আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

গোলাপগঞ্জের বাঘায় বেড়ী বাঁধ না থাকায় কৃষকদের স্বপ্ন ধুলিস্মাৎ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-১১ ১৬:২৮:৫৬

এনামুল হক এনাম,গোলাপগঞ্জ :: গোলাপগঞ্জ উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত ছোট-বড় নদী, খাল-বিল, ডোবা-নালাসহ বিচিত্র আকৃতির গভীর-অগভীর জলাশয়ের সমন্বয়ে গঠিত নিম্নাঞ্চল হাওর জনপদ নামে পরিচিত।

উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের বাঘা হাওর এবং বাদেপাশা, শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের হাকালুকি হাওরের এক ফসলী জমিতে বোরো ধান চাষ করে বেড়ী বাঁধের কারণে কৃষকদের প্রতিবছর হতাশায় থাকতে হয়। প্রায় প্রতি বছরই বানের জলে ফসল ভেসে যাওয়ায় বা আগাম বর্ষণে তলিয়ে যাওয়ায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের আবাসস্থল হাওর জনপদ হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।

ধুলিস্মাৎ হয়ে যায় মানুষের স্বপ্ন। সেই সাথে কয়েক হাজার মানুষ হয়ে পড়ে কর্মহীন, প্রকট হয় খাদ্য সংকট। শুধু মনুষ্যখাদ্য নয়, গো-খাদ্য সংকটে পড়তে হয় বানভাসি মানুষকে। তাই এ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রয়োজন বেড়ী বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কার। উপজেলার সচেতন মহল মনে করেন, ফসল সুরক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে হাওর জনপদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। এবং সদিচ্ছা থাকলে এখনই এই বেড়ী বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারের মাধ্যমে কয়েক হাজার ফসলী জমির বোরো ধান রক্ষা সম্ভব হবে।

হাওর জনপদের অর্থনৈতিক প্রাণ হচ্ছে বোরো ধান। চৈত্রের শেষে কিংবা বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয়ে বৈশাখ মাস জুড়ে চলে বোরো ধান কাটার উৎসব। সত্যি বলতে চৈত্র-বৈশাখে প্রাণ ফিরে পায় হাওর। এসময় রূপালি মাছ আর সোনালি বোরো ধানে কৃষকের উঠোন যেমন ভরে ওঠে, তেমনি তাজা ঘাসপাতার বদৌলতে গবাদিপশুও হয়ে ওঠে বলীয়ান। কিন্তু প্রতি বছরই হাওরের উর্বর ভূমির সোনালি ফসল কৃষকের গোলায় ওঠে না।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্ষায় উজানের ঢলের সঙ্গে পলি, বালি নেমে নদী, খাল-বিল, কৃষিজমি ভরাট হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে মাছের অভয়াশ্রম। তা ছাড়া হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে যথাযথ পরিকল্পনার অভাব এবং অনিয়মের কারণে বন্যা বা অতিবৃষ্টিতে সংশ্নিষ্ট বাঁধগুলো কাঙ্খিত ভ‚মিকা রাখতে পারে না। ফলে আগাম বর্ষা কিংবা উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওরের কয়েক হাজার হেক্টর জমির কাঁচা বা আধাপাকা বোরো ধান তলিয়ে যাওয়া এখন প্রায় নিত্য বছরের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগাম বর্ষা আর পাহাড়ি ঢলে বাঘা ও হাকালুকি হাওরের প্রায় ৭৫ শতাংশ ফসল পানিতে তলিয়ে যায়।

অফুরান প্রাণ বৈচিত্র্যের ভান্ডার এই জনপদে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। ধান ও মাছ চাষ, প্রাকৃতিক জলাশয়ে মৎস্য শিকার এবং পশুপালন এই জনপদের মানুষের প্রধান পেশা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত প্রতিবছর বেড়ী বাঁধের কারণে কয়েক হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান বানের পানিতে তলিয়ে যায়। বানভাসি মানুষ তাই বাধ্য হয় নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে তাদের ফসলি জমি কিংবা শেষ সম্বল গবাদিপশু। অথচ পশু পালন হাওর জনপদের বিপুল সংখ্যক মানুষের মূল পেশা। এভাবেই বানে ভেসে যাওয়া ফসলের সঙ্গে হারিয়ে যায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের স্বপ্ন।

শরীফগঞ্জ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এম এ মুমিত হীরা জানান, হাকালুকি হাওরে বেড়ী বাঁধ না থাকায় প্রতি বছর কৃষকের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। খরস্রোতা কুশিয়ারা, মনু, সুনাই নদী সহ একাধিক খাল, বিল নালার পানি একটু বৃষ্টিতে একাকার হয়ে হাকালকি হাওরের পানি থৈথৈ করে। তাছাড়া উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে চারিদিক প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি হাওর জনপদের বোরো ধান তলিয়ে যায়। এ থেকে রক্ষা কল্পে বেড়ী বাঁধ অতিব জরুরী হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ ব্যাপারে  কোন উদ্যোগই চোখে পড়েনা। হাওরে বেড়ী বাঁধ হলে কয়েক হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান কৃষকের গোলায় তোলা যেমন সম্ভব হবে, তেমনী হাওরাঞ্চলে প্রাণ ফিরে পাবে।

বাঘা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ছানা মিয়া বলেন, বাঘা হাওরে অপরিকল্পিত বেড়ী বাঁধের কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমান বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে যায়। তাছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাজ করার ফলে পানির স্রোতে বেড়ী বাঁধ ধ্বংস হওয়ার সাথে কৃষকরা ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন বার বার। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কোন মাথা ব্যথা নেই। ফলে বোরো চাষীরা দিন দিন নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।

এব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট জেলা কর্মকর্তা মোহম্মদ সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হাওর জনপদের বেড়ীবাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তবে এগুলো তদারকি করছে জীববৈচিত্র সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এখানে আমাদের কোন কাজ নেই। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর হাওরের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১১ জানুয়ারি ২০১৯/এএইচএ/এসডি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন