বিএনপি নেতা। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জনের অন্যদিকে বিএনপি থেকে মামুনুর রহমান মামুন ও ফারুক আহমদ। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি থেকে হুমায়ুন কবীর সুহিন।

২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের প্রার্থী থাকলেও বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থক একমাত্র প্রার্থী হচ্ছেন মোহাম্মদ তৌফিক বক্স লিপন। বাকি ৪ জনই বিএনপি সমর্থক। তারা হচ্ছেন সেলিম আহমদ রনি, আব্দুল মন্নান, রেজাউল করিম, মঈন উদ্দীন। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে কোন বিএনপি সমর্থক প্রার্থী নেই। এই তিনটি ওয়ার্ড নগরীর দক্ষিণ সুরমায় অবস্থিত। বাকিসবগুলোই উত্তর সুরমায় অবস্থিত।

বর্তমানে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি ওয়ার্ডে বিএনপি দলীয় কাউন্সিলরবৃন্দ দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ১, ৪, ৬, ১০, ১২, ১৪, ১৮, ১৯, ২১ ও ২২। এরা হচ্ছেন সৈয়দ তৌফিকুল হাদি, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, ফরহাদ চৌধুরী শামীম, সালেহ আহমদ, সিকন্দর আলী, নজরুল ইসলাম মুনিম, এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, দিনার খান হাসু, আব্দুর রকিব তুহিন ও সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেও সমানসংখ্যক কাউন্সিলর দায়িত্বপালন করছেন। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ৩, ৭, ৮, ৯, ১১, ১৩, ২০, ২৩, ২৫ ও ২৬। কাউন্সিলরবৃন্দ হচ্ছেন এস.এম আবজাদ হোসেন, আফতাব হোসেন খান, ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াস, মখলিছুর রহমান কামরান, রকিবুল ইসলাম ঝলক, শান্তনু দত্ত সনতু, ছয়ফুল আমিন বাকের, আজাদুর রহমান আজাদ, মোস্তাক আহমদ, তৌফিক বক্স লিপন।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দলীয়ভাবে হলেও সেটি শুধুমাত্র মেয়রপদে। কাউন্সিলরপদে কোনদলই আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রার্থী দেয়নি। সেকারণে কঠোরতা অবলম্বনের সুযোগ নেই। বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছন।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম হোসাইন বলেন- ‘কাউন্সিলর পদে প্রতীক নিয়ে নির্বাচন হচ্ছেনা। তাই বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তেমন একটা কঠোর হওয়া যাচ্ছেনা।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১৯ জুলাই ২০১৮/ এমইউএ/আআ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন