আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নয়, যাতনার সরকার: সুলতান মনসুর

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১২-১০ ২১:৩৪:৩০

শাকির আহমদ, কুলাউড়া প্রতিনিধি: ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে আয়োজিত প্রথম জনসভায় সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সেদিন ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর জন্মদিন, মৃত্যুদিনে একটা অনুষ্ঠান করে না। অথচ তারা বলে এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার। এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নয়, যাতনার সরকার।’

ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বিএনপির নেতা শওকতুল ইসলামের সভাপতিত্বে কুলাউড়া পৌর বিএনপির সভাপতি শামীম আহমদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল আলম সোহেলের সঞ্চালনায় সোমবার বিকেল তিনটার দিকে শহরের স্বাধীনতা সৌধ চত্বরের বিজয় মঞ্চে মৌলভীবাজার-২ আসনে (কুলাউড়া উপজেলা) সাবেক সাংসদ, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ (ধানের শীষ) সমর্থনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১০ বছর জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতিতে তাকে নিষ্ক্রিয় রাখার ভূমিকা টেনে বলেন, আমি যদি প্রতি ঘণ্টায় দুইজন মানুষের জন্য কাজ করে যেতে পারতাম তাহলে এতদিনে একলক্ষ বাহাত্তর হাজার মানুষের সেবা করতে পারতাম। মানুষ আমার সেবা বঞ্চিত হয়েছে। সেবা দেওয়া থেকে বঞ্চিত কে করেছে, কারা করেছে?

এই কুলাউড়ায় আমি যখন আওয়ামী লীগ করতাম ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৃণমূল থেকে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে আমাকে মনোনীত করেছিল। কিন্তু সেসময় এক অদৃশ্য শক্তি এবং দেশে যারা লোটপাট করছে, গোষ্ঠিতন্ত্র ও ব্যাক্তিতন্ত্র যারা কায়েম করতে চায় তারাই দেশের মানুষকে আমার সেবা থেকে বঞ্চিত রেখেছে।

সভায় সুলতান মনসুর বলেন আচরণবিধির সীমাবদ্ধতার নামে মানুষে ভাষা বন্ধ রাখার যে অপচেষ্টা হচ্ছে সেই বাধ একদিন জনতার জোয়ারে ভেসে যাবে। জাতির ক্রান্তিকালে এই ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। ২০১৪ সালে এই দেশে একটা সার্কাস মার্কা ভোট ছাড়া নির্বাচন হয়েছিলো। গত ৪ বছর এই দেশ  সার্কাস মার্কা ভোটরবিহীন সরকার মাধ্যমে চলছে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘটনা ঘটেনি। এভাবে একটি কুচক্রিমহল এই দেশটাকে দখল করে আছে। এর বিরোদ্ধে মূলত আমাদের ভূমিকা রাখতে হয়েছে। তাই একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হয়েও, মুক্তিযুদ্ধের রণহুঙ্কার জাতীয় শ্লোগান জয় বাংলা বলেও এই জাতীয় শ্লোগান দিয়ে আমরা ড. কামাল হোসেনের নের্তৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আগে আমি সভায় বলেছি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছিলেন। আপনার যদি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকে তাহলে মাত্র দুই কোটি টাকার জন্য খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাগারে রেখেছেন তা থেকে পরিত্রাণ নিন কারণ এটা অমানবিক, আপনি সেটা শুনছেনা। শুনবেন যখন আপনি পেছন ফিরে তাকাবেন সেদিন দেখবেন আর কোন লোক নেই। এখন পরিবেশ সৃষ্টি করে অনেক কিছু করছের, প্রশাসনের ভাইদের বাধ্য করছেন। এটা একটা সরকারী লীগ, এটা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নয়। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজ উদ্দিন আহমদের আওয়ামী লীগ নয়। এটা লুটপাটের লীগ।

