Sylhet View 24 PRINT

সিলেটের বৃহৎ লোকসমাগম কুলাউড়ার শিববাড়ি মন্দিরে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-১৮ ০০:৪০:২৫

শাকির আহমদ, কুলাউড়া প্রতিনিধি:: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুরের শিববাড়িতে শারদীয় দুর্গোৎসবের সপ্তমী ও অষ্টমীতে পূজারিদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষনীয়। ধারনা করা হচ্ছে বর্তমানে সিলেট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভক্তপূজারিদের সমাগম ঘটে এ পূজামন্ডপে। এদিকে পূজায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগমকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টি না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত ফোর্স মাঠে কাজ করছে। 


প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর আদলে তৈরী শিববাড়ি মন্দিরের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দর্শনার্থীদের ভীড় লেগেই থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ মানুষের সমাগম হয় বলে পূজা কমিটি জানায়। এখানে শিব ছাড়াও মনসা, বালি, ভৈরব, শীতলা, চামুন্ডা, শনিসহ দেব দেবীদের পূজা করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একজন ব্যক্তি বর্তমান শিববাড়ির দিঘির পাড়ে বেলগাছের নিচে বসে নিয়মিত শিবের সাধনা করতেন। কিন্তু তখন কোনো শিবলিঙ্গ এ বাড়িতে ছিল না। পরবর্তী সময়ে পুলক সোমের তপস্যার ফসল হিসেবে বাংলা ১৪০৮ সালে শিবলিঙ্গটি পাওয়া যায়। লিঙ্গটি পাওয়ার পর উপযুক্ত স্থান না থাকায় পুরোনো মন্দিরটি সংস্কার করে ওই মন্দিরেই শিবলিঙ্গটি স্থাপন করা হয়। শিবলিঙ্গটি পাওয়ার গল্প ক্রমেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মূলত ঐ সময় থেকে ভক্তরা শিবলিঙ্গটি দর্শণ করতে আসেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে শিববাড়ির মন্দির নানা রঙে আলোকসজ্জায় সেজেছে। সিলেট বিভাগ ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দূর-দূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন ভক্তরা। আয়োজকরা আশাবাদী, লাখো ভক্তের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠবে শিব মন্দিরটি।

জানা যায়, বড়বাড়ির (শিববাড়ির) লোকেরা ছিলেন জমিদার পরিবারের। তাদের একসময় দোর্দন্ড প্রতাপশালী জমিদারি থাকলেও জমিদারি শাসন উচ্ছেদের পর তাদেরও অন্য জমিদার পরিবারের মতো পড়তে হয় চরম আর্থিক দৈনতায়। ফলে পূর্বের বনেদী পূজা অর্চনার আকাশছোঁয়া জৌলুস হ্রাস পেতে থাকে। তবে এর প্রভাবে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে মোটেই ঘাটতি পড়েনি। ধর্মীয় বিধিবিধান লঙ্ঘন না করেই পূজা-পার্বণ অব্যাহত ছিল। গত একদশক থেকে মন্দিরটি আগের জৌলুস ফিরে এসেছে। রাস্তা থেকে একেবারে মন্দিরের ভেতর পর্যন্ত আধুনিকতায় শিল্পীর নানা কারুকার্যে সাজানো হয়েছে মন্দিরকে। 

পূজারিদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কেউ বলি দিতে, কেউ মোমবাতি জ্বালাতে, কেউ বা দেবীকে ভক্তি দিতে এই মণ্ডপে আসেন। পূজামণ্ডপের আশপাশ উলুধ্বনিতে মুখরিত থাকে সবসময়। পূজা উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় পূজামণ্ডপ ও আশেপাশের এলাকা। পূজার সময়কালীন মণ্ডপের পাশে বসেছে মেলা। হরেক রকমের শতাধিক ভ্রাম্যমান দোকান বসে মন্দিরের আশেপাশ। কাপড়, ফার্নিচার, খেলনা, লাইব্রেরিসহ মিষ্টির দোকান হয় বেশি।

প্রতিবছরের মত এ বছরও পূজার ৩ দিনে লাখো ভক্তের আগমন ঘটবে বলে ধারনা করছেন পূজা কমিটি। তাই প্রশাসনও নিয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তার প্রস্তুতি। জনসাধারণের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করার স্বার্থে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি আনসার সদস্য, স্কাউট সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শামীম মুসা জানান, পূজাকে কেন্দ্র করে যাতে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কুলাউড়ার প্রত্যেক ইউনিয়নে আমাদের টিম নজরদারী রাখছে, বিশেষ করে কাদিপুরের শিববাড়িতে তুলনামূলক বেশী নিরাপত্তা বেষ্ঠনীর মধ্যে আছে।

মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) আবু ইউসুফ বলেন, আমরা পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ করে তাদের সুবিধা অসুবিধা যাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সিলেট, মৌলভীবাজার থেকে সাদা পোষাকধারী পুলিশসহ আমাদের পুলিশ বাহিনী আলাদা আলাদা এলাকায় মোতায়েন আছে। তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে কিনা তা আমাদের উর্দ্বতন কর্মকর্তারাসহ আমরা তদারকী করছি। 

তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোতে কাদিপুরের শিববাড়িতে লক্ষাধিক মানুষের সমাগমের কারনে এক কিলোমিটার সড়কে মানুষের হেঁটে যেতে হতো। গত বছর থেকে আমি সড়কে ডিভাইটেশন কোন দিয়ে নির্বিঘ্নে যান চলাচলের ব্যবস্থা করায় মানুষের ভোগান্তি কমেছে। 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১৮ অক্টোবর ২০১৮/ এসএ/ কেআরএস

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.