আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

পর্যটকদের পদভারে মুখরিত জৈন্তার লাল শাপলার বিল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১১-১৮ ১৬:২৮:৩৮

মোঃ হানিফ, জৈন্তাপুর :: সিলেটের উত্তর-পূর্ব অবস্থিত পর্যটন খ্যাত জৈন্তাপুর উপজেলা। আর এ উপজেলায় রয়েছে প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলা ভূমি মেঘালয়ের পাদদেশ ঘেরা ঝর্ণা বেষ্টিত এলাকা লাল শাপলার বিল নামে পরিচিত ডিবির হাওর, ইয়াম বিল, হরফ কাটা সহ অারও কয়েকটি বিল।

আর শীতের আগমণের সাথে সাথে প্রকৃতির অপরূপ সাজে সেজেছে লাল শাপলার ইয়াম বিল। যেন ফুলে ফুলে সাজানো আসমান জমিনে লাল গালিচায় বিছানো চাদর।

পৌরণিক ইতিহাস থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসিত ভারত উপমহাদেশের শেষ স্বাধীন রাজ্য জৈন্তাপুর। শ্রীহট্ট তথা ভারত বর্ষের অধিকাংশ এলাকা যখন মোগল সাম্রাজ্যভূক্ত ছিলো, তখনও জৈন্তিয়া তার পৃথক ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছিল। তার প্রায় ৩৫ বছর স্বাধীন রাজ্য ছিলে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাভারত ও রামায়নে জৈন্তিয়া রাজ্যের কথা উল্লেখ্য রয়েছে।

১৭৯০ সালে রাজা বিজয়সিংহের শাসনকালে জৈন্তিয়ায় খনিজ সম্পদে ভরপুর ছিল। বর্তমানেও রয়েছে। রাজা বিজয়সিংহ ১৭৭৮ সালে ঢুপী গ্রামে রামেশ্বর শিব মন্দির স্থাপন করেন। ১৮৩৫ সালের ১৬ মার্চ হ্যারি নামক ইংরেজ নাবিক রাজা রাজেন্দ্র সিংহকে কৌশলে বন্ধি করে বহু মূল্যবান সম্পদ লুট করে নেয়।

ডিবির হাওড় রাজা বিজয়সিংহের স্মৃতি বিজড়িত সমাধীস্থল সংলগ্নই লাল শাপলার বিল। এ বিলের পাড়ে বিজয়সিংহকে সমাধি করা হয়েছে। ইয়াম বিল ছাড়াও এখানে রয়েছে লাল শাপলার আরও তিনটি বিল।

বিল গুলোতে সূর্যাদয়ের সাথে সাথে ৬টা হতে ১২ পর্যন্ত লাল শাপলার সৌন্দর্য ফুটে উঠে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ফুলগুলো নিশ্চুপ নীরব হয়ে যায়। লাল শাপলার ফুটন্ত ফুল ইয়াম বিল এবং এর আশ-পাশের পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর করে তুলে। অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঘন কোয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল জেলা এবং উপজেলা থেকে দল বেধে ছুটে আসে অগনিত পর্যটক। এতে করে পর্যটকদের ঢল নামে লাল শাপলার বিলে।

ইয়াম বিলের লাল শাপলার ফুটন্ত ফুল যেন ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এখানে আরো দেখা মিলে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি ।

উল্লেখ্য যে গত বছর কিছু অসাধু ভূমি খেকুু, বিল খেকুদের কুনজর পড়ায় লাল শাপলার বিল তার শ্রী হারিয়ে ফেলে। কারণ হিসাবে দেখা যায় বিল মিহষ চড়ানো, শাপলা ফুলের মূল উত্তোলন, সময়ের আগে বিলের পানি ছেড়ে দেয়ায় এতে করে বিলের সৌন্দর্যতা নষ্ট হয়ে যায়।

স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ও প্রকৃতিপ্রেমীরা দাবি তুলেন বাংলাদেশেরর বৃহত্তম হাওরের মধ্যে অন্যতম ডিবির হাওর, হরফ কাঁটা, ইয়াম বিল ও কেন্দ্রী বিলের ইজারা বাতিল করে ও উক্ত বিল সমূহের ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বন্দোবস্ত বাতিলের দাবি জানান।

অপর দিকে বিলটিকে রক্ষার্থে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষন সংস্থা বাপা'র উদ্যোগে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মানববন্ধন পালন করে। এছাড়া ‘লাল শাপলা বাঁচাও কমিটি’ ও ‘জৈন্তিয়া পর্যটন উন্নয়ন ও সংরক্ষণ কমিটি’ বর্তমান উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মৌরীন করিম'র মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবরে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করে।

এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে স্বচিত্র সংবাদ প্রকাশ করা হয়। তাই এবছর পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে প্রাণচঞ্চল্যতা ফিরে পেয়েছে লাল শাপলার বিল ডিবির হাওর।

পর্যটকদের মতে, সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ জৈন্তাপুর সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র, রাতারগুল, বিছনাকান্দী, মায়াবন, পানতুমাই’র মায়াবী ঝর্ণা, বল্লঘাটের জমিদার বাড়ী, লালাখাল, শ্রীপুরের চা-বাগান, দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে ডিবির হাওড়ের লাল শাপলার ইয়াম বিলও স্থান দখল করে নিচ্ছে।

লাল শাপলার বিলে ভ্রমণে আসা পর্যটক দম্পতির কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, লাল শাপলার বিলের পরিবেশ অত্যান্ত মনোমুগ্ধকর। রাজা বিজয়সিংহের সমাধিস্থল, বিলের চার পাশে ঝর্ণা বেষ্টিত খাসিয়া পাহাড় এবং এস্থানটিও নিরাপদ, পাশে রয়েছে সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী'র বিজিব ক্যাম্প।

এ ধরনের পরিবেশ সত্যিই ভ্রমন পিপাসু ও পর্যটকপ্রমীদের আকর্ষিত করে। তারা আরও জানান, সরকার যদি লাল শাপলার বিল'র লিজ বাতিল করে এটাকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করে তাহলে হাজার হাজার পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে লাল শাপলা বিলের আরো প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে আসবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ নভেম্বর ২০১৮/এমএইচ/এসডি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন