আজ মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ ইং

নতুনরূপে সাজবে সিলেটের ধোপাদিঘী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-১৬ ১৩:১৫:৫১

মিসবাহ উদ্দীন আহমদ :: দিঘীর শহর হিসেবে সিলেটের অতীত স্মৃতি আর নেই। কালের বিবর্তনে এখন ‘দিঘীর শহর’ খ্যাতি প্রায় হারিয়েই গেছে। হাতেগোনা কয়েকটি দিঘী, আর হারিয়ে যাওয়া অন্য দিঘীগুলোর শুধুমাত্র ‘নাম’- বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে অতীত স্মৃতি।

সেই ঐতিহ্যের স্মারক দিঘীগুলোর একটি ধোপাদিঘী। দিঘীটিকে পুনখনন করে নতুনরূপ দিতে যাচ্ছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)। ইতোমধ্যে দিঘীকে নতুনরূপে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করেছে সিটি কর্পোরেশন। গত রবিবার দুপুর থেকে টানা দুইদিন দিঘী দখল করে থাকা অর্ধশতাধিক স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশনের বুলডোজার। এখন দিঘীর ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করা হচ্ছে। এটি শেষ হলে শুরু হবে খনন কাজ। পুনখননের পরপরই দিঘীর চারপাশে নির্মাণ করা হবে ওয়াকওয়ে।

নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন আর বিনোদনের খোরাক হিসেবে ধোপাদিঘীর নান্দনিক রূপ বড় ভূমিকা রাখবে মনে করছেন নগরবাসী।

সিসিক সূত্র জানিয়েছে- দখল আর স্থাপনার দাপট থেকে বেঁচে যাওয়া প্রাচীনতম ধোপাদিঘীতে আধুনিকতার মিশেলে ফিরিয়ে আনা হবে হারানো রূপ। আর দখলে থাকা কিছু অংশ এগুলো উদ্ধারের কাজ পুরোদমে চলছে। নতুন করে আবার খনন করা হবে দিঘীটি। দিঘীর চারপাশে জায়গা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সেখানে নির্মাণ করা হবে পায়ে হাটার পথ।

সেইপথগুলোতে একটি নির্দিষ্ট স্থান পরে পরে থাকবে বসার জায়গা। বসার জায়গাগুলো অনেকটা শাহী ঈদগাহ মিনারের বসার জায়গাগুলোর মতো হবে। আর দিঘীর চারপাশে লাগানো হবে নানাপ্রজাতির গাছগাছালি। সৌন্দর্যবর্ধনে থাকবে ফুলের টব, ফুলের গাছগাছালিও। দিঘীর সৌন্দর্যবর্ধনের পর সেটির প্রবেশ পথ থাকবে পূর্বদিকে। নবনির্মিত সিটি কর্পোরেশন মসজিদের পাশ দিয়েই। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনেও দিঘীর নতুন রূপ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।

২০১৬ সালে সিলেট সার্কিট হাউসে অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে এ বিষয়ে চুক্তিস্বাক্ষরও সম্পন্ন হয়েছিল। এরপর আনুষাঙ্গিক অন্যান্য কাজ বেশ এগিয়েছে। দরপত্র আহবান করার পর সেটির সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে নগরভবন দিয়েছে কার্যাদেশও।

দিঘীটি সম্পূর্ণরূপে দখলমুক্ত না থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করতে পারেনি। সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে দিঘী দখল করে থাকা অর্ধশত স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখন সেখানে সিটি কর্পোরেশনের উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। সেটি শেষ হওয়ার পরপরই দিঘীর উপর শুরু হবে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ।

সিসিক সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় সরকার সিলেট নগরীর উন্নয়নে প্রায় ২২ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করেছে। সিলেট নগরীর উন্নত পরিবেশ, শিক্ষার মানোন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ধোপাদিঘীর উন্নয়ন কাজেও সেই অনুদান থেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দিঘীর সৌন্দর্যবর্ধন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণে ১২ থেকে ১৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানা গেছে।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- ‘ভারত সরকারের অনুদানের টাকায় ধোপাদীঘি পুনখনন, চারদিকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দরপত্র আহবান সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই দিঘীতে কাজ শুরু হবে।’

ধোপাদিঘীতে সৌন্দর্যবর্ধন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ শেষ হলে দীঘির শোভাবর্ধন হবে এবং কর্মব্যস্ত নগরবাসী অবসরে স্বস্তির নি:শ্বাস নিতে পারবেন বলে মনে করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) সকালে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সিলেটে নিযুক্ত সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনার এল কৃষ্ণমূর্তি ধোপাদিঘীর উদ্ধার কাজ পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি আগামীতেও আরোও উন্নয়ন কাজে সিলেটকে সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, ধোপাদিঘী দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখন দিঘী থেকে ময়লা আবর্জনা সরানো হচ্ছে। শিগগিরই দিঘীকে পুনখনন করে শুরু হবে সৌন্দর্যবর্ধন কাজ। চারপাশে নির্মাণ করা হবে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে। যেটি নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

তিনি জানান, এখানে ভাসমান রেস্টুরেন্ট নির্মাণের প্রকল্প থাকলেও সেটি হচ্ছে না। দিঘী খনন করে চারপাশে শুধুমাত্র ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। দিঘীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এবং পরিবশবাদীদের আন্দোলনের কারণেই ভাসমান রেস্টুরেন্ট নির্মাণ থেকে সরে এসেছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ যোগ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, পূণ্যভূমি সিলেট একসময় দিঘীর শহর হিসেবেই পরিচিত ছিল। এখন আর সেই দিন নাই। পাল্টে গেছে চিত্র। সিলেট এখন ইটপাথর আর দালানকোঠার নগরী। ঐতিহ্যবাহী কাজীদিঘী, লালাদিঘী, ধোপাদিঘীসহ আরো কয়েকটি দিঘী ছাড়া বাকিগুলো ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে স্থাপনা।

বন্দরবাজারের লালদিঘীতে হয়েছে মার্কেট, চারাদিঘীতে হয়েছে মসজিদ ও বিদ্যালয়। ধোপাদিঘীর একাংশে নির্মিত হয়েছে মসজিদ। সাগরদিঘী, মাছুদিঘী, চৌকিদেখি সংলগ্ন মজুমদারীর এলাকার মজুমদার বাড়ির দিঘী, রামেরদিঘীরও নেই অস্তিত্ব। কালেরগর্ভে বিলীন হয়েছে দিঘীগুলো। ভরাট হয়ে যাচ্ছে নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লার পুকুরগুলোও। এতে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ, প্রকৃতি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১৬ অক্টোবর ২০১৮/ এমইউএ

সংশোধনী: উপরোক্ত সংবাদটিতে প্রথমে বলা হয়েছিল ধোপাদিঘীর সৌন্দর্যবর্ধন কাজের সাথে ভাসমান রেস্টুরেন্টও নির্মাণ করা হবে। প্রকৃতপক্ষে সেখানে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পে এখন ‘ভাসমান রেস্টুরেন্ট’ থাকছে না। তথ্যগত ভুলের কারণে আমরা দুঃখিত।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন