Sylhet View 24 PRINT

বিশ্বনাথে মামলা করে সন্তানদের নিয়ে ঘরছাড়া নিহতের স্ত্রী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-০১ ২২:৫৩:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, বিশ্বনাথ :: প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন স্বামী। বিচার পাওয়ার জন্য থানায় মামলা করেন স্ত্রী। এরপর থেকে মামলার অভিযুক্তদের অব্যাহত হুমকি-ধামকিতে চরম বিপাকে রয়েছেন মামলার বাদী ও স্বাক্ষীরা। আর তাই নিরাপত্তার অভাবে স্বামী হত্যার মামলা করেও বিশ্বনাথে সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছাড়া হয়েছেন স্ত্রী (বাদি)।

ঘটনাটি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের মনোকুপা গ্রামের। বাজার থেকে বাড়িতে ফেরার পথিমধ্যে গত ২৩ জুন প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন ওয়ারিছ আলী নামের এক ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ। এরপর ২৪ জুন নিহত ওয়ারিছ আলীর স্ত্রী নুরুন নেছা বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখ ও আরো ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় স্বাক্ষী হন নিহতের ছোট মেয়ে সীমা বেগম (২০) ও ভাতিজা রাসেল আহমদ (১৮)সহ আরো কয়েকজন। আর মামলা দায়েরের ৩/৪ দিন পর থেকেই মামলার বাদীকে অভিযুক্তরা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও অভিযোগ পাওয়া গেছে, মামলা না তুলে স্বাক্ষী দিতে গেলে নিহতের যুবতি মেয়ে সীমা বেগমকে (২০) ধর্ষণ ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্ত আসামি সমছু মিয়া (৫৫) ও তার ভাই প্রভাবশালী ইউপি সদস্য ফজলু মিয়া পক্ষের লোকজন ।

বুধবার (১ জুলাই) বিকেলে সরেজমিন মনোকুপা গ্রামে গেলে এভাবেই স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন মামলার বাদি নুরুননেছা ও তার মেয়ে সীমা বেগম। তারা বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে বিবাদী পক্ষের ভয়ে তাদের (বাদী) পরিবারের আট সদস্যই রয়েছেন বাড়ি ছাড়া। কিন্তু তারপরও প্রভাবশালী প্রতিপক্ষ সমছু-ফজলুদের নির্যাতন থামছে না। প্রতিনিয়ত প্রভাবশালী ওই অভিযুক্তরা তাদের বাড়ি-ঘরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা ও ভাংচুর করছে।

সীমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, গত ২৩ জুন ঘটনার দিন বড় বোন মমতা বেগম (৩০)’র বাড়িতে যাওয়ার জন্য চাচাতো ভাই রাসেল মিয়া (১৮)’কে সাথে নিয়ে তিনি নিজ বাড়ি থেকে বের হন। হঠাৎ করে তারা দেখতে পান রাস্তায় তার পিতা ওয়ারিছ আলীকে লোহার রড আর পাইপ দিয়ে পেঠাচ্ছেন প্রতিপক্ষ সমছু মিয়া, স্থানীয় মেম্বার ফজলু মিয়াসহ ৭-৮জন লোক। এসময় তিনি তার পিতাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে যান। অনেক চেষ্টা করেও প্রতিপক্ষকে আটকাতে পারেননি। অবশেষে প্রতিপক্ষের মার খেয়ে মেয়ের সামনে প্রাণ ভিক্ষা চান তার পিতা ওয়ারিছ আলী। এভাবেই কান্না করে নিজের চোখের সামনে পিতা হত্যার বর্ণনা দেন নিহত ওয়ারিছ আলীর যুবতী মেয়ে সীমা বেগম। সাংবাদিককদের মাধ্যমে তিনি পিতা হত্যার বিচার ও প্রশাসনের কাছে পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

মামলার বাদী নুরুন নেছা অভিযোগ করে বলেন, পিতা হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় বিবাদী পক্ষের সাদ মিয়া, সমছু মিয়া, ফারুক মিয়া ও লয়লুছ মিয়াসহ কয়েকজন লোক তাদের ঘরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ প্রাণনাশ ও মেয়ের ইজ্জত লুটের হুমকি দিয়ে আসছে। ফলে বাধ্য হয়েই মেয়ে সীমা বেগমকে নিয়ে প্রাণের ভয়ে অন্যত্র গিয়ে রাতযাপন করেন।

হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করে নিহত ওয়ারিছ আলীর মা শতবর্ষী সিতারা বিবি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি ন্যায় বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মনোকুপা গ্রামের সালিশ ব্যক্তিত্ব হাজী জবেদ আলীর (৯৫) সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, প্রকাশ্যে হামলার পর ওয়ারিছ আলীকে মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করায় তার ছেলে আবদুল আলী (৪০), আবদুল করিম (২৫) ও এমসি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র আলা উদ্দিনকে (২০) প্রতিপক্ষের দায়ের করা পাল্টা মামলায় অভিযুক্ত করেছে হামলাকারী সমছু মিয়া পক্ষের লোকজন।

পাশের বাড়ির সত্তরোর্ধ্ব সুনুবিবি বলেন, গ্রামের নুরুল ইসলাম ও সমছু মিয়া পক্ষের মধ্যে থাকা পূর্ব বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেলকে নিয়ে তার ছেলে আবদুস সালাম আপোষে নিস্পত্তির চেষ্টা করেন। অথচ এখন সমছু মিয়া পক্ষ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও তার ৩ ছেলেকে অভিযুক্ত করেছেন।

এই ব্যাপারে অভিযুক্ত সাদ মিয়া, সমছু মিয়া, ফারুক মিয়া ও লয়লুছ মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

বিশ্বনাথ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, এই ধরনের হুমকির কোন বিষয় তার জানা নেই। তবে উভয় পক্ষে দায়ের করা মামলার অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে।

প্রসঙ্গত, জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধে গত ২৩ জুন বিকেলে মনোকুপা গ্রামের নুরুল ইসলাম পক্ষের ওয়ারিছ আলীর (৬০) উপর হামলা করেন সমছু মিয়া পক্ষ। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় উভয় পক্ষে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন সমছু মিয়ার ভাই মখলিছ মিয়া (৬৫)। পরবর্তিতে তাদের দু’জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় একই দিনে উভয় পক্ষে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। সমছু মিয়া পক্ষের মামলার বাদী নিহত মখলিছ মিয়ার ছেলে আকরাম হোসেন (মামলা নং ১৬)। মামলায় শালিস করতে যাওয়া অলংকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলামসহ প্রতিপক্ষের ৩১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলা দায়েরের পর পরই উভয় পক্ষের পুরুষ সদস্যরা গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১ জুলাই ২০২০/অপু/পিডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.