Sylhet View 24 PRINT

সিলেটে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সংসারে করোনার আঘাত

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-০৪ ১৫:৩৬:০০

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের দক্ষিণ সুরমার একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন মাওলানা আব্দুল খালিক। রমজানের আগের মাস শাবানে মুসলিম ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী সিলেটের বেশিরভাগ মানুষের বাড়িতে ক্বোরআনে খতম-মিলাদ-দোয়া ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছরই এসবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দাওয়াত পেতেন মুয়াজ্জিন আব্দুল খালিক। প্রতিঘর থেকেই পেতেন সম্মানজনক ‘হাদিয়া’।
কিন্তু গত শাবান মাসে করোনার কারণে তা হয়নি। রমজানেও পাননি অন্যান্য বছরের মতো আলাদা হাদিয়া। তাই বর্তমানে ধার-দেনা করে অনেক কষ্টে টেনে নিচ্ছেন সংসার। আত্মসম্মান বোধ থেকে সাহায্য চেয়ে হাত বাড়াতেও পারছেন না।
শুধু আব্দুল খালিকই নন,  করোনার তাঁর মতো দিশেহারা সিলেটের অনেক মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা।

স্বাভাবিক সময়েই নানা সংকটের মধ্যে দিন কাটে দেশের মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের। করোনাভাইরাসের মহামারি নতুন করে আরও সংকট বাড়িয়েছে তাদের। শহরের তুলনায় গ্রামের মসজিদগুলোতে সংকট আরও প্রকট। আত্মসম্মান আর লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই সাহায্যের জন্য হাত বাড়াতে পারছেন না।

জানা গেছে, মূলত সংকটের শুরু হয় দেশে করোনার কারণে মসজিদে মুসল্লিদের প্রবেশের বিধিনিষেধ আরোপের পর। গত ৬ এপ্রিল সরকার মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিল। ফলে সেই সময় থেকে মসজিদগুলো মুসল্লি শূন্য হয়ে পড়ে।  মুসল্লিরা মসজিদে না আসায় দান বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব অনুসরণসহ নানাবিধ কারণে মসজিদের জন্য অনুদান ও সাহায্য সংগ্রহের কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়ে।

ফলে অনেক মসজিদই ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমদের বেতন দিতে পারছে না। প্রায় এক মাস পর গত ৭ মে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুস্থ মুসল্লিদের জন্য মসজিদে নামাজ আদায়ের নিয়ম করে সরকার। তবে মুসল্লিরাও আর্থিক সংকটে থাকায় আগের মতো দান-অনুদান দিতে পারছেন না।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াতে ২৪ ঘণ্টা সাপ্তাহিক ছুটিবিহীন দায়িত্ব পালন করলেও খুব বেশি বেতন পান না ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা। এমনকি এই পেশার মানুষদের জন্য নেই কোনও নির্ধারিত বেতন কাঠামো।

বিভিন্ন স্থানের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটে এলাকা ভেদে ইমামরা বেতন পান ৪ থেকে ৮-১০ হাজার টাকার পর্যন্ত। তবে অভিজাত এলাকার কিছু মসজিদের ইমামরা ১৫-২০  হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন। মুয়াজ্জিনদের বেতন সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। গ্রামাঞ্চলে এই বেতনের হার ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে আর্থিক অনুদান দিতে মে মাসে দেশের ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩টি মসজিদের জন্য ১২২ কোটি ২ লাখ ১৪ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মসজিদগুলোর আর্থিক অসচ্ছলতা দূর করতে প্রত্যেক মসজিদের অনুকূলে পাঁচ হাজার টাকা হারে অনুদান প্রদানের অনুমোদন দেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই অনুদান বিতরণ করা হয়।

যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় অনুদানের এই টাকা অপ্রতুল। একটি মসজিদে ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম মিলিয়ে কমপক্ষে তিন জন কাজ করেন। সেখানে এককালীন মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বণ্টন করা কঠিন। আর বরাদ্দপ্রাপ্ত তালিকার বাইরে থাকা মসজিদগুলো একেবারেই বঞ্চিত।

এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রোজার ঈদের আগে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য এককালীন বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সেটির বিতরণ প্রায় শেষ। আর তালিকার বাইরেও কোনও মসজিদ চাইলে আমরা বিতরণ করছি।’

আবারও বরাদ্দ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে আনিস মাহমুদ বলেন, ‘ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে এমন কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কোনও সিদ্ধান্ত আছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই।’


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ৪ জুলাই, ২০২০ / ডালিম

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.