Sylhet View 24 PRINT

মৌলভীবাজার পাসপোর্ট অফিসে ‘সাংকেতিক চিহ্নে’ ঘুষবাণিজ্য!

অফিস স্টাফের কাছে জিম্মি পাসপোর্ট প্রত্যাশিরা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৭-২৩ ১৩:০১:৫০

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার :: প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ট্রাভেলস ও দালাল কর্তৃক প্রদত্ত সাংকেতিক চিহ্ন ছাড়া নেয়া হচ্ছে না কোনো আবেদন। আর ওই সাংকেতিক চিহ্নেই চলছে রমরমা ঘোষ বাণিজ্য। এই ঘুষ বাণিজ্য হচ্ছে অফিসের কিছু অসাধু স্টাফ, বাহিরের দালাল এবং বিভিন্ন ট্রাভেলন্স এর যোগসাজসে।

জানা যায়, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পাসপোর্ট প্রত্যাশিরা চরম হয়রানির শিকার হন। ঘুষ ছাড়া কলম নড়েনি অফিসের কর্মরত কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের। আবেদন জমা দেয়া থেকে শুরু করে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত ধাপে ধাপে দালাল দ্বারা হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন এজেলার সাধারণ নাগরিক। বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিক অধিকার থেকে।

কুলাউড়া উপজেলার কাতার প্রবাসী আব্দুস শুকুর, মাহিরুল ইসলাম, সদর উপজেলার ধনাচিড়ি গ্রামের শাহিনসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত একাধিক আবেদনকারীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, নির্ধারিত ফ্রি ৩৪৫০ (সাধারণ) এবং ৬৯০০ (জরুরি) টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দিতে গেলে আবেদন গ্রহণকারী অফিস স্টাফ প্রথমেই ব্যাংকে জমা দেয়া টাকার রশিদের পেছন দেখেন এবং উনার মনমতো হলে (সাংকোতিক চিহ্ন থাকলে) জমা নেন। অন্যতায় কাউকে পরামর্শ দেন দালাল অথবা ট্রাভেলসের মাধ্যমে জমা দিতে আবার কাউকে পাঠাচ্ছেন অফিসের দ্বিতীয় স্যার ডেপোটি এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (ডিএডি) প্রবীর বড়ুয়ার কাছে। তিনিও টাকার রশিদের পেছন দিক দেখে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আবেদনকারীদের বিদায় করেন। পরে বাধ্য হয়ে অসহায় গ্রামের সহজ সরল সাধারণ মানুষ কোনো উপাআন্তর না পেয়ে দালাল অথবা ট্রাভেলসের মাধ্যমে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য সাড়ে ৫হাজার থেকে ৬ হাজার আর জরুরি’র জন্য ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্টের আবেদন জমা দেয়ার জন্য ফরম হাতে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশিরা। এসময় দেখা যায় হাতে ঘোনা দু-একটি বাদে প্রায় সবকটি আবেদন ফরমের সাথে সংযুক্ত টাকার রশিদের পিছনে দেখা যায় বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন। এদিকে আবেদন গ্রহণকারী কর্মকর্তা প্রথমে ফরমের সাথে যুক্ত থাকা টাকার রশিদের পেছন দেখেন সেখানে যদি দালাল অথবা ট্রাভেলস এর দেয়া সংকেত N+R, R+H  সহ বিভিন্ন সংকেত দেখতে পান তাহলে জমা নেন। অন্যদিকে যে সকল আবেদনকারী দালাল অথবা ট্রাভেলস ছাড়া নিজে নিজে আবেদন জমা দিতে চান বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাদের তৈরি করা দালাল অথবা ট্রাভেলস এর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাভেলসের মালিক জানান, আবেদনকারীরা পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়ে আমাদের দারস্থ হন। আমরা আবার নতুন ভাবে আবেদন ফরম পূরন করি এবং তাদের কাছ থেকে ৫ হাজার ৫’শ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত নেই। এর মধ্য থেকে ৩৪৫০ টাকা ব্যাংকে, ১০৫০ টাকা পাসপোর্ট অফিসে এবং পুলিশি তদন্তের জন্য ৫০০-৮০০ টাকা দিতে হয়। আমরা ফরম পূরন করা সহ বিভিন্ন কাজ করে পারিশ্রমিক বাবত কমিবেশি ৫০০টাকা পাই। ব্যাংকে জমা দেয়া টাকার রশিদের পেঁছনে বিভিন্ন ট্রাভেলস এর ভিন্ন ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন দেয়া থাকে। এই সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে কি বুঝায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সমস্থ সাংকেতিক চিহ্ন মানে পাসপোর্ট অফিসে নিশ্চিত ১০৫০ জমা দিতে হবে।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক শামীম আহমদ বলেন, “আমি নতুন যোগদান করেছি তাই সাংকেতিক চিহ্ন’র বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি কোথায়ও কোনো ঘাপলা আছে কিনা। পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব এবং অফিসের সার্বিক বিষয় গুলো পরিবর্তন করতে আন্তরিকতার সহিত কাজ করব।’’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ জুলাই ২০১৮/এসবিএ/আআ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.