আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

হবিগঞ্জ ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে উত্তেজনা, গ্রুপিং সৃষ্টি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-২২ ০১:০৪:৩১

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ :: হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এতে করে সৃষ্টি হচ্ছে গ্রুপিং। প্রতিদিনই শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করছেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের মূল্যায়ন না করে টাকার বিনিময়ে পকেট কমিটি দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রদলের একাংশ। অভিযোগ রয়েছে কমিটির একাধিক নেতা বিবাহিত হওয়ারও।

জানা যায়, দীর্ঘ ১৫ বছর পর গত ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আকরামুল হাসান স্বাক্ষরিত পত্রে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের ৪৮১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন।

অভিযোগ উঠেছে- এই কমিটি গঠনে করা হয়েছে নানান অনিয়মের মাধ্যমে। অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন থানার মনোনয়ন প্রত্যাশিত নেতারা প্রভাব খাটিয়ে বিতর্কিত সব ব্যক্তিদের নিয়ে আসছেন কমিটিতে। মানা হচ্ছে না বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের নির্দেশনাও।

তারেক রহমানের নির্দেশ মতে ২০০০ সালের আগের ব্যাচের ছাত্রদের ছাত্রদল করায় নিষেধ করেন। কিন্তু বর্তমান কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে স্থান দেয়া হচ্ছে ২০০০ সালের আগের ছাত্রদের। তাছাড়াও কমিটিতে আসছে অতীতে আন্দোলন সংগ্রামে না থাকা বিভিন্ন ছেলেরাও। যদিও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাধারণ-সম্পাদক বলছে কমিটি দেয়া হয়েছে একদম নিরপেক্ষভাবে। এবং নেতাকর্মীদের মন যোগাতে জেলা কমিটির ইতিহাসে সর্ববৃহত্ত ৪৮১ জনের কমিটি দেয়া হয়েছে।

এদিকে, কমিটিতে ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের মূল্যায়ন না করে টাকার বিনিময়ে কমিটি দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রদলের একাংশ। অভিযোগ রয়েছে কমিটির একাধিক নেতা বিবাহিত হওয়ারও। এ নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সৃষ্টি হচ্ছে গ্রুপিংয়ের। আশঙ্কা রয়েছে সংঘর্ষেরও। এর প্রতিবাদে তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। নেতাকর্মীরা কমিটি বাতিদের দাবিও তুলেছেন।

অপরদিকে, অনেকে মনে করছেন এর প্রভাব পড়তে পারে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও। এতে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কুলিয়ে উঠা কষ্ট হবে বিএনপির। কারণ নির্বাচনে ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। কিন্তু কমিটি নিয়ে গ্রুপিংয়ের কারণে বিএনপির ভরাডুরি শংঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিদ্রোহি নেতাকর্মীরা নিন্দা, অভিমান ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। অনেকে কমিটি নিয়ে একাধিক পোস্ট করেছেন।

পাঠকদের সুবিধার্থে কয়েকটি ফেসবুক স্ট্যটার্স তুলে ধরা হলো-

এইসএম মনির নামে একজন লিখেছেন- ‘হবিগঞ্জের ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে আসলে কিচ্ছু বলার নাই। যাই হুক দীর্ঘ ১২ বছর পর কমিটি হইছে এইটা আনন্দের বিষয়....কিন্তু কিছু কথা না বললেই নয় যারা দলের জন্য আপ্রান চেস্টা করে দলের পিছনে শ্রম দিছে তাদের কে কি মূল্যায়ন করা হলো সেটাই দেখার বিষয়। আসলে আমরা যখন নেতা হয়ে যাই তখন অতিত ভুলে যাই...।
কমিটি দেওয়ার আগে অন্তত পক্ষে সিনিয়র জুনিয়র এর মেইনটেইন টা তো প্রয়োজন ছিলো যাইহুক আমাদের নেতাদের সুবুদ্ধির উদয় হুক চিন্তা করে তারাই দেখোক কি করা উচিত ছিলো আর তারা কি করছেন...।’

