আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

লাখাই কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবস আজ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-১৮ ০৯:২০:৪১

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ :: আজ ১৮ সেপ্টেম্বর, হবিগঞ্জের লাখাই কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালে এই দিনে একসঙ্গে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাজাকারের সহযোগিতায় ১২৭ জনকে হত্যা করেছিল পাকহানাদর বাহিনী। আহত হয়েছিলেন শতাধিক ব্যক্তি। এত লাশ একসঙ্গে সৎকারের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় পাশের নদী দিয়ে লাশ ভাসিয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় নারীরা। সেই বিভীষিকাময় দিনের কথা মনে করে আজও কেঁপে ওঠেন অনেকে। একাত্তরের ভয়াবহ স্মৃতির এ দিনটি প্রতি বছর নিরবেই কেটে যায়। প্রশাসন কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের কোনও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয় না। নির্মাণ করা হয়নি কোন স্মৃতিস্তম্ভ। অবশেষে ১৭ সালে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা অনুদান নিয়ে ও গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে নির্মাণ হচ্ছে স্মৃতিস্তম্ভভব। এতে খুশি শহদি পরিবারের লোকজন। সেই সাথে যুদ্ধাপরাধি লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও লাখাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর রায় যে কোন দিন ঘোষণা করার কথা। স্থানীয় লোকজন লিয়াকত আলীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড চান।
 
জানা যায়, লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামটি জেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত ও দুর্গম হাওর অঞ্চলের একটি গ্রাম। যোগাযোগের তেমন ভালো মাধ্যম নেই। বর্ষায় নৌকার আর শীতকালে পায়ে হেটে চলাচল করতে হয়। গ্রামে শতকরা ৯৫ ভাগ লোকই শিক্ষিত ও হিন্দুধর্মাবলী। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্থানীয় রাজাকারের সহযোগিতায় পাকহানাদার বাহিনী ভোর বেলায় হঠাৎ আক্রমণ চালায় ওই গ্রামে। এ সময় গ্রামের শত-শত নারী-পুরুষ স্থানীয় একটি পুকুরের পানিতে ডুব দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ১২৭ জন নিরিহ নারী-পুরুষের। লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয় তাদের। প্রতি বছর ১৮ সেপ্টেম্বর আসলেই যুদ্ধাহত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা স্থানীয় কমলাময়ি বিদ্যালয় প্রাঙ্গনের অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুলদিয়ে দিনটি পালন করে থাকেন।

স্থানীয় একটি হাইস্কুলের পাশে নিজেদের অর্থায়নেই ১২৭ জনের মধ্যে পরিচয় পাওয়া ৪৫ জনের নামে একটি স্মৃতিস্বম্ভ নির্মাণ করেছেন। দিবসটিতে স্কুল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করে নিহতদের স্বজনরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সেখানে। দীর্ঘ ৪৪ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে গত বছরের সেপ্টেম্বরে জেলা পরিষদের দুই লক্ষ টাকা ও গ্রামবাসীর চাঁদায় শুরু হয় স্থানীয় একটি স্মৃতিস্তম্ভব নির্মাণের। যদি আর্থিক অবস্থার কারণে এখনও সমাপ্ত হয়নি স্মৃতিস্তম্ভের কাজ। তবে স্মৃতিস্তম্ভব নির্মাণে খুশি শহীদ পরিবারের স্বজনরা।

স্মৃতিস্তম্ভে বঙ্গবন্ধু ও তিনজন মুক্তিযোদ্ধার মূর্তি শোভা পাচ্ছে। আর্থিক দুরবস্থার কারণে কাজে সময় লাগলেও এ বছরই এটির কাজ সমাপ্ত হবে বলে আশা গ্রামবাসীর। সেই সাথে রাজাকারদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের চলমান মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চান তারা।

এ ব্যাপারে শহীদ পরিবারের সদস্য ওই স্থানীয় কমলাময়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিটন দাস বলেন- আমার কাকাকে পাক হানাধারবাহীনি নির্মমভাবে হত্যা করে। দীর্ঘ দিন ধরে আমরা গণহত্যার বিচার ও একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানালেও কোন কাজ হয়নি। অবশেষে সরকারি সহযোগিতা ও গ্রাবাসীর উদ্যোগে একটি স্থানীয় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হওয়ায় আমরা খুশি। সেই সাথে এখন রাজাকারদের ফাসি দিলেই হলো।

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা অমরেন্দ্র রায় বলেন, আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে স্মৃতিস্তম্ভের বিকল্প নেই। তাছাড়া এই গ্রামে যে নির্মম হত্যাকান্ড ঘটেছিলো তার খুবই হৃদয়  বিদারক। সেই দিনের কথা মনে হলে এখনও শরীরে কাটা দেয়।

এ সময় তিনি দ্রুত স্মৃতিস্তম্ভের কাজ সমাপ্ত করতে আর্থিক সহযোগিতা ও রাজাকারদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি করেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮সেপ্টম্বর২০১৮/কেএস/আআ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন