Sylhet View 24 PRINT

করোনা: সিলেটে দুই মাসে যতো রোগী, জুনেই তার তিনগুণ!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-০৪ ২০:১৫:১৮

রফিকুল ইসলাম কামাল :: ‘লাগামহীন’ কিংবা ‘বল্গাহীন’ শব্দ দুটি প্রায় সবারই জানা। কোনো কিছু যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন ওই শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়। সিলেটে মহামারি করোনার বিস্তৃতির ক্ষেত্রে এখন ওই শব্দ দুটি অনায়াসে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাস্তবিকই সিলেটে করোনা এখন নিয়ন্ত্রণহীন।

পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর শুরুর দুই মাসে সিলেট বিভাগে যতো করোনাক্রান্ত রোগী ছিল, এর চেয়ে তিন গুণেরও বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন তৃতীয় মাস তথা জুনে।

শুধু আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়েই নয়, মৃত্যুর দিক দিয়েও জুন ছাড়িয়ে গেছে আগের দুই মাসকে। এপ্রিল ও মে মাস মিলিয়ে সিলেটজুড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭। আর শুধু জুন মাসেই মারা গেছেন ৫৮ জন!

সিলেটে করোনাক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হন ৫ এপ্রিল। ওসমানী মেডিকেল কলেজের ডা. মঈন উদ্দিন ওই দিন আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন। ১৫ এপ্রিল তিনি মারা যান ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় গত ৩১ মে জানায়, ওই দিন সকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনাক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৪৭ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৫৩৪ জন, সুনামগঞ্জে ১৪৪ জন, মৌলভীবাজারে ৯৮ জন ও হবিগঞ্জে ১৭১ জন রোগী ছিলেন।

৫ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে সিলেট বিভাগে করোনায় মারা যান ১৭ জন। তন্মধ্যে সিলেট জেলার ১৩ জন, মৌলভীবাজারের ৩ জন ও হবিগঞ্জের ১ জন ছিলেন। সুনামগঞ্জে তখন অবধি কেউ মারা যাননি।

একই সময়ে সিলেট বিভাগে সুস্থ হয়ে ওঠেন ২৫০ জন। এর মধ্যে সিলেটের ৫৯ জন, সুনামগঞ্জের ৬১ জন, মৌলভীবাজারের ৪৩ জন ও হবিগঞ্জের ৮৭ জন ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় ৩০ জুন পর্যন্ত আরেকটি পরিসংখ্যান জানিয়েছেন। তাতে দেখা যায়, ৩০ জুন সকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা রোগী ছিলেন ৪৪৬২ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৪৫৭ জন, সুনামগঞ্জে ৯৮২ জন, মৌলভীবাজারে ৪৩০ জন ও হবিগঞ্জ জেলায় ৫৯৩ জন আক্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন।

ওই দিন পর্যন্ত (৩০ জুন) সিলেট জেলায় ৫৯ জন, সুনামগঞ্জে ৬ জন, মৌলভীবাজারে ৪ জন ও হবিগঞ্জে ৬ জন মিলিয়ে বিভাগে মৃতের সংখ্যা ছিল ৭৫।

আর সিলেট জেলায় ৪০২ জন, সুনামগঞ্জে ৪১১ জন, মৌলভীবাজারে ১৯৮ জন ও হবিগঞ্জ জেলায় ২১৬ জন সুস্থ হয়ে ওঠেন। মোট সুস্থ হওয়াদের সংখ্যা ১২২৭।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম দুই মাসের (এপ্রিল ও মে) তুলনায় শুধুমাত্র জুন মাসে সিলেটজুড়ে করোনা রোগী বেড়েছে ৩৫১৫ জন। জুনে মারা গেছেন ৫৮ জন। আর জুনে সুস্থ হয়ে ওঠেন ৯৭৭ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার ৩০ মে-এর পর সাধারণ ছুটি আর বাড়ায়নি। ৩১ মে থেকে সবকিছু ‘সীমিত আকারে’ খুলে দেওয়া হয়। এই ‘সীমিত আকারের’ সুযোগ নিয়ে শুরু হয় অবাধ চলাচল। মার্কেট, বিপণিবিতান, যানবাহন সর্বত্র অসচেতনভাবে চলাফেরা করতে শুরু করেন মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো বালাইও নেই। এছাড়া সাধারণ ছুটিকালীন অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া ছিল অনেক কম। কিন্তু এরপর প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে প্রায় সবাই ঘরের বাইরে যাচ্ছেন, মানছেন না বিধিনিষেধ।

এসব কারণে সিলেটজুড়ে করোনা রোগী বাড়ছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। গেল ঈদ-উল-ফিতরের আগে মার্কেট, বিপণিবিতান কয়েকদিনে জন্য খোলা রাখা এবং ঢাকা থেকে অনেক লোক সিলেটে আসাও রোগী বাড়ার কারণ বলছেন দায়িত্বশীলরা।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটভিউকে বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এপ্রিল আর মে মাসের তুলনায় জুনে অনেক বেশি রোগী বেড়েছে। এটা অবশ্যই উদ্বেগের।’

তিনি বলেন, ‘এপ্রিলে সাধারণ ছুটির সময় অনেক কড়াকড়ি ছিল। রাস্তাঘাটে মানুষের কোনো আনাগোনা ছিল না। বন্ধ ছিল সবকিছু। কিন্তু মে থেকে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে শুরু করে। কড়াকড়ি কমে যায়, মানুষও বাইরে বের হতে শুরু করে। ঈদের সময় দোকানপাট খোলা রাখার সিদ্ধান্তও ছিল ভুল। ঢাকা থেকেও অনেকেই নিজের গ্রামের বাড়িতে আসেন। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি এখন খুবই কঠিন।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘সিলেটে রেডজোন, ইয়েলো জোন আর গ্রিন জোনের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। জোনিংয়ের বিষয়টা সময়সাপেক্ষ।’

প্রসঙ্গত, জুলাই মাসেও রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে সমানতালে। আজ ৪ জুলাই অবধি সিলেট বিভাগে রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০৭৭ জনে। আর সবমিলিয়ে মারা গেছেন ৮৪ জন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৪ জুলাই ২০২০/আরআই-কে

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.