Sylhet View 24 PRINT

সিলেটে ‘তীর’ এখন মোবাইলে, দেদারছে চলছে টিকটিকি!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-১৭ ১৩:০৪:২৮

রাশেদুল হোসেন সোয়েব :: সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায় বিভিন্ন ধরণের অপরাধ কর্মকান্ডে র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করছে। পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানের ভয়ে সতর্ক অবস্থানে থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চলছে ভারতীয় শিলং তীর খেলাসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড।

দক্ষিণ সুরমায় বিগত দিনে জুয়া ও তীর খেলার প্রবনতা কমলেও বর্তমানে তা আবারো বিস্তার লাভ করছে। তীর শিলং জুয়ার পাশাপাশি টিকটিকি নামীয় আরেক জুয়া ও তিন তাশি জুয়ায় সয়লাব দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন এলাকা।

দক্ষিণ সুরমার যে কোন এলাকায় বসেই তীর শিলং জুয়া খেলা যায়। সকাল ৭টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত টার্মিনাল এলাকায় তিন তাশি জুয়ার আসর বসে। এ খেলার মূল নেতৃত্বদানকারী তাহের, জামাল, নজরুল, আখতার, খছরু নামের ব্যক্তিরা। গ্রাম-গঞ্জ থেকে সহজ সরল মানুষরা গাড়ীতে করে শহরে আসে। শহরে প্রবেশের মুখেই তাদের প্ররোচনায় পড়ে সর্বস্ব খুইয়ে হতাশ হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ।

এদিকে ক্বীনব্রিজের নিচে রাত ১২ টার পর থেকে সারারাত চলে তিনতাশি জুয়া খেলা। এর নেতৃত্বে রয়েছে মানিক ও তাহের। বিআরটিসি বাস কাউন্টারের পিছনে মন্নান মিয়ার কলোনীতে সুজন, নজরুল, স্বপন মিয়ার নেতৃত্বে তীর ও টিকটিকি জুয়া খেলা চলে। এর পাশর্^বর্তী রাসেলের টং হোটেলে বসেও এইসব জুয়া খেলা চলে। পাশাপাশি রাত-দিন চলে টিকটিকি নামীয় জুয়া খেলা। সর্বনাশা এ জুয়া খেলায় স্কুল কলেজের ছাত্র থেকে শুরু করে দিনমজুর, রিক্সা চালক, বিভিন্ন যানবাহনের চালক-হেলপার, শ্রমিক সহ অনেকেই অংশ নিচ্ছে। ভাগ্যের এ খেলায় কেউ কেউ কিছুটা পুঁজি ফিরে পেলেও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অনেক জুয়াড়িরা নিঃস্ব অবস্থায় খালি হাতে ফেরত আসেন।

১০ টাকায় ৭০০ টাকা পাওয়া যায় একটি নম্বরে। একই নম্বর একাধিক লোকও কিনতে পারেন। সবাই কেনা দামের চেয়ে ৭০গুন বেশি টাকা পাবেন। সপ্তাহে রবিবার বাদ দিয়ে ৬ দিনই প্রতিদিন ২বার করে ড্র-অনুষ্ঠিত হয় এবং নতুন সংযোজন নাইট তীরের ড্র রাতেরবেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিবর্গের নেতৃত্বে এইসব অপরাধ কর্মকান্ড চলে আসছে বলে জানা যায়।

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের বাথরুমের ইজারাদার নান্টু বাথরুমের পাশেই খোলামেলা ভাবে তীরের বোর্ড বসায়। সে বেপরোয়াভাবে এইসব কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। ঝালোপাড়া চাঁদনীঘাটের মাছ বাজারের ভিতরে রয়েছে দক্ষিণ সুরমার সবচেয়ে বড় তীর ও টিকিটিকি জুয়ার আসর। এই আসরের খুবই সতর্কভাবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পুলিশ ও র‌্যাবের চোখ ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। এসব কাজে সহযোগীতা করে স্থানীয় কতিপয় যুবকরা।

কদমতলীর ফেরিঘাট এলাকায় সেলিমের হোটেলের পিছনে তীরের আস্তানা গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন যুবকরা দলবেঁেধ পকেটে টাকা নিয়ে যায় এই আস্তানায়, কিন্তু ফিরে আসে খালি হাতে। কুশিঘাটের রাহেল তার সঙ্গীয় অনেককে নিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সতর্কভাবে চালিয়ে আসছে তীর জুয়া খেলা। এই জুয়ার নেশায় বর্তমানে সারা দক্ষিণ সুরমায় চুরি, ছিনতাই রাহাজানি দিন দিন বেড়েই চলেছে। অনেক ছেলেরা জুয়ার টাকা না পেয়ে ঘর থেকে দামী মোবাইল ফোন সেটসহ অন্যান্য আসবাবপত্র এনে কম দামে বিক্রি করে জুয়ার আসরে যাচ্ছে। এতে করে আমাদের নতুন প্রজন্ম নষ্ট হচ্ছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন কলোনীতে তীর জুয়ার আস্তানা গড়ে উঠেছে। এসব কলোনীর জুয়ার বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে বরইকান্দিতে ভাড়াটিয়া থাকা টিপু নামের এক যুবক। সে বিভিন্ন কলোনীতে ভ্রাম্যমান ভাবে জুয়া খেলা চালায়। অনেকাংশে মোবাইলের মাধ্যমে ওয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদি ব্যবহার করেও এই তীর খেলা পরিচালনা করা হয় এবং টেকনিক্যালের মিন্টুর চা স্টলে ও তেলের ডিপোর পাশে সিপলু ও দেলোয়ার নামীয় ২ যুবক তীর জুয়ার বোর্ড চালায় বলেও একটি সূত্রে জানা যায়।

বাবনা পয়েন্টের জিঞ্জির শাহ’র মাজারের পাশে ভাঙ্গাড়ী কাসেমের আস্তানা, হুমায়ুন রশিদ চত্বর, লাউয়াই মারকাজ মার্কেট পয়েন্টের পাশে বসে নিরাপদে খেলার নাম্বার টোকন বিক্রয় হয়।

এ ব্যাপাওে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মূসার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, তীর খেলা ও টিকটিকি জুয়া খেলার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। দক্ষিণ সুরমা এলাকায় অপরাধ প্রবনতারোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় সচেষ্ট রয়েছে। অপরাধীরা যতই সতর্ক থাকুক আমাদের অভিযান চলবে এবং অপরাধীকে পেলেই আটক করা হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৭ নভেম্বও ২০১৯/আরএইচএস/ডিজেএস

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.