আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং
সিলেট :: সিলেটে হিজড়াদের গুরুমা হিসাবে পরিচিত সুন্দরী হিজড়ার বিরুদ্ধে আবারও থানায় জিডি করা হয়েছে। এবার জিডি করেছেন শাহপরাণ থানার বালুচর নতুনবাজার এলাকার মৃত আহমদ আলীর সন্তান রমনী হিজড়া (২৩)। সুন্দরীর দলভূক্ত হয়ে কাজ না করায় অঙ্গহানির হুমকি ধমকি ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে তিনি এই জিডি করেন।
জিডিতে সুন্দরী ছাড়াও তার দলের আরও ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। তারা হলেন দক্ষিণ সুরমার কদমতলিস্থ কুইন্স টাওয়ারের রনি হিজড়া (৩০), আলাই মিয়া (৪০) ও মরিয়ম হিজড়া।
শাহপরাণ থানায় দায়েরকৃত জিডিতে (নং-২২০-৬/১০/২০১৮) রমনি হিজড়া উল্লেখ করেন, সুন্দরী, রনি, আলাই, মরিয়ম হিজড়াসহ তাদের দলের অন্য সদস্যরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত। তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় ও চাঁদাবাজি করে বেড়ায়।
রমনি এই কাজ না করে সুস্থ-সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য বৈধ কাজের মাধ্যমে জীবন যাপন করতে চাইলে ৫ অক্টোবর বিকাল ৫টায় তারা তার বাসায় যায়। তিনি আবারও তাদের দলের হয়ে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে সুন্দরীসহ সবাই মিলে তাকে গালিগালাজ শুরু করে। এরপর তাকে অঙ্গহানী ও মারাত্মক ক্ষতি করার হুমকি দেয়।
তাদের মারমুখী আচরণ ও হুমকি ধমকির প্রেক্ষিতে নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে শংকিত হয়ে রমনি হিজড়া জিডি এন্ট্রি করছেন বলেও উল্লেখ করেন। এর আগে সুন্দরী হিজড়া ও তার একসময়ের শিষ্য রানা হিজড়া পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে দক্ষিণ সুরমা থানায় সাধারণ ডায়রি করেছিলেন। সেই ডায়রির সূত্রে পুলিশ উভয়কেই নোটিশ দিয়ে ৪ অক্টোবর থানায় হাজির হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল।
কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ৮ অক্টোবর তাদেরকে নিয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার সহকারি পুলিশ কমিশনার নির্মলেন্দু চক্রবর্ত্তী বসেছিলেন। উভয়কেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকদিনের মধ্যেই তারা আবার বসবেন।
রানা ও সুন্দরী হিজড়ার সাথে ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, এক সময়ে রানা সুন্দরীর শিষ্য ছিল। এরপর সে সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে সমমনা আরও কয়েকজন হিজড়াকে নিয়ে সুন্দরীর দল ত্যাগ করে বলেই রানার দাবি। সেই থেকে দুজনের বিরোধ তুঙ্গে।
গত বছর নগরীর মির্জাজাঙ্গালস্থ হোটেল নির্ভানা ইন’র সামনে সুন্দরীকে তার বিদ্রোহী শিষ্যরা নাজেহাল, এমনকি মারধরও করে। এরপর দুজনের বিরোধ মিটিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি আবারও তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠেছে। ৫ অক্টোবর নয়াসড়ক পয়েন্টে বিয়ের গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজির সময় আবারও উভয় পক্ষের হিজড়ারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রানার দাবি, সুন্দরীর নেতৃত্বে হিজড়ারা চাঁদাবাজি করতে গেলে তার লোকজন বাধা দেয়। একই দাবি করেছেন সুন্দরীও।
হিজড়াদের নিয়ে কাজ করেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সুন্দরীর নেতৃত্বে থাকা হিজড়ার সংখ্যা বেশি। তারা তাকে গুরুমা হিসাবে সম্বোধন করে। সুন্দরীর নেতৃত্বেই সিলেটে হিজড়ারা চাঁদাবাজি করে। রাস্তায় বিয়ের গাড়ি থামিয়ে বরকে নাজেহাল করা ছাড়াও পকেট মারা, মাদকসেবন ও ব্যবসা, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি অনৈতিক কাজের অভিযোগ অনেক পুরনো।
তবে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সুন্দরী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বরং তিনি দাবি করেছেন, এখন আর তার লোকজন এসব কাজ করেনা। তিনি হিজড়াদের চাঁদাবাজির জন্য রানাকেই দায়ী করেন।
দক্ষিণ সুরমা থানার সহকারি পুলিশ কমিশনার নির্মলেন্দু চক্রবর্ত্তী এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানান, একবার বসে দুজনের বক্তব্য শুনেছেন। আবার বসবেন। মোটামুটি তাদের পরস্পরবিরোধী অভিযোগের তদন্ত চলছে। এদিকে রানা হিজড়া দাবি করেছে, সুন্দরী হিজড়াদের দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপের মাধ্যমে টাকা পাহাড় গড়ে তুলছে। সিলেটে হিজড়াদের সব অপরাধের জন্য তিনি সুন্দরীকেই দায়ী করেন।
রমনি হিজড়া জিডি দায়েরের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি আতংকে আছি। কোন সময় সুন্দরীর লোকজন কি করে বসে তার ঠিক নেই। আমি প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার চাই।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১০ অক্টোবর ২০১৮/এক/পিডি