আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

মুহিতের একা ফেরা নিয়ে ফেসবুকে ‘ঝড়’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-১৯ ০০:২৯:৪৪

মন্ত্রী থাকাবস্থায় বিমানবন্দরে ভীড়, সাবেক হতেই একা সিলেট ফিরলেন মুহিত

মারুফ খান মুন্না :: ‘সুসময়ে বন্ধু বটে অনেকেই হয়, অসময়ে হায় হায় কেউ কারো নয়’- প্রবাদ বাক্যটি যেনো হাড়ে হাড়ে সত্য হলো সদ্যবিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের জন্য। গেলো মন্ত্রীসভার হেভিওয়েট অর্থমন্ত্রী মুহিত সুসময়ের কোকিলদের খুজে পাননি ক্ষমতা ছাড়ার সাথে সাথেই। তাকে দিয়ে আর ‘ফায়দা হাসিল’ সম্ভব নয় দেখে সুবিধাভোগীরা তাকে ভূলে খুজছেন নতুন ঠিকানা। ক্ষমতা ছাড়ার পর শুক্রবারের তার প্রথম ‘একা একা’ সিলেট ফেরা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।

শুক্রবার বেলা ১টা ৫০ মিনিটের সময় নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে সিলেট আসেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিমান থেকে নেমে হুইল চেয়ারে করে তাকে নিয়ে আসা হয় ভিআইপি লাউঞ্জে। কয়েক দিন আগেও যেখানে তাকে ঘিরে নেতাকর্মীদের জটলা লেগেই থাকতো, ভিআইপি লাউঞ্জে পড়ে যেত হুড়োহুড়ি-ধাক্কাধাক্কি। গলা ফাটানো স্লোগানে স্লোগানে মূখর হয়ে ওঠতো সিলেট বিমানবন্দর এলাকা। মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়ে সাবেক হতে না হতেই সেই বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে নেই কোন জটলা। মোটর সাইকেলের শোভাযাত্রা নেই, নেই সেই গগন বিদারী স্লোগান।

শোভাযাত্রা, স্লোগান, জটলাতো দূরে থাক বায়োজ্যেষ্ঠ মুহিতের হুইল চেয়ারে ধরার মতোও ছিল না কেউ। সাবেক এপিএস জনিকে নিয়ে একা একাই ওসমানী বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। আর এ নিয়ে সিলেটসহ সারাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠেছে।

শুক্রবার সিলেটের আওয়ামী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক অধিকাংশ ব্যক্তিদের পোষ্ট, কমেন্ট ও স্ট্যাটাস জুড়ে ছিলো এই বিষয়টি। কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে চাটুকার, সুবিধাভোগীদের ধিক্কার জানাচ্ছেন, কেউবা লিখছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আসবেন এই খবরটা আগে থেকে জানানো হয়নি কেন?, কেউবা মুহিতকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন উনার কৃতকর্মের ফল।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম পুতুল সিলেটভিউর একটি নিউজ ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করে লিখেন, ‘আজ যখন সিলেটের মাটিতে সাবেক অর্থমন্ত্রী পা রাখেন তখন উনার চোখে পরেনি অনেক চিরচেনা মুখগুলো, অনেকটা হতাশ দেখাচ্ছিল উনাকে। যাদেরকে ‘কাছের মানুষ’ হিসেবে জানতেন তাদের মুখোশের অন্তরালের চেহারাটা হয়তো তখন ভাসছিল উনার মনোচোখে। ধিক্কার জানাই এই সুবিধাভোগীদের প্রতি।’

সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার অর্থমন্ত্রীকে সফল উল্লেখ করে লিখেছেন এতোদিন বিমানবন্দরে উনাকে রিসিভ করতে ‘সংবর্ধনা লীগ’ নামে একটি সংগঠন ছিলো। তাদের সাংগঠনিক পরিচয় ছিল শুধু বিমান বন্দরে কেউ আসলে সংবর্ধনা দেওয়া! তারা আজ কোথায় ছিল? ধিক্কার জানাই এই সব মানুষ রুপি অমানুষদের।

১৭ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি শহীদূল ইসলাম সৌমিক তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘একটা সময় ছিল যখন সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল, ঠিক সেই সময়টাতে অনেক শক্ত হাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা শুধু সচল রাখেননি বরং বিপুল অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন তিনি আমাদের অর্থমন্ত্রী। আজ আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে হাটার পথ মসৃণ করতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে যার অবদান অতুলনীয় আমরা সেই সব কথাগুলো ভুলে শুধু মনে রেখেছি রাবিশ, বাস্টার্ড ইত্যাদি। মনে রাখবেন যারা ভালো লোক তারা যা বলে সরাসরি বলে। আজ আমরা বিবেকহীনের মত ভুলে গেলাম জাতির সূর্য সন্তানকে, যিনি বয়সের কথা না ভেবে দিনরাত সিলেটবাসীসহ সমগ্র বাংলাদেশের কথা ভেবেছেন। ধিক্ষার জানাই সেই সব কোকিলদের যারা একসময় উনার পায়ের ধারে বসে থাকতেন নিজেস্ব ফায়দা হাসিল করার জন্য। আমাদের ক্ষমা করে দিবেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী জননেতা জনাব আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাহেব, আমরা আপনাকে যথেষ্ট সম্মান দিতে পারি নাই। ’

সুজন রায় নামে এক ব্যক্তি কমেন্টে লিখেন, ‘সুবিধাভোগী, চাটূকাররা এবার তার ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পেছনে ঘুরবে, সংবর্ধনা দিবে। আবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে আরেক নতুন নেতা খুজে নিবে।’

তুহিন আহমেদ চৌধুরী নামে একজন লিখেন, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সবাই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ক্ষমতা শেষ হলে সব শেষ। যার প্রমাণ আজকে...।

রনি চৌধুরী নামে একজন লিখেন, বাস্তবতা হেরে যাওয়া মানুষের পাশে কেউ হাঁটতে চায় না। বাংলাদেশের গর্ব সফল একজন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনা বা নেতিবাচক পোস্ট-কমেন্ট কম পড়েনি। অনেকেই লিখেছেন তিনি মন্ত্রী থাকাবস্থায় সিলেটের জন্য কি এমন করেছেন। অনেকেই লিখেছেন, এটা দেখে বর্তমান মন্ত্রীদেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত। উনি মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে দু-একজন ছাড়া কাউকে ভীড়তে দেননি। কেউবা লিখেছেন মন্ত্রী থাকাবস্থায় জনস্মপৃক্ততা ছিলনা- এরকম আরো অনেক নেতিবাচক কমেন্ট।

উল্লেখ্য, আবুল মাল আবদুল মুহিত (সাবেক অর্থমন্ত্রী) আজ শুক্রবার সিলেট ফিরেন। এসময় বাফুফের কার্যনির্বাহী সদস্য ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি তখন তার হুইল চেয়ারে ধরার মতোও ছিল না কেউ। সাবেক এপিএস জনিকে নিয়ে একা একাই ওসমানী বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। পরে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত বিমানবন্দর থেকে চলে আসেন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সেখানে বসে দেখেন সিলেট সিক্সার্স ও ঢাকা ডায়নামাইটসের ম্যাচ। তবে শুক্রবার রাতে রাজনৈতিক বিরোধী দলীয় হওয়া সত্ত্বেও সদ্যবিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সাথে সৌজন্য স্বাক্ষাত করেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ জানুয়ারি ২০১৯/পিডি/এমকে-এম

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন