আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

তিন চৌধুরীকে নিয়ে আলোচনায় ‘হাফিজ কমপ্লেক্স’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-১৯ ১০:০৪:৪৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :: হাফিজ কমপ্লেক্স। সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীর পূর্বপাড়ে অবস্থিত সুরম্য একটি দালান। এতোদিন এই ভবনটির পরিচিতি ছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাসভবন হিসেবেই। সিলেটের প্রথম কনভেনশন হল হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে ভবনটির। নতুন মন্ত্রীসভায় মুহিত বাদ পড়লেও হাফিজ কমপ্লেক্সের আরেক সদস্য ড. এ কে আবদুল মোমেন স্থান পেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে।

তবে এসব কিছু ছাপিয়ে এখন সিলেটের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে ‘হাফিজ কমপ্লেক্স’। ইনাম আহমদ চৌধুরীর আওয়ামী লীগে যোগদান দিয়ে শুরু হওয়া আলোচনার হাওয়ায় নতুন গতি এনেছে বিএনপির সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর হাফিজ কমপ্লেক্সে গিয়ে ড. মোমেনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর ঘটনা। এনিয়ে বিব্রত সিলেট বিএনপিও। নির্বাচন নিয়ে দলীয় বিতর্ক শেষ হওয়ার আগেই বাসায় গিয়ে ড. মোমেনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না দলটির নেতাকর্মীরা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী। ২৮ নভেম্বর তিনি মনোনয়নপত্রও জমা দেন। মনোনয়নপত্র জমাদানের পরদিন সকালে তিনি ‘হাফিজ কমপ্লেক্সে’ দেখা করতে যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাথে। অর্থমন্ত্রী ও তার ভাই সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সাথে ঘন্টাব্যাপী বৈঠক করে ফিরেন সেখান থেকে। এই সাক্ষাতকে সেসময় সৌজন্য সাক্ষাত হিসেবেই দাবি করেছিলেন ইনাম চৌধুরী।

দীর্ঘ দিনের পারিবারিক সম্পর্ক থেকেই তিনি সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন ইনাম। ইনামের ‘হাফিজ কমপ্লেক্সে’ যাত্রাকে ভালোভাবে নেননি দলীয় নেতাকর্মীরা। ওই সময়ই ঝড় ওঠে সমালোচনার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ১৯ ডিসেম্বর তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুল দিয়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ২১ ডিসেম্বর তিনি সিলেট ফিরে হাফিজ কমপ্লেক্সে সভা করে ড. মোমেনকে বিজয়ী করতে সিলেটবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

ইনাম আহমদ চৌধুরীর সৌজন্য সাক্ষাত ও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগদান ঘিরে রাজনৈতিক আলোচনায় আসে ‘হাফিজ কমপ্লেক্স’। সেই রেশ কাটতে না কাটতে আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে ‘হাফিজ কমপ্লেক্সে’ গিয়ে নবগঠিত মন্ত্রীসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সাথে গত নির্বাচনে সিলেট-৩ আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী শফি আহমেদ চৌধুরী এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের ঘটনা। শফি আহমেদ চৌধুরী ও আরিফুল হক চৌধুরী দু’জনই বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য।

গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় মেয়র আরিফ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলী ও সচিবসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে ‘হাফিজ কমপ্লেক্সে’ গিয়ে ড. মোমেনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। মেয়রের দৈনন্দিন সকল কর্মকান্ডের সংবাদ গণমাধ্যমে পাঠানো হলেও মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের ঘটনাটি দিনভর চাপা রাখা হয়। রাতে ঘটনাটি জানাজানি হলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এদিকে, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ‘হাফিজ কমপ্লেক্সে’ যান বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সাংসদ শফি আহমেদ চৌধুরী। তিনিও অনেকটা গোপনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ড. মোমেনকে। কিন্তু সেই গোপন শুভেচ্ছার খবরটি শেষ পর্যন্ত গোপন থাকেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের ছবিটি প্রকাশ হলে অনেকেই তাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।

শফি আহমেদ চৌধুরী ও আরিফুল হক চৌধুরী কী শেষ পর্যন্ত ইনাম আহমদ চৌধুরীর পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন- এমন প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন অনেকে। তবে শফি ও আরিফ দু’জনেই এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, স্রেফ সৌজন্য সাক্ষাতের জন্যই তারা হাফিজ কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেন তারা।

তবে, শফি চৌধুরী ও আরিফুল হক চৌধুরীর হাফিজ কমপ্লেক্সে গিয়ে ড. মোমেনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টিকে দলীয় নেতাকর্মীরা সুন্দরভাবে নিচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ। তিনি বলেন, ‘একটি নিষ্ঠুর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত কোন সাংসদ বা মন্ত্রীকে বিএনপি নেতারা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করবেন- এমন দৃশ্য সিলেটের নেতাকর্মীরা দেখতে চাননি।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ জানুয়ারি ২০১৯/শাদিআচৌ/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন