রাজশাহী ও চট্টগ্রামে করোনা টেস্ট শুরু, সিলেটে আরও ৪ দিন অপেক্ষা!

মো. রেজাউল হক ডালিম :: ঢাকার বাইরে ৩ স্থানে করোনা পরীক্ষা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তবে সিলেটে এ মরণব্যধির শনাক্তকরণ পরীক্ষা শুরু হতে আরও ৩/৪ দিন সময় লাগবে বলে জানা গেছে। তাই করোনা টেস্টের ক্ষেত্রে অপেক্ষার দিন বাড়ছে সিলেটবাসীর।

জানা গেছে, ঢাকার বাইরে বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) চট্টগ্রামে শুরু হয় করোনা সনাক্তকরণ পরীক্ষা। গতকাল বৃহস্পতিবার বন্দরনগরীর অদূরে ফৌজদারহাট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি)-এ সাতজনের নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে সীমিত আকারে এই টেস্ট শুরু করা হয়।

এর আগের দিন বুধবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) হাসপাতালে স্থাপিত ল্যাবেও শুরু করা হয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগি শনাক্তকরণ কার্যক্রম। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ল্যাবটির কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার বাইরে প্রথম রাজশাহীতে করোনা পরীক্ষার ল্যাব চালু করা হলো।

এছাড়াও কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজে স্থাপিত ল্যাবরেটরিতেও বৃহস্পতিবার থেকে করোনাভাইরাস শনাক্তের টেস্ট শুরু হয়েছে। এখানে প্রতিদিন ৯৬ জনের করোনা টেস্ট করা সম্ভব হবে। তবে প্রথম পর্যায়ে এ ল্যাবে সীমিত আকারে পরীক্ষা চালানো হবে।

এদিকে, সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা টেস্টের ল্যাব স্থাপন কাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে।  আগামী মঙ্গল অথবা বুধবার শুরু হতে পারে টেস্টের কার্যক্রম। এর মধ্যেই সংশ্লিস্ট নার্স, চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানদের ট্রেনিং সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান আজ শুক্রবার (৩ এপ্রিল) সকালে সিলেটভিউ২৪-কে বলেন, ল্যাব স্থাপনের ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে।  আশা করা যাচ্ছে- আগামী মঙ্গল অথবা বুধবার টেস্টের কার্যক্রম শুরু করা যাবে। 

তিনি বলেন, মেশিন স্থাপন করতে বেশি সময় লাগবে না। এর আগে কক্ষটি সাজাতে একটু সময় লাগছে। মেশিন সেটআপের জন্য মঙ্গলবার অথবা বুধবারে ঢাকা থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর একটি টিম আসবে। তারা মেশিন সেটআপ করে ল্যাব টেকনিশিয়ান ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের একটি ট্রেনিং প্রদান করবেন। এতে অবশ্য বেশি সময় লাগবে না। 

এর আগে গত সপ্তাহের সোমবার করোনাভাইরাস পরীক্ষার আরটি-পিসিআর মেশিন ও সরঞ্জাম সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে এসে পৌঁছে। বর্তমানে সেখানে ল্যাব স্থাপন কক্ষের কাজ অবিরাম কাজ চলছে। ল্যাব স্থাপন হয়ে গেলে রোগীর নমুনা পরীক্ষাগারে নেয়ার পর এক ঘণ্টায় ফলাফল বের হয়ে আসবে বলে জাানিয়েছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক হিমাংশু লাল রায়। 
তিনি আরো জানিয়েছেন, সিলেটে একসাথে ৮ জন রোগীর নমুনা মেশিনে পরীক্ষা করা যাবে। এই ৮ জনের ফলাফল একই সাথে বের হয়ে আসবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেউ সরাসরি ওসমানী মেডিকেল কলেজে এসে পরীক্ষা করতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা যাকে করোনা আক্রান্ত হিসেবে সন্দেহ করবেন এবং পরীক্ষার প্রয়োজন মনে করলে শুধু তাকেই পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টা মেশিন সচল থাকলে ২০০ জনের পরীক্ষা করা যাবে এই মেশিন দিয়ে।

করোনাভাইরাস সন্দেহে কোনো ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করার পর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে এটি পাঠানো হবে। মেশিনে পরীক্ষার কাজ শুরু হওয়ার পর এক ঘণ্টার ভেতরে চলে আসবে ফলাফল। তখনই জানা যাবে ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি-না। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ মিলিয়ে এই চার জেলার লোকদের পরীক্ষা করা হবে ওসমানী মেডিকেল কলেজে।

উপ-পরিচালক হিমাংশু লাল রায় আরো জানিয়েছেন, করোনা পরীক্ষার জন্য শুরুতেই ওসমানী হাসপাতালে ৫ হাজার কিট থাকবে। এর মধ্যে ৫০০ কিট মেশিনের সাথেই চলে এসেছে। আর বাকি সাড়ে ৪ হাজার কিট শীঘ্রই হাসপাতালে এসে পৌছাবে।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সুত্র জানায়, কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ময়নুল হকের তত্ত্বাবধানে ল্যাব স্থাপনার কাজ চলছে। পুরো মেশিনারিজের মধ্যে ২৯টি বিভিন্ন ধরনের ট্যাকনিক্যাল আইটেম রয়েছে। ডায়াগনস্টিক যে কিট সাথে রয়েছে তা দিয়ে একবারে ২০০ এর অধিক নমুনা পরীক্ষা করা যাবে।

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাস সংক্রমনের পর থেকে পরীক্ষার ল্যাব না থাকায় প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের মানুষের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক কাজ করছিল। কেননা সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো ঢাকায়। পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট আসতে সময় লাগে ২-৩ দিন। এরমধ্যে ঢাকার বাইরে কয়েকটি স্থানে করোনা পরীক্ষার ল্যাব তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় আইইসিডিআর। কিন্তু ঢাকার বাইরে যে তিনটি স্থানে ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয় সেই তালিকায় ছিল না সিলেট।

পরবর্তীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে মাত্র কয়েকদিনেই সেই ল্যাব স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ফলে এ সপ্তাহ থেকে আর করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা পাঠাতে হবে না ঢাকায়।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ৩ এপ্রিল, ২০২০ / ডালিম