আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

এমপি কয়েসের কারণেই বঞ্চিত দক্ষিণ সুরমা: সংবাদ সম্মেলনে আবু জাহিদ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-১৫ ১৫:৩২:৩২

সিলেট :: সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ কয়েসের অসহযোগিতার কারণেই দক্ষিণ সুরমা উপজেলাবাসী উন্নয়ন বঞ্চিত বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলার চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবু জাহিদ। সোমবার দুপুরে নগরীর জিন্দাবাজারস্থ একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ উত্থাপন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান আবু জাহিদ বলেন, এমপি মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের অসহযোগিতা ও উন্নয়ন বিমুখ অসৎ মানসিকতার কারণে দক্ষিণ সুরমার মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি সময়ের ব্যবধানে পাহাড়সম হলেও দক্ষিণ সুরমার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাঘাটের বেহাল; সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়কের ২২ কিলোমিটারের অবস্থা করুণ। এই রাস্তা নিয়ে এমপি বিরুপ মন্তব্য করে বলেছেন, রাস্তা নদী হয়ে গেল্ওে তার কিছু যায় আসে না। এছাড়া দক্ষিণ সুরমার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি এখন পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। দক্ষিণ সুরমা স্টেডিয়াম নির্মানের প্রক্রিয়াা এখনও অন্ধকারে। সাইন বোর্ডে ঝুলে আছে দক্ষিণ সুরমার বিভাগীয় স্টেডিয়ামের কার্যক্রম। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার তোড়জোড় শোনা গেলেও বাস্তবে কোন তৎপতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

লিখিত বক্তব্যে আবু জাহিদের দাবি, দক্ষিণ সুরমায় ইপিজেড স্থাপনের উদ্যাগটিও এমপির অদক্ষতায় স্থানাস্তরিত হয়ে গেছে। বঞ্চিত হয়েছে উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ। বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুল সরকারীকরনে এমপির ব্যক্তিগত পছন্দ ও অপছন্দের কারনে শিক্ষা বিপ্লব থেকে বঞ্চিত দক্ষিণ সুরমাবাসী। উন্নয়ন চিত্রের পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক অবস্থা আরও করুন। এখানে সরকার দলীয় এমপি থাকলেও সরকার দল সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজিত করা হয় স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে। এমপি তার আধিপত্য ধরে রাখতে দলীয় প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব  হাইব্রিডদের পৃষ্ঠপোষকতার কারনে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা আজ নিস্ক্রিয়। এমপির ছত্রছায়ায় সরকারী বরাদ্দ লুটপাটের তীব্র প্রতিযোগিতা এখানে চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা শান্তি কমিটির আহবায়ক ছিলেন বতর্মান সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ কয়েছের পিতা মৃত দেলোওয়ার হোসেন উরফে ফিরু রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে স্থানীয় ফেঞ্চুগঞ্জ পশ্চিমবাজারে কাইয়ার গোদামে নিরীহ নারীদের নির্যাতন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের  হত্যা এবং অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে ফিরু রাজাকারের তালিকা অনুযায়ী। এমপি কয়েসও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার ক্যাপ্টেন আনসারীর জলপাই রংয়ের জিপ গাড়ি চড়ে ফেঞ্চুগঞ্জের আনাচে কানাছে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি নির্যাতনের ছক তৈরী করেছিলেন স্থানীয়ভাবে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর লেখনীতে সেই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এই মাহমুদ উস সামাদ কয়েস, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে ঘড়ি মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার ভরাডুিব নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের টিকেট বগলদাবা করে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে নির্মূল করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেন।

আবু জাহিদ বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন্ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে গোপনে প্রকাশ্যে ভূমিকা পালন করেন ধারবাহিকভাবে। তার কারনে জামায়াত মনোনীত দুজন প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়। তার প্রচন্ড বিরোধীতার পরও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচিত হই আমি। তার অসহযোগিতা ও রোষানলে পড়ে জনপ্রতিনিধিরা জনগনের কাজ করতে পারছেন না। সম্প্রতি দক্ষিণ সুরমা উপজেলা এডিপির প্রায় ১ (এক) কোটি টাকা ফেরত যায় এমপির কূটকৌশলের কারনে। উপজেলা পরিষদ থেকে ১ কোটি ২২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকার প্রকল্প পরিষদে গৃহিত হলেও কাজ শুরু হওয়ার আগেই তিনি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় গত ১৮ জানুয়ারি তিনি যাচাই করে অনুমোদনের প্রতিশ্রæতি দিলেও আজ অবধি যাচাই করেন নি অনুমোদনও দেননি কোন প্রকল্প। গত ২৮ আগষ্ট উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় এমপি কয়েস উপস্থিত হয়ে বলেন, নির্বাচনের পূর্বে কোন উন্নয়ন প্রকল্প উপজেলা পরিষদ থেকে গ্রহন করা যাবেনা।

সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান সরকার রাজাকারের উত্তরসূরীদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহারের প্রস্তাবনা আছে। কোন রাজাকার সন্তান যাতে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বধানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কলংকিত করতে না পারে সেই আহবান আমরা জানাই। সিলেট-৩ আসনের দেশ প্রেমিক জনগনের পক্ষ থেকে আকুল আবেদন, এই রাজকার পূত্রের প্রতিহিসংসায় জর্জরিত সিলেট-৩ আসনের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও সাধারণ মানুষ। রাজাকার পূত্রের স্পর্দা এতোই যে তিনি প্রকাশ্য জনসভায় হত্যা হুমকিসহ বাংলাভাই, হিজড়া, নাস্তিক উপাধি দিয়ে মানহানী করছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী পরীক্ষিত মুজিব সৈনিকদের। তার বিরুদ্ধে ক্ষোভের চাপা আগুন নেতাকর্মীদের বুকে। তারা সব কিছু ছাড় দিতে পারবে, কিন্তু রাজাকার পূত্রের নৌকার মনোনয়ন কোন অবস্থায় মেনে নিতে পারবে না। ইতিমধ্যে তাকে প্রতিরোধের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রত্যাশা, স্থানীয় অবস্থা বিবেচনা করে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত ইমেজ বহুল  জনপ্রিয় ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়ার পদক্ষেপ নিবেন  দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী। জনগনের আবেগ ও চেতানার প্রতি দরদ দেখিয়ে মনোনয়ন চুড়ান্ত  হলে নৌকার বিজয় কেউ রুখতে পারবে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রইছ আলী, মোগলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম সাইস্তা, আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিন, তপন চন্দ্র পাল, জেলা পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম ইছন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা পান্নাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ।

সিলেটভিউ/১৫অক্টোবর২০১৮/এমইউএ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন