আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে সিলেট সিক্সার্সের স্বস্তির জয়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-১৬ ২২:৪২:৫৪

লিটন-ওয়ার্নারের জুটিতেই জয়ের ভিত গড়ে সিলেট সিক্সার্স।

রফিকুল ইসলাম কামাল, স্টেডিয়াম থেকে :: রাইলে রুশোর লেগ স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলে বুনো উল্লাসে মাতলেন তাসকিন। পাখির ডানার মতো দু’হাত মেলে যেন উড়তে চাইলেন আকাশে! চাইবেনই না কেন? রংপুর রাইডার্সের আশার সলতে জ্বালিয়ে রাখা রুশোর বিদায়ে যে সিলেট সিক্সার্সের জয়ের পালে হাওয়া দিয়ে যায়! সেই হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে জয়ের বন্দরে নিরাপদেই অবতরণ করে ডেভিড ওয়ার্নারের দল।

বিপিএলে কাল মঙ্গলবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ৬৮ রানে অলআউট হয়ে সিলেট সিক্সার্স হেরেছিল ৮ উইকেটে। ওই ধ্বংসস্তূপ থেকেই যেন ফিনিক্স পাখির মতো আজ জেগে ওঠলেন লিটন-ওয়ার্নাররা। তাতেই রংপুরের বিপক্ষে ২৭ রানের স্বস্তির জয়ে বিপিএলে আশার সলতে জ্বালিয়ে রাখলো সিলেট। পাঁচ ম্যাচে দুই জয়ে পয়েন্ট তালিকায় তাদের অবস্থান এখন ছয়ে। ছয় ম্যাচে চতুর্থ হারে পঞ্চম স্থানে আছে রংপুর। রংপুরের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেললেও নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় সিলেটের অবস্থান ছয়ে।

লক্ষ্য ১৮৭। এই বড় লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে শুরুটা যেমন হওয়া প্রয়োজন, রংপুর রাইডার্সের হলো ঠিক উল্টোটা। দলের স্কোর ১১ রানে রেখে একে একে বিদায় নেন মেহেদি মারুফ, অ্যালেক্স হেলস আর ক্রিস গেইল।

আগের দুই ম্যাচে হেলসের রান ছিল ০ ও ১৫। আজ ফের শূন্যতে আটকে যান মেহেদি হাসান রানার করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে। ওই ওভারেই দুই বল আগে মেহেদি মারুফকে (৩) তুলে নিয়েছিলেন রানা।

বিপিএলটা এবার মোটেও ভালো যাচ্ছে না উইন্ডিজ তারকা গেইলের। আগের তিন ম্যাচে করেছিলেন ১, ৮ ও ২৩ রান। আজ ৭ রানেই শেষ; সোহেলর তানভীরের বলে কাট করতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় রংপুর। রুশো আর মোহাম্মদ মিথুনের দারুণ ব্যাটিংয়ে জয়ের স্বপ্ন জেগে ওঠে রংপুরের শিবিরে। চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটাচ্ছিলেন রুশো। আফিফ হোসেন ধ্রুবর করা একমাত্র ও ইনিংসের পঞ্চম ওভারে দুই ছয় আর এক চারে তুলে নিয়েছিলেন ২২ রান। পরের ওভারে রানার বলকে দুবার সীমানাছাড়া, একবার গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন। ‘রুশো ঝড়’ থামে ইনিংসের দ্বাদশ ওভারের চতুর্থ বলে, রংপুরের স্কোরে যখন ঠিক ১০০ রান। তাসকিনের কিছুটা অ্যাঙ্গেলে নিচু হয়ে আসা বলে লেগ স্ট্যাম্প উপড়ে যায় রুশোর। তার ৩২ বলে ৫৮ রানের ইনিংসে ছিল ৪টি ছয়, ৩টি চার।

এক ওভার পর তাসকিনের বলেই ফিরে যান মিথুনও (২৯ বলে ৫টি চারে ৩৫)। রুশোর বিদায়ে পর উইকেটে আসা মাশরাফি চেষ্টা করেছেন। তবে তার ২৭ বলে ৪টি চারে ৩৩ রানের ইনিংস রংপুরকে জয়ের পথ দেখাতে যথেষ্ট ছিল না।

৬ উইকেটে ১৬০ রানে শেষ হয় রংপুরের ইনিংস। সিলেট সিক্সার্স জয় পায় ২৭ রানের ব্যবধানে।

সিক্সার্সের বোলিংয়ে উজ্জ্বল ছিলেন সন্দ্বীপ লামিচানে (৪ ওভারে ১৮ রানে ১ উইকেট), সোহেল তানভীর (৪ ওভারে ২২ রানে ১ উইকেট), তাসকিন (৪ ওভারে ৩৪ রানে ২ উইকেট)। ২টি উইকেট পেলেও ৪ ওভারে ৪০ রান দেন রানা।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল সিলেট সিক্সার্স। লিটন দাস আর ডেভিড ওয়ার্নারের বিধ্বংসী ব্যাটিং রানপাহাড়ে চড়ে তারা। আগের চার ইনিংসে লিটনের রান ছিল টেলিফোন ডিজিটের মতো- ১, ০, ৯, ৬। সেই লিটন আজ খেললেন ৪৩ বলে ৭০ রানের দারুণ এক ইনিংস।

আজ ইনিংসের শুরুতেই খানিকটা বিস্ময় উপহার দেয় সিলেট। ওয়ার্নারের বদলে এবারের বিপিএলে আগের ম্যাচগুলোতে ব্যর্থ লিটন দাস আর সাব্বির রহমান এলেন ওপেনিংয়ে। দুজনের জুটিও হলো দুর্দান্ত। প্রথম ওভার থেকেই তেড়েফুড়ে খেলতে লাগলেন দুজনে। ৫ ওভার ৩ বলেই স্কোরবোর্ডে রান ওঠে পঞ্চাশ। সাব্বির কিছুটা স্থির হলেও লিটনের ব্যাটে ছিল তাণ্ডব। ২৯ বলেই অর্ধশতক তুলে নেন লিটন। নবম ওভারে ২০ বলে ২০ রান করা সাব্বির বেনি হাওয়েলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান। সিলেট সিক্সার্সের রান তখন ৭৩।

লিটনের সাথে উইকেটে এসে ওয়ার্নারও মেতে ওঠেন রান উৎসবে। মাশরাফির এক ওভারে চার বলের মধ্যে ওয়ার্নার হাঁকান ২টি চার, একটি ছয়। ওই ওভারে ১৯ রান দেয়া মাশরাফি আগের দুই ওভারে দিয়েছিলেন ১০ ও ১৪ রান। তিন ওভারে ৪৩ রান খরচ করে আর বিপিএলে নিজের সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন রংপুরের অধিনায়ক।

লিটন-ওয়ার্নারের ৩৬ বলে ৫৬ রানের জুটি ভাঙে লিটনের বিদায়ে। রান আউট হয়ে ফেরার আগে ৪৩ বলে ৯টি চার আর একটি ছয়ে ৭০ রান আসে লিটনের ব্যাট থেকে। উইকেটে এসে নিকোলাস পুরানও ছিলেন ধ্বংসাত্মক, তবে শফিউলের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান দ্রুতই। তার ১৬ বলে ২৬ রানের ইনিংসে ছিল ৩টি চার, একটি ছয়।

ইনিংসের উনিশতম ওভারে বাঁহাতি ওয়ার্নার হয়ে যায় ডানহাতি! গেইল তখন বোলিংয়ে। প্রথম বলে ২ রান নেয়ার পর পরের দুই বল ডট। বিরক্ত ওয়ার্নার চতুর্থ বলে এসে ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের মতোই গার্ড নেন। ওই বলেই বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছয়! পরের দুই বলে দুই বাউন্ডারি! শেষপর্যন্ত ৬টি চার ২টি ছয়ে ৩৬ বলে ৬১ রানে অপরাজিত থাকা ওয়ার্নারের তার সেই পুরনো বিধ্বংসী রূপেই দেখা গেছে এদিন। এটি টুর্নামেন্টে ওয়ার্নারের দ্বিতীয় অর্ধশতক।

৫ উইকেট হারিয়ে ১৮৭ রান তুলে সিলেট সিক্সার্স। এবার বিপিএলে এটাই তাদের সর্বোচ্চ ইনিংস।

সাত বোলার ব্যবহার করেও লিটন-ওয়ার্নারদের ব্যাটিং তাণ্ডব রুখতে পারেননি মাশরাফি। এর মধ্যে উজ্জ্বল ছিলেন শফিউল ইসলাম। ৪ ওভারে ৩১ রানের খরচায় নিয়েছেন ৩ উইকেট। হাওয়েল ৩ ওভারে ২২ রানে পেয়েছেন এক উইকেট। ২ ওভারে ৯ রান দিলেও পরে আর ফরহাদ রেজাকে আনেননি রংপুরের অধিনায়ক।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৬ জানুয়ারি ২০১৯/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন