আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে সুর ও কন্ঠে মুগ্ধতা ছড়ালো প্রতিবন্ধীরা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১১-১৮ ০০:০৮:২০

নিজস্ব প্রতিবেদক :: ‘বাঁশি তুমি আর জ্বালা দিওনা’ বলে সুজিত যখন ছেড়ে দিলো তার দরাজকন্ঠ, পুরো অডিটোরিয়াম তখন বিস্ময়ে বিমুগ্ধ। বোঝার উপায় নেই, গায়ক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। আউল-বাউলের লীলা ভূমি, হাসন-করিম আর দুর্বিনশাহসহ অসংখ্য বাউলের জন্মস্থান ভাটিবাংলার হাওরাঞ্চল থেকে সে এসেছে এই মহানগরীতে।

সুনামগঞ্জ যে আউল-বাউলের খনি, তার কন্ঠ আর গায়কীতেই আরেকবার সেই সত্যটিই জানলেন উপস্থিত অতিথিবৃন্দ। আর এমন অনবদ্য পারফরমেন্সের সুবাদেই সুজিতের গলায় বিচারক মন্ডলি পরিয়ে দিলেন চ্যাম্পিয়নের মেডেল। সিলেটে প্রথমবারের মতো আয়োজিত প্রতিবন্ধী কন্ঠশিল্পীদের নিয়ে ‘সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রতিবন্ধী কন্ঠশিল্পী’ প্রতিযোগিতার জমকালো গ্রান্ড ফাইনাল অনুষ্ঠিত হলো শুক্রবার সন্ধ্যায়।

সিলেট নগরীর রিকাবিবাজারস্থ কাজী নজরুল অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত গ্রান্ড ফাইনালে সুজিত সবুজ দলের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। আর লাল দল থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইসরাত জাহান শোভা। ওর গাওয়া ‘শোন শোন বাংলার মানুষ মনের দুঃখ কই’ গানটি শুনতে শুনতে অনেক দর্শককেই চোখ মুছতে দেখা গেছে। শোভা সিলেটের মেয়ে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলামের হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার আগে তারা দুজনেই জানিয়েছেন আগামীর স্বপ্নের কথা। তারা বড় শিল্পী হতে চায়। ছোটবেলা থেকে দুজনেই নানা প্রতিবন্ধকতার পাহাড় ডিঙিয়ে পরিবারের লোকজনের আন্তরিক সহযোগিতায় সঙ্গীত সাধনা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই পুরস্কার পেয়েছে তারা সিলেট বিভাগ সেরা প্রতিবন্ধী কন্ঠশিল্পীর খেতাব অর্জন করে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘ফাগুনের মোহনায়’ শীর্ষক গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের সংগঠন সিলেট বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিষ্টিক বিদ্যালয় এবং ‘চলো বাংলাদেশ লাল-সবুজ’ শীর্ষক গানের সাথে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের সংগঠন রাগীব-রাবেয়া ইনস্টিটিউট। দুটি পরিবেশনাই দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। বিশেষ করে, কথা বলতে না পারা বা কানে না শোনা শিশু-কিশোরদের অমন পারফরমেন্স জানিয়ে দিয়েছে, অবহেলার বদলে সুযোগ পেলে তারাও পারে অনেক কিছু। প্রথম পর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রতিবন্ধী সংগঠনের হাতে স্মারক তুলে দেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি এ আয়োজনের প্রশংসা করে ভবিষ্যতে সবধরণের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। গ্রীন ডিজএ্যাবলড ফাউন্ডেশনের (জিডিএফ) আয়োজনে ও বেঙ্গল এ্যাডভার্টাইজিংয়ের সহযোগিতায় এ আয়োজনের বিশেষ সহযোগিতায় ছিল সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট। সংস্কৃতিকর্মী রজত কান্তি গুপ্তের সঞ্চালনায় প্রতিযোগিতায় প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা তিমির নন্দি, সংগতি শিল্পী হিমাংশ বিশ্বাস, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরী ও কণ্ঠশিল্পী রাজিয়া সুলতানা লাভলী লস্কর। অনুষ্ঠানে সেরা বিশ প্রতিযোগির প্রত্যেককে মেডেল ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

পুরো অনুষ্ঠান ইশরা ভাষায় সঞ্চালনা করেন জেমিমা আক্তার। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানে প্রতিবন্দীদের মেধা দেখে আমিসহ দর্শকবৃন্দ মুগ্ধ। প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয়, তারা এই দেশের সম্পদ। তাদের মূলস্্েরাতধারায় নিয়ে আসতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সুযোগ ও পরিচর্যা পেলে প্রতিবন্ধীরাও যে সৃজনশীলতার যেকোন অঙ্গনে নিজেদের প্রতিভা মেলে ধরতে পারে, তাই যেনো দেখিয়ে দিলো সিলেটের শ্রেষ্ঠ প্রতিবন্ধী কন্ঠশিল্পী প্রতিযোগিতা। মেডেল প্রাপ্ত শিল্পীরা অন্তঃদৃষ্টিতে নিজেদের অর্জন উপলব্ধি করার চেষ্টা করছিলো। তারা গলায় ঝুলিয়ে দেয়া মেডেলে কোমল হাতের স্পর্শ দিয়েই যেনো দেখছিলো বর্তমান অর্জন আর আগামীর দিগন্ত প্রসারিত স্বপ্ন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ নভেম্বর ২০১৮/শাদিআচৌ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন