আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

ঐক্যফ্রন্টে উজ্জ্বিবিত সিলেট বিএনপি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১২-১৪ ০০:২৪:১৪

মারুফ খান মুন্না :: সিলেট-১ আসনকে বলা হয় সরকার গঠনের নিয়ামক। মর্যাদাপূর্ণ এ আসনে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করে সেই দলই জাতীয় সংসদে সরকার গঠন করে- স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে এরকম একটি মিথ প্রচলিত আছে। আর তাই মর্যাদাপূর্ণ এই আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা অন্য যেকোন দলের একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী নিজ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকেন।

এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একাধিক প্রার্থী থেকে আওয়ামী লীগ ড. আব্দুল মোমেনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলেও বিএনপিতে প্রাথমিকভাবে দুইজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আর এতেই সিলেট বিএনপিতে নির্বাচন নিয়ে কিছুটা ঘোলাটে পরিস্থিতি শুরু হয়। তবে শেষপর্যন্ত বিএনপি আস্থা রাখে ‘মাঠের প্রার্থী’ খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের উপরই।
এবারে আওয়ামী লীগ থেকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ছোটভাই ড. আব্দুল মোমেনকে মনোনয়ন দেন আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সিলেট-১ এ তার মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথেই তারপক্ষে অন্যসব মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রচারণায় নামেন। অন্যদিকে, সিলেট-১ আসনে বিএনপিতে প্রাথমিকভাবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী ও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির দুই জনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। আর এতে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। সিলেট-১ আসনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরীকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দিতে দলের হাইকমান্ডের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন নেতা। তবে বিএনপির হাইকমান্ড দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়। আরিফুল হক চৌধুরী কেন্দ্রে ইনাম আহমদ চৌধুরীর পক্ষে চিঠি দেয়ায় মুক্তাদিরের সাথে তার দূরত্বটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

দূরত্বটা এতোটা স্পষ্ট হয়েছিলো যে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার পরও তার পক্ষে মাঠে নামেননি সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। দূরত্ব কমাতে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির সিটি মেয়র আরিফের অফিসে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তবে এতেও মন গলেনি আরিফের। পরবর্তীতে বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আরিফের কুমারপাড়াস্থ বাসভবনে যান তিনি। সেখানে উভয় নেতা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। আলাপচারিতা শেষে মেয়র আরিফের বাসার সামনে দু’জনে হাত তুলে উপস্থিত নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

বুধবার বিকেলের দিকে শাহজালাল মাজারে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের পথসভায় দেখা যায়নি আরিফুল হক চৌধুরীকে। তবে বিএনপি সুত্রে জানা গেছে, ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে বৃহস্পতিবার সকালেই নেতৃবৃন্দদেরকে নিয়ে মুক্তাদিরের পক্ষে মাঠে নামেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপির রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, খন্দকার মুক্তাদিরের সাথে আরিফুল হকের সম্পর্কে ঐক্য এলে সিলেট-১ আসনে বিএনপির জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে ঐক্যফ্রন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এক সপ্তাহ আগেও যেখানে মনে হয়েছিলো সিলেট বিএনপিতে কোন্দল সেখানে গত বুধবার ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দের সিলেট আগমন, পথসভা, গণ-সংযোগের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর অনেকটা চাঙ্গাভাব সিলেট বিএনপিতে। ঐক্যফ্রন্টেই যেনো উজ্জ্বিবিত হয়ে উঠেছেন সিলেট বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে সিলেট-১ আসনের ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত বিএনপির দলীয় প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির সিলেটভিউকে জানান, সিলেট বিএনপিতে কখনো বিভক্তি ছিলো না। সিলেট বিএনপি সবসময় ঐক্যবদ্ধ। গত সিটি নির্বাচনে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, এখনো ঐক্যবদ্ধ আছি। তিনি জানান, সিলেট বিএনপির আভ্যন্তরীন কিছু কৌশল রয়েছে, তবে নেতাকর্মীরা সবসময় ঐক্যবদ্ধ আছে।

তিনি অভিযোগ করেন বর্তমান সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করে একটি সাজানো নির্বাচন করার পায়তারা করছে। তাদের আছে প্রশাসনের ক্ষমতা আর আমার আছেন উপরে আল্লাহতায়ালা আর আমার সাথে আছে জনসমর্থন।

উল্লেখ্য, বুধবার বিকাল চারটার দিকে সিলেট এসে পৌছান কাদের সিদ্দিকী, কামাল হোসেন, জাফরুল্লাহ,নজরুল ইসলাম খানসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সিলেট শাহ জালাল মাজার জিয়ারত শেষে ঐ এলাকায় সিলেট-১ আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী খন্দকার মুক্তাদিরের সমর্থনে গণসংযোগ ও পথসভা করেন ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় পর্যায়ের সকল নেতৃবৃন্দ। এর আগে গত ২৪ অক্টোবর সিলেট থেকেই নির্বাচনী যাত্রা শুরু করেছিলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ ডিসেম্বর ২০১৮/এমকে-এম

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন