আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আ.লীগে দ্বিধাবিভক্তি, বাধার মুখে বিএনপি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-২২ ১৮:৫৬:৪৪

সানোয়ার হাসান সুনু, জগন্নাথপুর :: সুনামগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে ভিআইপি আসন হিসাবে খ্যাত সুনামগঞ্জ-৩ আসনটি প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর ও দক্ষিন সুনামগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এর আগে এ আসন থেকে জাতীয় সংসদ এ এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন হেভিওয়েট প্রার্থী এরশাদ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৯৬ এর আওয়ামীলীগ  সরকার আমলে স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী। আওয়ামীলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের পররাষ্টমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ। এরশাদ সরকারের আমলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ফারুক রশীদ চৌধুরী, ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে আব্দুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন জমিয়ত নেতা মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর এ পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর ধরে এ আসনের প্রতিনিধিত্ব করছেন সাবেক যুগ্ম সচিব অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নান এম.পি। 

জগন্নাথপুর পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী ডামাঢোল শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা মাঠে সক্রিয়। প্রার্থীরা যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সভা সমাবেশ ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে। বর্তমান এমপি অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নান এলাকার বিভিন্ন জায়গায় চষে  বেড়াচ্ছেন। তিনি জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গনসংযোগসহ সভা সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ১৪ অক্টোবর উপজেলার কলকলিয়া বাজারে এক সমাবেশে তিনি আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন।

অনুরুপ সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ তনয় আজিজুস সামাদ আজাদ ডন গত শুক্রবার জগন্নাথপুর পৌর শহরে  গণমিছিল শেষে জগন্নাথপুর বাজারে এক সমাবেশে বক্তব্যে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী হিসাবে জনগনের কাছে তিনি ভোট চান। আওয়ামীলীগের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি হয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চলছে। এক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান এমপি অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নান, অন্য গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় আওয়ামীলীগে আভ্যন্তরীন কোন্দল আবারও মাথাছাড়া দিয়ে উঠছে।

স্থানীয় এমপি অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতি মন্ত্রী এম.এ মান্নানের সাথে শনিবার আলাপ হলে তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নেত্রীর নির্দেশে সার্বক্ষনিক মাঠে অবস্থান করে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে জগন্নাথপুর ও দক্ষিন সুনামগঞ্জে যে উন্নয়ন হয়েছে। বিগত ৪০ বছরেও এতো উন্নয়ন হয় নি। আমার নির্বাচনী এলাকায় রানীগঞ্জ সেতুসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। আমি আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এগুলো সমাপ্ত করতে চাই। আশা করি নাগরিকবৃন্দ এটা বিবেচনা করবেন।

এ দিকে ২০ দলীয় জোট প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহা-সচিব সাবেক এমপি মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী এডভোকেট ও খুব জোরে শোরে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত রোববার তিনি জগন্নাথপুর পৌর শহরে শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে গনসংযোগ করেন।  এদিকে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী উত্তাপ ততই বাড়ছে। আসন্ন নির্বাচন কি সুষ্ট ও নিরপেক্ষ হবে? সবার অংশ গ্রহনে নির্বাচন হবে নাকি ৫ জানুয়ারীর মত বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হবে। এই মুর্হুত্বে এটাই বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে যেমন আগ্রহ রয়েছে তেমনি আতঙ্কও কাজ করছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি জামাতকে রাজপথে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালনতো দূরের কথা তাদেরকে রাজপথে দেখাই যাচ্ছে না। গ্রেফতার এড়াতে অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সাম্প্রতিক কালে বিএনপির অনেক নেতার বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে মিরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল নুর, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক  দলের সহ-সভাপতি শাহিন মিয়াসহ বিএনপির ৫ নেতাকর্মীকে। বহু নেতাকর্মীকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাংচুরেরও অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
 
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবু হুরায়রা সাদ মাস্টার এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ বিনা কারণে আমাদের নিরপরাধ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। অযথা  নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে  অভিযান চালাচ্ছে। নেতাকর্মীদের না পেয়ে পুলিশ বাড়িঘর ভাংচুর করছে। তিনি বলেন যুব দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হাশিম ডালিম কে না পেয়ে তার বাড়ির দরজা-জানালাসহ আসবাবপত্র ভাংচুর করা হয়েছে। পুলিশের ভয়ে নেতাকর্মীরা বাড়ি ঘরে ঘুমাতে পারছেনা। এ অবস্থায় সুষ্ট নির্বাচন হবে কিভাবে?

