আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটের লালাখাল: স্বর্গোদ্যানে হাহাকার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-১৯ ০১:২৬:৪৩

এনামুল কবীর :: ছুটির দিনগুলো ছাড়া অন্যান্য দিনে দর্শণার্থী তেমন একটা আসেন না। অনেকটা হাহাকার অবস্থা। আয়-রোজাগার হবে কোত্থেকে? তাই কেউ বালু, কেউ পাথর তোলার কাজ করে জীবনের চাকা সচল রেখেছেন।

সারিঘাট ও লালাখালে দাঁড়িয়ে থাকা নৌকার সারি জানান দেয়, নৌযান শ্রমিকরা বড়ই দুর্দিনে। কয়েকজনের সাথে আলাপের সুবাদে জানা যায়, যা আয় হচ্ছে তাতে জীবন প্রায় অচল।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল যেন এক স্বর্গোদ্যান। সবুজ পাহাড় আর সাপের মতো আঁকাবাঁকা ছোট নদীর সুনীল জল, মেঘালয় পাহাড়, সুপারী ও চা বাগান, শতবর্ষী বিশাল বটবৃক্ষ, লালাখালে দেখার কি নেই? সব আছে। যা নেই, তাহচ্ছে দেখার মানুষ। নইলে এই ভরা পর্যটন মৌসুমে ঘাটে ঘাটে সারি সারি নৌকা বাঁধা থাকে? শ্রমিকদের সাথে আলোচনায় এমন খেদোক্তিও শোনা গেল।

মঙ্গলবার সরজমিনে জৈন্তাপুরের সারিঘাটে ২০/২২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

এসময় পর্যটকের সংখ্যাসহ সার্বিক বিষয়ে ধারণা পেতে নৌযান শ্রমিক হারিস আলীর (৩০) সাথে আলাপ হয়। তিনি বলেন, ছুটির দিন ছাড়া পর্যটক তেমন একটা আসেন না।

তিনি জানান, সারিঘাটে পর্যটকদের নৌবিহারের চাহিদা মেটাতে ৪০/৪২টির মতো নৌকা আছে। ডিসেম্বরে সপ্তাহে একাধিক ট্রিপ জুটলেও এরপর থেকে বসে থকতে হয় তাদের। একেকটি নৌকা সপ্তাহে বড়জোর একটি ট্রিপ পায়। মানে একবার পর্যটক বহনের পর অপেক্ষায় থাকতে হয় পুরো ৪২ দিন!

সারাবছর এ অবস্থা চলে। আর তাই প্রতিটি নৌযান শ্রমিককে বিকল্প পেশায় জীবনের চাকা সচল রাখতে হয়। সেই বিকল্পটা হচ্ছে বালুমহাল। সারির বিখ্যাত বালু উত্তোলন ও পরিবহনেই আয় রোজগার বেশি। একই অবস্থা লালাখাল ঘাটে। সেখানেও ১৫/১৬টি নৌকা ঠায় দাঁড়িয়ে।

এখানে আলাপ হলো উত্তরকামরাঙ্গীরখেল-লালাখাল যাত্রীবাহী নৌযান শ্রমিক সমিতির সদস্য আইয়ব আলীর (৭০) সাথে। তিনিও জানালেন একই তথ্য। তাদের সদস্যও প্রায় ৪০ জন। গড়ে ৪০ দিন পরপর একেক ট্রিপ পান তারা। এতে যা আয় হয়, উল্লেখই করতে চাইলেন না তিনি। তাদেরও বিকল্প পেশা হচ্ছে বালু উত্তোলন, পরিবহন ও দিনমজুরি। বেশির ভাগের জীবন চলছে বালু মহালে শ্রম দিয়ে।

৬ ছেলে ও ৬ মেয়েসহ ১৪ জনের সংসার আইয়ব আলীর। সবাই বালু মহালে কাজ করছেন দিনমজুর হিসাবে কাজ করছেন। গত ৩ বছর থেকে নিজপাট ইউনিয়নে দৌড়াদৌড়ি করছেন বয়স্কভাতার জন্য। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আজও বঞ্চিত এই বৃদ্ধ।

অথচ পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকারি উদ্যোগের যথার্ত বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যেত হারিস আলী বা আইয়ব আলীদের জীবন।

দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রচার আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে আরও কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ও বিনোদনের ব্যবস্থা থাকলে সারাবছর এখানে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকতো। ব্যবসা-বানিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হতো। হতো কর্মসংস্থান। তখন আইয়ব আলীরা ধনী না হলেও বয়স্কভাতার জন্য ছটফট করতে হতোনা বলেই মতামত ব্যাক্ত করলেন সারিঘাটের হারিস, জয়নাল, লালাখাল কালিঞ্জিবাড়ি গ্রামের আইয়ব আলী, চারিকাটা ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর বাজারের ব্যবসায়ী জাকির, যুক্তরাজ্য প্রবাসী পর্যটক, বিশ্বনাথের মিজানুর রহমান ও সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র জামিল আহমদ (২২)।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ জানুয়ারি ২০১৯/এক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন