আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সন্দেহের আগুনে পুড়ছে সিলেট বিএনপি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-২২ ০০:১২:৪১

এনামুল কবীর :: সন্দেহের আগুনে পুড়ছে সিলেট বিএনপি। নেতাকর্মীরা নানা কারণে বিব্রত-বিভ্রান্ত। এরমধ্যে কে কখন দলত্যাগ করবেন বা করতে পারেন, এনিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন যাচ্ছে তাদের। চলছে ফিসফাঁস-আলোচনা বা চুলচেরা বিশ্লেষণ। ত্যাগী নেতাকর্মীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তবে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বিভ্রান্তি বা সন্দেহের বিষবাষ্প ছড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে সন্দেহের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৩তম জন্মদিন উপলক্ষে রবিবার সিলেটের দরগাগেইটস্থ শহীদ সুলেমান হলে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি পরিস্কার এবং জোরালো কন্ঠে ঘোষণা করেছেন, আমি আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির সৃষ্টি। আর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শই আমার রাজনীতির আদর্শ। মৃত্যুর পুর্ব পর্যন্ত বিএনপিই আমরা একমাত্র ঠিকানা। অপপ্রচারে কান না দিয়ে নিজেদের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রমকে সুসংহত করার কাজে সবাইকে আত্মনিয়োগ করতে হবে।’

রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রের দাবি, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সাথে ঘনিষ্ঠতা ও তার ভাই বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর সুবাদে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হকের দলত্যাগ নিয়ে সন্দেহের যে আগুন জ্বলছে জাতীয়তাবাদী শিবিরে, তাতে জল ঢালতেই আরিফ এমন বক্তব্য রেখেছেন।

প্রায় একইধরণের কথা বলেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল হাকিম চৌধুরী।

সিলেটভিউর গোয়াইনঘাট প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে তার অবদান ও ত্যাগের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আমি বিএনপির সৃষ্টি। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন বিএনপির রাজনীতির সাথেই জড়িত থাকবো, দলবদলের প্রশ্নই আসেনা।’

আরিফুল হক চৌধুরী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফুল দেওয়ার ব্যাপারে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তেমন ব্যাখ্যাই দিলেন আব্দুল হাকিম চৌধুরীও।

বললেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

আরিফ বলেছিলেন, সিলেটের মেয়র হিসাবেই তিনি ফুল দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তার সাথে ব্যক্তি আরিফের কোন সম্পর্ক নেই।

রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর দাবি, সন্দেহের আগুন না থাকলে এমন বক্তব্যের কি প্রয়োজন ছিল?

দলটির ভেতরে এ আগুনের সূত্রপাত অবশ্য আরও আগে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন।

তখন থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে উঠতে থাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন। এরপর কে বা কারা, দলের কি হবে, ভাঙবে না দলীয় ঐক্য সুসংহত হবে, ইত্যাদি।

তাদের সেই সন্দেহ যে একেবারেই অমূলক ছিলনা, তার প্রমাণ পেতে বেশিদিন লাগেনি। অতি সম্প্রতি সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্ঠা ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বরইকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিব হোসেন ঢাকঢোল পিটিয়ে স্থানীয় সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।

এই যোগদানের কারণে সিলেট বিএনপিতে সন্দেহের আগুন আরও তীব্র হচ্ছে। সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে কানাঘুঁষা বা উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করছেন বিএনপির সাথে সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতাকর্মী।

তবে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ তা মানতে রাজী নয়। তিনি ‘সন্দেহের আগুন’ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ছড়াচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বরইকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিব হোসেন দীর্ঘদিন থেকে রাজনৈতিকভাবে নিস্ক্রিয়। দলীয় কাজে তার অংশগ্রহন নেই। তিনি অন্যদলে যোগদান করেছেন। এর কোন প্রভাব দলীয় নেতাকর্মীদের উপর পড়েনি বা তেমন কোন সম্ভাবনাও নেই। সন্দেহেরও কোন সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, কিছুকিছু পত্র-পত্রিকায় এজাতীয় গুজব ছড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিভ্রান্তির মাধ্যমে ফায়দা লুটতে চাইছে। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা দলীয় আদর্শ ও শৃঙখলার প্রতি অনুগত। কারও প্রতি কারও কোন সন্দেহ নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন। কোন বিভ্রান্তিও নেই।

আলী আহমদ ভবিষ্যতেও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২ জানুয়ারি ২০১৯/এক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন