Sylhet View 24 PRINT

সিলেটে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজার, জীবাণুনাশক না জীবননাশক!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৮-০২ ২১:০৪:০৭

(ফাইল ছবি)

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের কিন ব্রিজের উপর থেকে শুরু করে নগরীর প্রাণকেন্দ্রগুলোর ফুটপাত ও রাস্তার পাশে অবাধে বিক্রি হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী জীবাণুনাশক নানা ধরণের পণ্য। তবে সেগুলো সিলেটের মানুষের জন্য জীবনুনাশক না-কি জীবননাশক- সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

কারণ- নকল ও মানহীন হ্যান্ডরাব এবং স্যানিটাইজারে সয়লাব দেশের বাজার, ঔষধের দোকানসহ রাস্তা-ফুটপাত। বিভিন্ন স্থানে তৈরি হচ্ছে নকল ও মানহীন জীবাণুনাশক এসব পণ্য। ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সিলেটসহ সারা দেশে। এতে জীবন রক্ষা করার চাইতে ধ্বংসই করার আশঙ্কা বেশি।

বৈশ্বিক মহামারি করোনায় আক্রান্ত বিশ্বের প্রায় সব দেশ। করোনার থাবায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে অনেক উন্নত দেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। করোনা থেকে সুরক্ষায় সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি ঘন ঘন জীবাণুনাশক বা সাবান দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করার ওপর জোর দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যে কারণে সিলেটসহ সারা দেশেই বেড়েছে জীবাণুনাশক পণ্যের চাহিদা।

কিন্তু নকল মাস্ক ও পিপিই কেলেঙ্কারির মধ্যেই নকল ও মানহীন হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজারে দেশের বাজার, ঔষধের দোকান ও ফুটপাত সয়লাব। বিভিন্ন স্থানে তৈরি হচ্ছে নকল ও মানহীন জীবাণুনাশক এসব পণ্য।

আবার করোনা মহামারিতে অতি প্রয়োজনীয় এসব সুরক্ষাসামগ্রী তৈরি করতে গজিয়ে উঠেছে অখ্যাত অনেক প্রতিষ্ঠান। অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠানের তৈরি হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজারও বিক্রি হচ্ছে বেশ চড়ামূল্যে। আবার আসল পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহারবিধি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া গাইডলাইন বা বিধিবদ্ধ নির্দেশিকা মেনে তৈরি হচ্ছে না মানসম্পন্ন হ্যান্ডরাব ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। নামীদামি, খ্যাত ও অখ্যাত কোনো প্রতিষ্ঠানই এসব সুরক্ষাপণ্য তৈরিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধিবদ্ধ নির্দেশিকা অনুসরণ করছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর বলছে, নিয়মিত অভিযান চলছে। প্রাতিষ্ঠানিক অভিযানের পাশাপাশি র‌্যাব, এনএসআই, পুলিশ ও জেলা  প্রশাসনের সঙ্গে আভিযানিক সহযোগিতায় এসব ভেজাল ও নামমাত্র জীবাণুনাশক পণ্য তৈরি, বিক্রি এবং মজুত বন্ধে তৎপর রয়েছে অধিদফতর।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক গাইড লাইন ও নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, হ্যান্ডরাব ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে শতকরা ৭৫ ভাগ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল (আইপিএ) অথবা শতকরা ৮০ ভাগ ইথানল থাকতে হবে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, হ্যান্ডরাব ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারে কোনো সুগন্ধি মেশানো যাবে না। সুগন্ধি বা পারফিউম ও রঙ মেশানো হলে তাতে অ্যালার্জির উদ্রেক ঘটবে, অনেকে অ্যালার্জির সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। এই অ্যালার্জি শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দিতে মূল ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে যে, ঢাকা ও সিলেটসহ সারা দেশের বাজারে চলমান অধিকাংশ হ্যান্ডরাব বা হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ৭৫ ভাগ আইপিএ বা শতকরা ৮০ ভাগ ইথানল উপাদান বিদ্যমান নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইপিএ বা ইথানলের পরিবর্তে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবে যেনতেন করে তৈরি হচ্ছে এসব সুরক্ষাপণ্য। অনেক নামী কোম্পানির প্রস্তুত করা এসব পণ্যের গায়েও ৭৫ ভাগ আইপিএ বা ৮০ ভাগ ইথানল উপাদান থাকার কথা উল্লেখ নেই।

করোনাকে পুঁজি করে বাজারে চলমান এসব হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজারকে আকর্ষণীয় করতে নানা ধরনের রঙ ছাড়াও সুগন্ধি মেশানো হচ্ছে। ফলে এসব মানহীন সুরক্ষাপণ্য কিনে ও ব্যবহার করে মারাত্মক করোনা ঝুঁকিতে পড়ছেন মানুষ।

আবার কিছু কিছু নামী কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন নিয়ে যেনতেন করে তৈরির পর বাজারে ছেড়ে বিপুল মুনাফা লুটছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে ভুক্তভোগীরা বলছেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বাজারে অসংখ্য নামে হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর একই পরিমাণের কোনোটির দাম যেমন ৫০ টাকা আবার কোনোটির দাম ২৫০ টাকা। অধিকাংশ বোতলের গায়ে পণ্যের উপাদানের বিবরণ নেই। তৈরির দিন, তারিখ বা ব্যাচ নম্বরও নেই। এসব সুরক্ষাপণ্য কিনে প্রতিনিয়ত মানুষ ঠকছেন, পড়ছেন করোনার ঝুঁকিতে।

সম্প্রতি রাজধানীর হাতিরপুলের একটি বাসায় জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার থেকে আগুন লেগে চিকিৎসক দম্পতি দগ্ধ হন। গত মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চিকিৎসক ডা. রাজিব ভট্টাচার্য।

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষকরা বলছেন- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসরণ করেই হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজার প্রস্তুত ও বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। গাইড লাইন অনুসরণ করে নিবন্ধিত কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলোও এসব পণ্য তৈর করছে কি-না, সেদিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এছাড়াও বাজারে চলমান মানহীন হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজার প্রস্তুত ও বিক্রির বিষয়টি কঠোরভাবে তদারকির মধ্যে আনা জরুরি। না হলে মানহীন পণ্য ব্যবহারে সুরক্ষার বদলে ঝুঁকি আরও বাড়বে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ২ আগস্ট, ২০২০ / ডালিম

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.