২০ দলীয় জোট প্রার্থী মাওলানা শাহিনূর পাশা চৌধুরী এ প্রতিবেদকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। রবিবার জগন্নাথপুর পৌর শহরের শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে জগন্নাথপুর বাজারে গণসংযোগ করি। কিন্তু পৌর পয়েন্টে পুলিশি বাধার সম্মুখিন হই। পুলিশ আমাকে গণসংযোগ করতে নিষেধ করে। কেন নিষেধ জিজ্ঞাসা করেলে উপরের নির্দেশের কথা জানায়। সরকারি দলের প্রার্থীরা পুলিশি প্রটেকশনে নির্বাচনী প্রচারনা চালাবেন আর আমরা জনগনের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারবনা। এটা কোন ইনসাফ হল? তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে কি ভাবে? তিনি বলেন আন্দোলন ও নির্বাচন দুটোই একসাথে চলবে। সুষ্ট ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নির্বাচন করব ইনশাআল্লাহ।  

সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ তনয় আজিজুস সামাদ ডন বলেন, আমার বাবা এ আসনে একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন, বাবার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা আমার একমাত্র লক্ষ্য। তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে নিশ্চয়তা পেয়েই এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি এবং ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বিএনপি নেতা মালেক খান আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল কিন্তু জোটের কারণে কেন্দ্রের নির্দেশে আমি ছাড় দেই। কিন্তু এবার তৃণমুল নেতাকর্মীদের দাবীর প্রেক্ষিতে এবং বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ মোতাবেক আমি নির্বাচনী মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। তবে নেত্রীকে মুক্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই আমরা নির্বাচন করব ইনশাআল্লাহ।

এদিকে বিএনপি নেতা লেঃ কর্নেল (অবঃ) আলী আহমদ জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তবে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম. আহমদ দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন বলে তার ছোট ভাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কবির আহমদ জানিয়েছেন।

এছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম.এ সাত্তার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম.এ সাত্তার আসন্ন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দল নির্বাচনে অংশগ্রহন করলে আমি অবশ্যই মনোনয়ন চাইব।

এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবিলীগ সুনামগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি প্রবীন আইনজীবি এডভোকেট মো. ইসলাম আলী আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে এ প্রতিনিধিকে মঙ্গলবার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পোস্টার লিফলেট বিতরনসহ এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আমি নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছি।

এছাড়াও আওয়ামীলীগ থেকে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক।

এদিকে সিলেট জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক যুক্তরাজ্য প্রবাসী নজরুল ইসলাম আসন্ন নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। 

জাতীয় পার্টি থেকে সুনামগঞ্জ জেলা এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ.কে এর সভাপতি, জগন্নাথপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যুক্তরাজ্য জাতীয় পার্টি সহ-সভাপতি জুবায়ের আহমদ হামজা দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে সোমবার ফোনে জানিয়েছেন। তিনি বলেন কেন্দ্রের সাথে আমার সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রয়েছে। নির্বাচনী সিডিউল ঘোষনার সাথে সাথেই আমি এলাকায় গণসংযোগ করব।

এদিকে জাতীয় পার্টি নেতা যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক তৌফিক আলী মিনার আসন্ন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন বলে এ প্রতিবেদককে বৃহস্পতিবার রাতে ফোনে জানিয়েছেন। তিনি বলেন আমি ঢাকার সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছি। নির্বাচনী সিডউল ঘোষনার সাথে সাথে আমি দেশে আসব ইনশাআল্লাহ।

এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে যারা দলের মনোনয়ন চাইবেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ফারুক আহমদ ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি সাজু আহমদ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২ অক্টোবর ২০১৮/ এসএইচএস/ আআ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন