সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-১৭ ০৯:৪৩:৪০
সুব্রত দাস :: প্রায় ৪/৫ বছর অাগের কথা। রাস্তায় অনেকটা নতুন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। স্বাভাবিক রিকশার চেয়ে গতির দ্রুততার কারণে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় এটি। ক্রমশ বাড়তে থাকে এর পরিমাণ।
দ্রুততার কারণে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই ত্রিচক্রযান। পাশাপাশি নগরীতে হু হু করে বাড়তে থাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বাড়ে চাপ। যানজটের অন্যতম কারণও হয়ে দাঁড়ায় অটোরিকশাগুলো। এসব নানা সমস্যার কারণে সিলেট নগরীতেও বন্ধ করে দেয়া হয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি থেকে এসব রিকশা অবৈধ হয়ে যায়।
সরকারী এই নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক সমিতি কর্তৃক উচ্চ রিটও খারিজ করে দেয়া হয় উচ্চ অাদালতে। ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি সিলেটে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল সংক্রান্ত রিট খারিজ করেন হাইকোর্ট।
সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের যৌথ বেঞ্চ শুনানী শেষে সিলেট ব্যাটারি চালিত রিকশা মালিক সমিতির রিট খারিজ করে দেন।
সেই থেকে সিলেট নগরী এলাকাতে কার্যত অাইনত ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল অবৈধ। কিন্তু উচ্চ অাদালতের নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও নগরীতে অনেকটা যেন নির্বিঘ্নেই চলাচল করছে এসব রিকশা। দিনের বেলা সংখ্যায় কম থাকলেও রাতের নগরীতে এসব রিকশার সংখ্যা বেড়ে যায়।
অার এসব ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে সিলেট নগরীতে হর-হামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। কিন্ত যাদের এসব দেখার দায়িত্ব তারা কোন উদ্যোগই নিচ্ছেন না। উল্টো রিকশা চলাচলে তাদের গোপন সহযোগিতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
অাদালত অমান্য করে নগরীতে দিন দিন বেড়েই চলছে এই ছোট বাহনের সংখ্যা। প্রকাশ্যে নগরীর অভ্যন্তরে বেশ কিছু শোরুমে বিক্রয়ও করা হচ্ছে বেঅাইনী এসব রিকশা।
নগরীর আনাচে কানাচে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অটোরিকশা রাখার ও চার্জ দেয়ার গ্যারেজ। যেগুলোর বেশিরভাগেরই নেই বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। সেকারণে বিদ্যুৎ অফিসের অভিযান ঠেকাতে এসব গ্যারেজ রাতের বেলা খোলা হয়।
এদিকে নগরীতে প্রতিদিনই চলাচল করছে এসব অবৈধ রিকশা। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ট্রাফিক বিভাগ থেকে ছেড়ে দেয়া হয় অাটককৃত রিকশা।
বেঅাইনীভাবে চলাচলরত সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে কোনরূপ লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না। তাই তারা মালিক সমিতির নামে বানানো নাম্বার প্লেইট ব্যবহার করছে।
সূত্র জানিয়েছে, সিলেট নগরীতে কয়েক হাজার ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা চলাচল করছে। এগুলো অাটক করা, পরে অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া এই ‘র্যানডম ওয়াইজ’ ঘটনার মাধ্যমে ট্রাফিক পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার পকেট ভারি হচ্ছে।
তবে ট্রাফিক বিভাগের দাবি, রিকশা থেকে অাদায়কৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হচ্ছে। কোন অনিয়ম হয় না সেখানে।
পুলিশের হাত থেকে একেকটি রিকশা ছাড়িয়ে নিতে রিকশা চালক কিংবা মালিককে গুনতে হয় ৭ থেকে ১ হাজার টাকা।বিভিন্ন মোড়ে অভিযানকালে অটোরিকশাগুলোর চালককে ধরিয়ো দেয়া হয় টোকেন। সেই টোকেনের মাধ্যমেই অর্থ জমা দিলে রিকশা ছাড়িয়ে নিয়ে অাসতে পারেন চালক। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন রিকশা চালক এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নগরীর রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক আব্দুল হান্নান বলেন- ‘ভাই জানি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালানো বন্ধ, কিন্তু কি করবো? পেটের দায় চালাতে বাধ্য হচ্ছি। ব্যাটারিচালিত রিকশা দিয়ে কমসময়ে বেশি অায় করা যায়। টাকা দিয়ে রিকশা ছাড়িয়ে অানার বিষয়টি তিনিও স্বীকার করেছেন।
সিলেট মহানগর ট্রাফিক পুলিশের ডিসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, সিলেট নগরীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চলাচলে আদালতের নিষেধ রয়েছে। তাই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। তবে আটকের পর সরকারি কোষাগারে মুছলেকা জমা দিয়ে অনেকেই ছাড়িয়ে নেন তাদের রিকশাগুলো।ট্রাফিক পুলিশের অনিয়মের বিষয়টি সত্য নয় বলে তার দাবি।
সিলেটভিউ/১৭ অক্টোবর ২০১৮/ এসডি/ এমইউএ