আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

বিশ্বনাথে খুন হওয়া সেই তরুণীর পরিচয় সনাক্ত

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-১৯ ১৬:০৭:২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের পাঠাকইন-রামচন্দ্রপুর সড়কের পার্শ্বে ১৫/১৬ বছর বয়সী উদ্ধার হওয়া তরুণীর লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। তরুণীর নাম রুমী আক্তার। সে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার নগরভাত আউত পাড়া এলাকার মো. আতাউর রহমানের মেয়ে।

রুমী আক্তার হত্যাকান্ডের ঘটনায় টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার নাসির গ্লাস ফ্যাক্টরি থেকে বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত ওয়াব উল্লাহ ছেলে শফিক মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। একইসাথে তার বউ ও দুইজন ভাবিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এছাড়াও শফিককে বিভিন্ন পর্যায়ে সহায়তাকারী এবং সন্দেহভাজন হিসাবে ১৪ জনকে পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বুধবার সিলেট জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহ্বুবল আলম জানান, লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের সময় লাশের শরীরে পুরাতন একটি বড় অপারেশনের চিহ্ন দেখা যায়। এছাড়া সাদা গেঞ্জির চিকন টুকরা কাপড় দ্বারা উক্ত লাশটির দুই হাত পিছন দিকে পিঠের উপরে বাধা ও উপুর অবস্থায় লাশটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। লাশের গলায় পেচানো ওড়নার দুই পাশের দুই মাথায় পলিথিন দ্বারা মোড়ানো সাদা কাগজে লেখা দুইটি একই নম্বরের মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। ঐ নাম্বারের সূত্রধরে তদন্তের একপর্যায়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর একটি বাংলালিংক নম্বর হতে লাশের সাথে পাওয়া নম্বরের ব্যক্তিকে গ্রেফতার করলে সকল তথ্য উদঘাটিত হবে বলে সিলেট বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জকে জানালে তাৎক্ষণিক বাংলালিংকের ঐ নম্বর সনাক্ত করে প্রযুক্তিগত সহায়তায় ঐ ব্যক্তির অবস্থান সনাক্ত করা হয়।

তদন্ত চলাকালে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার কুমুদিনী হাসপাতাল হতে চিকিৎসাধীন একটি মেয়ে নিখোঁজ আছে জানতে পেরে নিখোঁজ পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। যোগাযোগের একপর্যায়ে পরিধেয় কাপড় চোপড় ও পেটের পুরাতন অপারেশন পর্যালোচনায় ঐ নিখোঁজ মেয়েই অত্র থানাধীন পাঠাকইন গ্রামে পাওয়া অজ্ঞাতনামা মেয়ের লাশ বিশ্বনাথ থানা পুলিশ নিশ্চিত হয়।

গত ৯ সেপ্টেম্বর কুমুদীনি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা একব্যক্তির সাথে রুমী আক্তারের পরিচয় ঘটে। হাসপাতালে রুমী আক্তারের বেডের পাশেই উক্ত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির শাশুড়ী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল। শাশুড়ীর চিকিৎসার খোজ নিতে গিয়ে তার সাথে পরিচয় ঘটে। মোবাইল নাম্বারের অবস্থান পর্যালোচনা করে দেখা যায় গত ৯ সেপ্টেম্বর তারিখ উক্ত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মির্জাপুর থেকে গাজীপুর, নরসিংদী ও হবিগঞ্জ হয়ে সিলেট জেলার অত্র বিশ্বনাথ থানাধীন ঘটনাস্থল এলাকায় ঘটনার তারিখ ও সময়ে অবস্থান করে পুনরায় ঘটনাস্থল এলাকা হতে ঘটনার পর পর একই পথে মির্জাপুর টাঙ্গাইলে চলে যায়।

১৪ সেপ্টেম্বর আসামী গ্রেফতারের জন্য অনুরোধ করা বাংলালিংকের নম্বর পর্যালোচনায় দেখা যায় উক্ত নম্বরে সাথে অত্র থানাধীন স্থানীয় আশুগঞ্জ বাজারের জনৈক ইমরান আহমেদ রিয়াদ কয়েক দফায় যোগাযোগ করে এবং বাংলালিংকের উক্ত নম্বরটি বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে যোগাযোগ করে। ফলে এতে প্রমাণিত হয় যে, অত্র থানাধীন স্থানীয় রামচন্দ্রপুর সাকিনের ইমরান আহমেদ রিয়াদের সাথে বাংলালিংকের গ্রাহকের কোন না কোনভাবে পরিচয় আছে। ইমরানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যথারীতি থানায় আনা হলে প্রাপ্ত নাম্বারসমূহ বিশ্লেষণে বাংলালিংক নাম্বারসহ নিহত রুমী আক্তারের সাথে যোগাযোগকারী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিটি অত্র থানাধীন রামচন্দ্রপুর সাকিনের জনৈক শফিক মিয়া, পিতা মৃত-ওয়াব উল্লাহ বলে জানা যায়। শফিক মিয়া (৩২) বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানাধীন নাছির গ্লাস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করে। উক্ত ফ্যাক্টরীর কর্মরত এক মহিলার সাথেও সে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। উক্ত মহিলার শরনাপন্ন হলে তার দেওয়া তথ্যমতে শফিক মিয়াকে ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৬ টায় নাছির গ্লাস ফ্যাক্টরী হতে গ্রেফতার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত তার মোবাইল ফোনের সন্ধান দেয়।
শফিক মিয়ার পূর্ব ইতিহাস অনুসন্ধানকালে চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য উঠে আসে। শফিক মিয়া একজন নারী পিপাসু ও লম্পট প্রকৃতির লোক। সে বর্তমানে ৪ জন স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছে। বর্তমানে সে অত্র থানার গনধর্ষণ মামলার জিআর নং-৩১/১৭, এর পলাতক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী। গণধর্ষন মামলায় পলাতক হয়ে অত্র থানা এলাকা হতে বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে আত্মগোপন করে সবার অগোচরে নিরীহ মেয়েদেরকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে একের পর এক হত্যা ও ধর্ষনের মত জঘন্য অপরাধ করে বেড়ায়। রুমী আক্তারও তার প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে অকালে প্রাণ হারায়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮/ইআ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন