সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১১-১৩ ০০:৩৯:১৩
রনিক পাল, ওসমানীনগর :: বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক পর্যায়ের মাদরাসা গুলোতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অভিভাবকরাও ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বিজ্ঞান বিভাগ ১৫৬৫ এবং মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৪৪৫ টাকা ফি নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু দুই উপজেলার ৩৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৭টি মাদরাসার মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সর্বোচ্চ ৩২০০ টাকা পর্যন্ত ফি আদায় করা হচ্ছে। অভিভাবকদের মতামত না নিয়ে কোচিং ফি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোচিং ফি না দিলে প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড আটকে রাখার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।
এছাড়া অতিরিক্ত ফি আদায় সংক্রান্ত কোনো রশিদ দেওয়া হচ্ছে না। অভিভাবকরা অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যপারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো সদুত্তর দিচ্ছেন না।
এদিকে বালাগঞ্জ সরকারি ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শাখার জন্য নিয়মিত- ৩১৬১ টাকা, অনিয়মিত- ৩২৬১ টাকা, মানবিক শাখার জন্য নিয়মিত- ৩০২১ টাকা, অনিয়মিত- ৩১২১ টাকা হারে নির্ধারণ করে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনাপত্র প্রকাশ করা হয়। এরমধ্যে অনিয়মিত এবং ১-থেকে ৪ বিষয়ের পরীক্ষার্থীদের বিগত সনের পরীক্ষার মূল প্রবেশপত্র বিদ্যালয় অফিসে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হলেও নির্দেশনাপত্রে ফি-এর পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া সকল প্রকার পরীক্ষার্থীদের ১৫ নভেম্বর বেলা ২টায় থেকে প্রতিদিন গ্রুপ কোচিং ক্লাশে উপস্থিত থাকারও নির্দেশনা দেয়া হয়। অতিরিক্ত ফি আদায়ের নির্দেশনা প্রকাশের পর পরীক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করেন।
কিন্তু বিষয়টির সূরাহা না হওয়ায় পরীক্ষার্থীরা আন্দোলনমুখী হন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত ফি আদায় না করতে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হক স্বাক্ষরিত একটি লিখিত নির্দেশনাপত্র উপজেলার সকল প্রতিষ্টান প্রধানদের নিকট প্রেরণ করা হয়। ওই নির্দেশনাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে- ১৪ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সিলেট থেকে প্রেরিত বিজ্ঞপ্তির নির্দেশনা মতে- ‘বোর্ডের নির্ধারিত ফি ব্যতিত পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো প্রকার ফি গ্রহণ করা যাবেনা। এমনকি বোর্ডের নির্ধারিত ফি-এর সাথে অন্য কোনো ফি সংযুক্ত করে আদায় করা যাবেনা মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।’
বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুনিম বলেন, অতিরিক্ত ফি-এর প্রতিবাদে পরীক্ষার্থীরা বিদ্যালয় এলাকায় দফায়-দফায় মিছিল করেন। ওই সময় আমরা পরীক্ষার্থীদের শান্ত করি। নির্ধারিত ফি নেয়ার জন্য বিদ্যালয় কতৃপক্ষ এবং ইউএনও’র সাথে কথা বলেছি।
বালাগঞ্জ সরকারি ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের আওতাভুক্ত হয়েছে কিন্তু এখনো এর পূর্ণতা আসেনি। বোর্ডের নির্ধারণ করা ফি-এর সাথে আনুষাঙ্গিক অনেক খাত সংযুক্ত করা হয়নি। তবে, বিগত বছরের ন্যায় ফি ধার্য্য করা হলেও এখন বোর্ড থেকে দেয়া নির্ধারিত ফি-ই নেয়া হয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হক বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী ফি আদায় করার বিষয়ে বুধবার উপজেলার সকল প্রতিষ্টান প্রধানদের নিকট নির্দেশনাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। উপজেলার কোন বিদ্যালয় মাধ্যমিক পরক্ষিয় অতিরিক্ত ফি নিতে পারবে না।
বালাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও ওসমানীনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বোর্ড থেকে দেয়া নির্ধাতি ফি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ফি আদায় করে থাকলে তদন্তক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতিরিক্ত ফি নেওয়া শিক্ষা নীতিমালার পরিপন্থি।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ নভেম্বর ২০১৮/আরপি/ডিজেএস