ইকবাল আহমেদ নামে এক ছাত্রদল নেতা লিখেছেন- হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলে একমাত্র আমি নেতার কাছে কোন পদ পদবী চাইনি, আজ এই সততা এবং আদর্শের প্রতিদান পেয়েছি। #নষ্ট রাজনীতি।

অন্য একজন লিখেছেন- ‘ জুনিয়র আগে সিনিয়র পরে যেভাবে জেলা ছাত্রদল কোমিটি গঠন করা হয়েছে আমি আশা করব আগামীতে জেলা ছাত্র দলের যে কোন মিটিং এ সিনিয়র আগে বক্তব্য শুরু করতে হবে এবং জুনিয়ররা পরে বক্তব্য দিয়ে মিটিং শেষ করতে হবে। শুধু তাই না জুনিয়ররা আগে বসতে হবে এবং সিনিয়ররা পিছনে বসতে হবে। পরিশেষে বলব ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র পরিবতন করা হয়েছে। হবিগনঞ্জ জেলা ছাত্র দলের মাধ্যমে এই হল ছাত্রদলের হবিগঞ্জ এর রাজনীতি...??’

এম. মহিনুর ইসলাম পাপপু নামে এক নেতা লিখেছেন- নবগঠিত হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের পুর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাজপথের সবচাইতে পরিক্ষীত ত্যাগী ও নির্যাতিত ছাত্রনেতাদের অবমুল্যায়ন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির বাইরে কেউ নিষ্ক্রিয়, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ দলের অন্য অঙ্গ দলে সক্রিয় অথচ ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন হয়েছে। যারা ইউনিয়নের যোগ্য না তারা ও কমিটিতে রয়েছে।’

নাঈম খান নামে একজন লিখেছেন- ‘হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি সার্কাসে পরিণত হয়েছে। বিবাহিত ৪০-৪৫ বছরের কাক্কুরাও কমিটিতে এসেছেন। বিদেশে বসে পদ পেয়েছেন অনেকে। আর দেশের রাজপথের সৈনিকরা পদবঞ্চিত। এজন্যই তো ছাত্রদল তথা বিএনপি এই অবস্থা।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল চৌধুরী বলেন- ‘হবিগঞ্জের ছাত্রদলের ইতিহাসে সর্ববৃহত্ত কমিটি দেয়া হয়েছে। তার পরও যদি নেতাকর্মীরা খুশি না হয় তাহলে কি করব। আমরা ছাত্রদলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের মূল্যায়ন করে কমিটি দিয়েছে। এখানে কোন ধরণের লেনদেন করা হয়নি।’
তিনি বলেন- ‘থানা পর্যায়ের কিছু নেতাকর্মীকে জেলায় পদায়ন করা হয়েছে। কারণ সামনে নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রদলের কমিটি সাজানো হয়েছে।’

বিবাহিত প্রার্থীদের ব্যপারে তিনি বলেন- ‘১৫ বছর পর কমিটি দেয়া হয়েছে। তাই এখানে কয়েকজন বিবাহিত নেতাকর্মীকে পদ দেয়া হয়েছে।’

সভাপতি এমদাদুল হক ইমরান বলেন- ‘যেহেতু ছাত্রদল একটি বৃহত্ত সংগঠন। সেহেতু এখানে অনেক কর্মী থাকে। সবাইকেতো আর পোষ্টে নেয়া যায় না। আমরা যোগ্য এবং ত্যাগি ও দলের জন্য আপ্রাণ কাজ করে এমন ছেলেদেরকেই পদাধিকার দিয়েছি।’

তিনি বলেন- ‘টাকার বিনিময়ে কমিটির দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন।’

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক সেলিম বলেন- ‘ছাত্রদলে বিবাহিতদের কোন স্থান নেই। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে এটা দুঃখজনক। তাছাড়া ছাত্রদল বিএনপির একটি একটি স্বাধিন সহযোগি সংগঠন। তারা তাদের নিজস্ব গতিতে চলবে। এখানে কারও কথায় কোন পদ দেয়া যাবে না।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২ অক্টোবর ২০১৮/কেএস/ডিজেএস

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন