আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বিয়ের আসরে বসা হলে না সিলেটের চিকিৎসক রুম্পার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১২-০৫ ০০:২৪:২৬

খলিলুর রহমান স্টালিন, ঢাকা অফিস :: ডাক্তার ছেলের সঙ্গে আকদ সম্পন্ন হয়েছে। হাতে কেবল মেহেদীর রং লাগার কথা। কিন্তু তার আগেই চলে গেলেন সিলেটের ওসমানীনগরের ভার্ড চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক আক্তার জাহান রুম্পা (২৭)। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের হালিশহরে। তার পিতার নাম আক্তারুজ্জামান। মঙ্গলবার ভোরে তেজগাঁওয়ের বিজয় সরণি মোড়ে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। পরে বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গের ভেতর রাখা হয়েছে। আর বাহিরে লাশের জন্য অপেক্ষা করছেন তার স্বজন ও সহকর্মীরা।

এ সময় কথা হয় রুহুল আমিন নামের তার এক সহকর্মীর সাথে। তিনি জানান, রুম্পা চলতি বছরের শুরুর দিকে সিলেট ওসমানীনগরের ভার্ড চক্ষু হাসপাতালে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে ঢাকাস্থ বাংলাদেশ আই হাসপাতালে চাকরির জন্য পরীক্ষা দেন। সেই পরীক্ষায় তিনি পাশও করেন। কিন্তু বাংলাদেশ আই হাসপাতালে বেতন কম হওয়ায় তিনি যোগদান করেননি।

তবে সম্প্রতি রুম্পাকে আবার বাংলাদেশ আই হাসপাতাল থেকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয় জানিয়ে রুহুল আমিন বলেন, সেই সুবাদে মঙ্গলবার তিনি ঢাকা আসেন। তবে সাক্ষাৎকারের আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।

রুম্পা খুব মিসুক চরিত্রের জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রুম্পা সব সময় হাসিখুশি থাকত। সবার সাথে মিলেমিশে চলত। গত কয়েক মাস আগে তার বিয়েও ঠিক হয়েছিল। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর সে সহকর্মীদের সাথে বিষয়টি শেয়ারও করেছিল। এই শীতে তার বিয়েও হওয়ার কথা ছিল।’

রুম্পার দেবর সাইদ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, তার ভাই চট্টগ্রামে থাকেন। চিকিৎসক হিসেবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছিলেন। এই শীতেই ভাবিকে বাসায় তুলার কথা ছিল বলেও জানান তিনি।

এক পর্যায়ে কথা হয় রুম্পার হুবু স্বামী কাজী মহসিন ফারুকের সাথে। তিনিও পেশায় ডাক্তার। বাকরুদ্ধ স্বামী জানান, মাত্র দুই মাস আগে আকদ হয়েছিল তাদের। আর কদিন পরই নববধূকে বরণ করে নিজের ঘরে তুলাবার কথা ছিলো। কিন্তু হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেলো।

এদিকে, বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল রুম্পা বড় হয়ে ডাক্তার হবে। বাবা মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণও হয়েছিল। কিন্তু বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ শেষে নিজের স্বপ্ন পূরণ করে করতে এসে রুম্পা না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

জানা গেছে, সিলেটের ওসমানীনগরের ভার্ড চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসক আক্তার জাহান রুম্পা ঢাকাস্থ বাংলাদেশ আই হাসপাতালে চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে এসেছিলেন। সোমবার রাতে এনা পরিবহনের বাসে করে সিলেট থেকে যাত্রা করে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে আসেন। সেখান থেকে সিএনজি যোগে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি। কিন্তু তেজগাঁওয়ের বিজয় সরণি মোড়ে আসা মাত্র একটি বাস ওই সিএনজি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় সিএনজি অটোরিকশা চালক ও রুম্পা আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রুম্পাকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষনা করেন।

পরবর্তীতে রুম্পার হবু স্বামী ডা. কাজী মহসিন ফারুক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আই হাসপাতালে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য ভোরে সিলেট থেকে ঢাকায় আসেন রুম্পা। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আই হাসপাতালে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় বলে পুলিশের কাছ থেকে জানতে পেরেছি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিনহাজ উদ্দিন বলেন, বিজয় সরণি এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও যাত্রীবাহী বাসের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো বাস পায়নি। এতে অটোরিকশায় থাকা রুম্পা নামের একজন নারীর মৃত্যু হয় এবং অটোরিকশা চালক আহত হয়েছেন। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া জানান, ময়না তদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, রুম্পা মাথায় আঘাত পেয়েছেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের কারণে তার মৃত্যু হয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮/ কেআরএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন