আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং

পাঁচ মন্ত্রীর কাছে দশ প্রত্যাশা সিলেটবাসীর

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-১১ ১১:১৫:২৩

শাহ্ দিদার আলম নবেল :: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেট সফরে এসে এ অঞ্চলের উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার গঠনের পর কথা রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সিলেটবাসী পেয়েছিল অর্থ ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। একইসাথে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পান সিলেট বিভাগের এক সাংসদ। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজরদারি ও তিন মন্ত্রীর চেষ্টায় সিলেট বিভাগে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, অনেক উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে বাস্তবায়নাধীন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন মন্ত্রিসভায় সিলেট থেকে ঠাঁই পেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রিসভায় সিলেট বিভাগের প্রতিনিধিত্ব বাড়ায় উন্নয়ন নিয়ে বেড়েছে সিলেটবাসীর প্রত্যাশাও। পাঁচ মন্ত্রীর হাত ধরে আগামী পাঁচ বছরে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে দশটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন চান সিলেটবাসী।

জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব ছেড়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে দেশে ফিরে সিলেটবাসীকে অনেক মেগা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন নবগঠিত মন্ত্রিসভার পরররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তাঁর কাছে সিলেটবাসীর সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রত্যাশার মধ্যে রয়েছে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ। মোমেনের নির্বাচনী প্রচারণায়ও যুক্ত ছিল এই প্রতিশ্রুতি। এ মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত হলে যোগাযোগব্যবস্থার নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে। মোমেন ও অন্যান্য সিলেটি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের হাত ধরে বহুল প্রত্যাশিত এই উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সিলেটবাসী।

সিলেট-৪ আসনভুক্ত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে আইসিটি পার্ক। প্রায় ১৬৩ একর জমির ওপর এ পার্কের কাজ কিছুটা ঢিমেতালে চলছে। এটি যাত্রা শুরু করলে এখানে প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থার হওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেটবাসীর দাবি, এই আইসিটি পার্কের কাজ দ্রুত সম্পাদন করে এটি চালু করা হোক। তাহলে বৃহত্তর সিলেটের আইসিটি সংশ্লিষ্টরা এখানে কাজের সুযোগ পাবেন, আসবে প্রবাসী বিনিয়োগও। সিলেট-৪ আসনের সাংসদ ইমরান আহমদ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় এ বিষয়ে তিনি কার্যকর ভূমিকা রাখবেন এমন প্রত্যাশা করছেন সিলেটের মানুষ।

সিলেটে স্পেশাল ইকোনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি। এখানে ইকোনোমিক জোন হলে ভারতের সেভেন সিস্টার্সে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার আরো সম্প্রসারিত করার সুযোগ থাকবে। সরকার এখানে ‘শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক জোন’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলেও তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশা করছেন, সিলেট অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরো গতিশীল করতে ইকোনোমিক জোন দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।

বর্তমানে সিলেট অঞ্চলের একমাত্র বিমানবন্দর ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সিলেটের লাখ লাখ প্রবাসী এ বিমানবন্দর দিয়েই যাতায়াত করেন। এজন্য বিমানবন্দরটির আধুনিকায়ন করে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নীত করা এবং এখান থেকে সরাসরি ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি এ অঞ্চলের মানুষের। এছাড়া প্রবাসীদের দাবি, ওসমানীতে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রশাসনিক কাজ সহজ করতে এখানে প্রবাসী হেল্ড ডেস্ক চালুর দাবি তাদের। এসব বিষয়ে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ভূমিকা রাখবেন বলে প্রত্যাশা সিলেটবাসীর।

সিলেটের প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। এজন্য তারা বিনিয়োগে বিশেষ কর রেয়াত সুবিধা চান। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন বলে তাদের প্রত্যাশা। সিলেট বিভাগ পর্যটনের বিশ্বজুড়ে খ্যাত। এজন্য এ অঞ্চলের মানুষ এখানকার পর্যটনের উন্নয়নে প্যাকেজ প্রকল্প চান। পর্যটনকে এগিয়ে নিতে এখানকার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও তাদের দাবি। একইসাথে সিলেট অঞ্চলের পর্যটনের পরিবেশকে বিনষ্ট করছে একটি চক্র, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি মানুষের।

রেলওয়ে এখনো সিলেট অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের অন্যতম ভরসা। এজন্য রেলের উন্নয়ন, নতুন বগি সংযুক্ত করা, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে অত্যাধুনিক এক্সপ্রেস ট্রেনের ব্যবস্থা করার দাবি এখানকার মানুষের। সম্প্রতি সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে প্রত্যাশা করছেন সর্বস্তরের মানুষ।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে আবাসন ও শিল্পখাতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। গ্যাস সংযোগ চালু করতে এ অঞ্চলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ চান সিলেটবাসী।

এ প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, ‘সিলেটের পাঁচ সাংসদ পাঁচটি মন্ত্রণালয়ে আছেন। তাঁরা জনপ্রত্যাশা অনুধাবন করেই কাজ করবেন, ভূমিকা রাখবেন বলে আমরা মনে করছি।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১১ জানুয়ারি ২০১৯/ শাদিআচৌ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন