Sylhet View 24 PRINT

নগরীতে কৌশলে চলছে সিগারেটের প্রচারণা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-২২ ০০:১৬:০৪

আব্দুল আহাদ :: আইন করে সিগারেট বা তামাকজাত পণ্যের সব ধরনের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হলেও থেমে নেই প্রচারণা। ভিন্ন কৌশলে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিগারেট কোম্পানিগুলো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বাহারী এসব প্রচারণার মাধ্যমে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে ধূমপানে আগ্রহী করে তুলছে।

সরেজমিনে সিলেটের আদলত পাড়া, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার,মিরাবাজার, টিলাগড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিগারেট কোম্পানিগুলো খুচরা বিক্রেতাদের স্টিকার, লিফলেট, আকর্ষণীয় লাইটার, টি-শার্টসহ বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে চায়ের দোকানে চায়ের কাপ উপহার দিচ্ছে। এসব চায়ের কাপে নির্দিষ্ট সিগারেটের লোগো দেওয়া আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রতিনিধি বলেন, ‘আমরা এখানে বেতনভিক্তিক কাজ করছি। সিলেট নগরীতে প্রায় প্রতিটি কোম্পানির মোট ৫০ জন প্রতিনিধি কাজ করছে। প্রতিদিন একেকজনকে ৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, মার্কেটে সিগারেটের চাহিদা বাড়ানোর জন্য অনেক কৌশল নিতে হয়। কোম্পানির মাসিক টার্গেট পুরণ করতে হয়।‘মার্লবোরো ভাল সিগারেট হলেও বেনসন বা অন্য সিগারেটগুলোর মতো বাংলাদেশে এটা চলে না। মার্লবোরোর মার্কেট বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাতে হয়।

সিলেটের বাস টার্মিনাল এলাকায় দেখা গেছে আরেক চিত্র। ছোট একটি সিগারেটের বাক্স নিয়ে ঘুরছে রাজু নামের এক কিশোর।পুরো বক্সটি সিগারেট দিয়ে সাজানো। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট সে বিক্রি করে।

রাজু জানায়,বেনসন সিগারেট বেশি বিক্রয় করায় বেনসন কোম্পানি তাকে এই বাক্স দিয়েছে। তবে শর্ত রয়েছে বেনসন ছাড়া অন্য কোনও সিগারেট সে বিক্রি করতে পারবে না।

নগরীর টিলাগড় পয়েন্টে চায়ের দোকানগুলোতে দেখা গেছে, সিগারেট কোম্পানিগুলোর ভিন্ন কৌশল। চায়ের কাপে সিগারেট কোম্পানির বিজ্ঞাপন। দোকানি জানান, উইংস্টোন কোম্পানি থেকে কাপগুলো তাকে ফ্রিতে দেওয়া হয়েছে। এগুলোতে করে কাস্টমারদের চা দিলেই নাকি ওদের লাভ।

প্রচারণা কৌশল হিসেবে সিলেট নগরীর প্রায় সব এলাকায় দেখা গেছে, খুচরা সিগারেট বিক্রেতারা সুদৃশ্য শোকেজে নিয়ে সিগারেট বিক্রি করছে। এসকল দামি ও সুদৃশ্য শোকেজগুলো কোম্পানির কাছ থেকে বিনামূল্যে পেয়েছে ,যার প্রতিটির দাম ন্যূনতম ১৫ হাজার টাকা।

সিলেট নগরীর মিরাবাজারের সিগারেট বিক্রেতা দুলাল মিয়া বলেন, ‘আমার শোকেজটি দিয়েছে গোল্ড-লিফ ও বেনসন কোম্পানি থেকে। কোনও কিছু ভেঙে গেলে বা নষ্ট হলে তারাই এসে ঠিক করে দিয়ে যায়।’ সবাইকে এই বক্সগুলো দেয়া হয় না বলে জানিয়েছেন তিনি। কারা বক্স পাবেন, লোকেশন ও দৈনিক বিক্রির ওপর নির্ভর করে সেটা নির্ধারণ করা হয।

এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) সিলেট-এর আঞ্চলিক শাখার সমন্বয়কারী মুরাদ বক্স সিলেটভিউকে বলেন, ‘এ ধরনের প্রচারণা আইনবিরোধী। আইনে বলা আছে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ ধারা ৫ এর ‘ক’ উপধারায় বলা আছে, ‘প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনও বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন না, বা করাবেন না।’

আইন অমান্য করলে শাস্তি হিসেবে আইনের ধারা ৫ এর ৪ এ বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যক্তি এ ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে, তিনি অনুর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করলে, তিনি পর্যায় ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।’

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সিলেট বিভাগের সভাপতি সিলেট জেলা প্রশাসক কাজি এমদাদুল হক বলেন, সিগারেটের প্রচারণা আইনবিরোধী। আমার প্রতি মাসেই সিলেট নগরীর বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা অবগত আছি।’
 
তিনি আরও বলেন,‘এ মাসেই আমরা আবার নগরীর বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবো। মাঝে মাঝেই আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কর্মকর্তা বলেন, আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রচারণা চলছে। এটা জানার পরও পর্যাপ্ত লোকবল না থাকার কারণে সবসময় তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২ অক্টোবর ২০১৮/ আআ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.