তিনি আরো বলেন, যেখানে দুই কোটি টাকার জন্য সাবেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে। অথচ ব্যাংক লুট, শেয়ার মার্কেটসহ হাজার হাজার কোটি টাকা যে পাচার করেছে এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপী আমি নাম বলতে চাইনা লোকে যাকে দেরবেশ বলে সেই বাংলার দরবেশকে ঢাকার একটি আসনে সরকারিলীগের (আওয়ামী লীগের) মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দেশ জুড়ে দুর্নীতি আর কালো বাজারীতে ভরপুর। এখন শুনি টাকা দিয়ে মার্কা কেনা হয়। আমি টাকা দিয়ে মার্কা কিনি না। এখন নাকি টাকা ছাড়া কিছু হয়না। বাংলাদেশে যতদিন বেঁচে থাকবো ঘুষ না দিয়ে আর ঘুষ না খেয়ে কতদূর যওিয়া যায় আমি দেখবো কারণ আমরা বঙ্গবন্ধুর কর্মী, মুক্তিসংগ্রামের কর্মী।

তিনি বলেন, যে বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানানোর কথা বলেছিলো, যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করেছিলো তারাই এখন এই সরকারের মন্ত্রী। দেশকে বাঁচাতে হলে এই দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এ সরকারের পরিবর্তন প্রয়োজন। আমি ১৩টি ইউনিয়নে যাবো, মতবিনিময় করবো। আমি রাজনীতিকে ঈমানের অংশ হিসেবে নিয়েছিলাম, বিশ্বাসের অংশ হিসেবে অংশ নিয়েছিলাম, আমি সত্যের পথে অটল থাকবো। নিজের খাইয়া, ধানের ছড়া, এক সময়ের আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাপ এর মার্কা ছিলো, এর পরবর্তীতে এই মার্কা হয়েছিলো বিএনপির। এখন এই মার্কা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মার্কা।

এই দেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, মুসলমানসহ সকল সম্প্রদায়ের দেশ। এই দেশ কোন একক দলের বা গোষ্ঠীর দেশ নয়। এই দেশ সকলের।

বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, খালেদা জিয়া স্বসম্মানে মুক্তি পাবেন। এই ঐক্যফ্রন্ট কোনো দল নয়। এই ফ্রন্টে অনেক দল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখেছেন এমন ব্যক্তি রয়েছেন। তাই সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে হবে। এখান থেকে গিয়ে আপনারা গ্রামে গঞ্জের মা-বোনদের পরিচয় করিয়ে দিবেন এই ধানের ছড়া মার্কা, উনাদেরকে আমার সালাম-আদাব পৌঁছাবেন। আমরা টাকা দিয়ে যেমন মার্কা কিনি নাই, আমরা কালো টাকা দিয়ে ভোটারদের ভোট কিনি না। আপনারা সবাই ধানের ছড়াকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবেন।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, ধানের ছড়া জিন্দাবাদ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জিন্দাবাদ’ এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবো এই প্রতিজ্ঞা করছি।

এ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক সাংসদ নওয়াব আলী আব্বাস খান, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাড. মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রমুখ। এ ছাড়াও বিএনপিসহ এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন।

সভায় কুলাউড়ায় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কুলাউড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র কামাল উদ্দিন আহমদ আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর কুলাউড়ায় আমরা (বিএনপি) এ রকম সমাবেশে বক্তব্য দিতে পারিনি। প্রশাসনের নানা বাধা ছিল।’

সভায় সাবেক সাংসদ নওয়াব আলী আব্বাস খান বলেন, ‘মৌলভীবাজার-২ আসনে আওয়ামী লীগের ১১ জন নেতা মনোনয়ন কিনেছিলেন। কেউ দলের মনোনয়ন পেলেন না। অথচ, ঐতিহ্যবাহী এই দলের প্রতীক বাজারে নিলাম হয়ে গেল।’
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১০ ডিসেম্বর ২০১৮/ এসএ/ কেআরএস

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন