আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

সিলেট-১ আসন: আ.লীগের প্রার্থী নিয়ে ধোয়াশা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-১৪ ০০:০৮:২৫

রফিকুল ইসলাম কামাল :: বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘তীর্থ’ আসনের মর্যাদা অধিষ্ঠিত সিলেট-১ আসন। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরান (রহ.)-সহ ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত এই আসন থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলো।

সিলেট-১ আসন সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড, সিলেট সদর উপজেলা এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত। এ আসনটিতে নিজেদের সবচেয়ে ‘যোগ্য ও জনপ্রিয়’ নেতাকেই প্রার্থী করে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো।

আগামী ডিসেম্বরে দেশে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা নিয়ে ধোয়াশার তৈরি হয়েছে। মূলত এই আসনের সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বিভিন্ন সময়ের মন্তব্য প্রার্থী নিয়ে এই ধোয়াশা তৈরি করেছে।

বয়সের কারণে আর নির্বাচন করতে চান না, অবসরে যেতে চান। এরকম মন্তব্য সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। সর্বশেষ ৬ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর নির্বাচন করছি না। নির্বাচন করবে আমার ভাই আমি তার সমর্থক হয়ে কাজ করবো।’

অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই ড. এ কে মোমেন। তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ২০১৫ সালের নভেম্বরের দেশে ফিরে আসেন তিনি। এরপর ক্রমেই সিলেট-১ আসনে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালান ড. মোমেন। সিলেটভিউ২৪ডটকম’র সাথে একাধিকবার আলাপকালে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছার কথা জানান তিনি।

তবে ড. মোমেনকে সিলেট-১ আসনে এখনও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে কোনো সবুজ সংকেত প্রদান করা হয়নি। যদিও গুঞ্জন রয়েছে, অর্থমন্ত্রীর প্রভাবেই দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন মোমেন।

নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে ড. এ কে মোমেন সম্প্রতি সিলেটভিউকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ থেকে আমাকে দেশে এনেছেন নির্বাচন করানোর জন্য। আমি তাঁকে বলেছিলাম যে, আমি রাজনীতিবিদ নই। তখন তিনি বলেছিলেন, তোমাকে রাজনীতিবিদ হতে হবে না, তুমি আমার সাথে থাকো এবং অর্থমন্ত্রীর সাথে একসাথে কাজ করো।’

তিনি আরো বলেন, ‘একসময় সিলেটের সবার সাথে আমার পরিচয়, সম্পর্ক ছিল। পরে সরকারি চাকুরিতে বিদেশ চলে যাওয়ায় একটা শুন্যস্থানের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে আমি আবার সিলেটে ফিরে এসে এখানকার মানুষের সাথে ওঠাবসা করছি। আমি আনন্দিত যে, মানুষের অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছি। এই বুড়ো বয়সে আমার ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই। যদি সুযোগ হয়, তবে মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই।’

গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের এই সাংগঠনিক সম্পাদক গেল বছরের ২৩ মার্চ সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে দলের তৃণমূল প্রতিনিধি সমাবেশে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সামনে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হতে চান জানিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। গেল জানুয়ারিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। অবশ্য সিলেট-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেলে সিলেট-৩ আসনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছার বিষয়টিও জানিয়েছেন মিসবাহ সিরাজ।

এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইনের নামে কিছুদিন আগে গুঞ্জন শোনা গেলেও বর্তমানে সেই গুঞ্জন স্থিমিত হয়ে পড়েছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেটভিউকে বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সকল কর্মকা- সিলেটের পূণ্যভূমিতে। আমি এখানকার মানুষের সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে থেকেছি। সিলেট-১ আসনের জনগণ আমাকে সংসদে দেখতে চায়। আমিও এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘সিলেট-৩ আসনে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন না পেয়ে মানুষ সেখানেও আমাকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার উৎসাহ দিচ্ছেন।’

এদিকে, অর্থমন্ত্রী সিলেট-১ আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে ড. এ কে মোমেনের নাম ঘোষণা করলেও বিষয়টি সহজভাবে নিচ্ছেন না স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, ব্যক্তিগতভাবে কেউ কাউকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেন না। আওয়ামী লীগে নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ড আছে, সেই বোর্ডই দলের প্রার্থী ঠিক করবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সিলেটভিউকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে গণতান্ত্রিক দল। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে কারা প্রার্থী হবেন, তা ঠিক করতে দলের মনোনয়ন বোর্ড আছে। সর্বোপরি দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আছেন। এর বাইরে কেউ কাউকে দলের প্রার্থী ঘোষণা বা পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন না। অর্থমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন