Sylhet View 24 PRINT

সিলেটে চামড়ার ব্যবসায় ভয়াবহ ধস, কারবার ছেড়েছেন ৬০ ভাগ ব্যবসায়ী!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৮-০৩ ২০:০৩:১১

মো. রেজাউল হক ডালিম :: তিন বছর থেকে দেশের বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সিলেটেও চামড়ার বাজারে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এবারে হয়েছে নজিরবিহীন ধস। বিভিন্ন জায়গা থেকে খুচরো ব্যবসায়ীদের কেনা বেশিরভাগ গরুর প্রতি পিস চামড়ার দাম ২০০ টাকার উপরে উঠেনি। আর এ দামে চামড়া কিনে সিলেটর বড় ব্যবসায়ীরা বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে পারছেন না নায্য দামে।

অন্যদিকে, সিলেটে চামড়ার বাজারে এমন ভয়াবহ ধসের কারণে এবারে ব্যবসায় নামেননি প্রায় ৬০ ভাগ ব্যবসায়ী- এমনটাই জানালেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৬ জুলাই চামড়ার দাম ঠিক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহার জন্য নির্ধারিত পশুর চামড়ার দর গত বছরের চেয়েও বেশ কম ছিলো। এ বছর ঢাকার জন্য লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম গরুর প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে সিলেটসহ সারা দেশে ২৮ থেকে ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা গত বছর ঢাকায় ছিলো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা আর ঢাকার বাইরে ছিলো ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

এবারে চামড়ার দাম কম হওয়ায় ভালো ব্যবসার হওয়ার আশা করেছিলেন সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ঘটেছে বিপর্যয়। এছাড়াও সোমবার (৩ আগস্ট) ঈদের তৃতীয় দিনে কিছুটা দাম উঠার প্রত্যাশায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা, কিন্তু তাও হয়নি।

সিলেটের কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ীেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী গরুর যে চামড়ার দাম হওয়ার কথা সর্বনিম্ন ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা, সেটার দাম চাওয়া হচ্ছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। অনেক ব্যবসায়ী আজকে পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন, ভেবেছিলেন আজ হয়তো ভালো দাম পাবেন।

কিন্তু আজকের পরিস্থিতি আরও খারাপ। আকারভেদে প্রতি চামড়ার দাম ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আজ চাওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। আর ছাগলের চামড়ার জন্য কেউ কোনো দামই দিতে চাইছে না। দিলেও সেটা ৫-১০ টাকার বেশি না। এছাড়াও প্রচণ্ড গরমে চামড়া নষ্ট হতে শুরু করায় দাম আরও নামছে। এমন অবস্থায় সিলেটের অনেক ব্যবসায়ী তাদের কাছে থাকা কাঁচা চামড়াগুলো ফেলে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না।

এ বিষয়ে শাহজালার চামড়া ব্যবসায়ী বহুমুখি সবমায় সমিতির কার্যকরি কমিটির অন্যতম সদস্য গেদা মিয়া সিলেটভিউকে বলেন, সিলেটের চামড়ার বাজার মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমাদের পথে বসার উপক্রম। ঈদের আগের দিন ঢাকার বড় ব্যবসায়ী আমার কাছ থেকে চামড়া কিনবেন না জানিয়ে দেন। আমিও আর চামড়া ক্রয় করবো না বলে সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু ঈদের গতবারের কিছু কাসম্টামার একরকম জোরেই কিছু মাল গছিয়ে দেন। তাই প্রায় ৩ হাজার পিস চামড়া বাধ্য হয়ে কিনেছি। কিন্তু সেগুলোর নায্য দাম পাবো না, লোকসানেই বিক্রি করতে হবে। কারণ- চামড়ার মূল আড়ত ঢাকার পোস্তায় সিলেটের অনেকে মাল নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে না পেরে ফিরে এসেছেন। পোস্তার ব্যসায়ীদের সঙ্গে কথাই বলা যাচ্ছে না।

গেদা মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ৩৫ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছি। প্রতিবছরই কম-বেশি ১০ হাজার পিস চামড়া ক্রয় করতাম। কিন্তু তিন-চার বছর থেকে এ ব্যবসায় ধস শুরু হয়েছে। এবারে তো মারাত্মক অবস্থা। হয়তো ব্যবসাটাই ছেড়ে দিতে হবে একেবারে।

চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির আরেক সদস্য মো. আসাদ সিলেটভিউ-কে বলেন, আমরা কাঁচা চামড়া কিনেছি ১৫০-২০০ টাকায়।  সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে প্রতি পিছের দাম পড়ে যায় ৪০০-৪৫০ টাকা। কিন্তু এ দামে ঢাকার ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে মাল কিনতে চাচ্ছেন না।

তিনি জানান, অবস্থা বিবেচনায় সিলেটের ৬০ ভাগ চামড়া ব্যবসায়ী এবার কোরবানির ঈদে ব্যবসায় নামেননি। আমাদের সমিতিতে ৮০ জন সদস্য রয়ছেন তারা সবাই প্রতি বছরই চামড়ার ব্যবসা করেন, কিন্তু এবারে অর্ধেকের বেশি সদস্য ব্যবসা করেননি। এছাড়াও মৌসুমি (অনিয়মিত) বেশ কিছু ব্যবসায়ী আছেন সিলেটে, তাদের বেশিরভাগও এবারে চামড়া কিনেননি।

উল্লেখ্য, গত ১ আগস্ট ঈদুল আযহার দিন সিলেটে দেখা যায়- বেশি দামে বিক্রির আশায় সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া সংগ্রহ করে খুচরো ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন শহরে, কিন্তু তাদেরকে পুড়তে হয় হতাশার খরতাপে। কারণ, চামড়ার দাম ছিলো অকল্পনীয় কম। গরুর একেকটি চামড়া ২০ টাকা দামেও বিক্রি হয় ঈদের দিন। বড় আকারের গরুর চামড়ার দাম সর্বোচ্চ ওঠে ১০০ টাকা!

ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয় নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে। প্রতি বছরই এখানে হাজার হাজার চামড়ার স্তূপ জমে। ঈদের দিন সন্ধ্যায় রেজিস্ট্রারি মাঠে দেখা যায়, গরুর চামড়া একেবারে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। আর ছাগলের চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছিলো অনাগ্রহ।

ওই দিন বড় আকারের গরুর চামড়া প্রতি পিস ৭০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা যায়। আর ছোট আকারের গরুর চামড়া প্রতি পিস ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায়ও বিক্রি হয়।

খুচরো পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, তারা বেশি দাম দিয়ে প্রতি পিস চামড়া সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা, যারা ট্যানারিতে নিয়ে চামড়া বিক্রি করেন, তারা নানা কারণ দেখিয়ে দাম বেশি দিতে নারাজ। এতে তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন।

আর যারা সিলেটে খুচরো পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিপুল সংখ্যক চামড়া কিনে ঢাকার বিভিন্ন ট্যানারিতে বিক্রি করেন তারা জানান, ট্যানারি মালিকরা তাদের টাকা আটকে রেখেছেন। আগের টাকা পাওনা থাকায় তারা নতুন করে চামড়া কেনায় বিনিয়োগ করতে পারছেন না। মূলত পুরনো পাওনা টাকা ফেরত পাওয়ার আশাতেই এখন কম দামে চামড়া কিনে ট্যানারিগুলোতে সরবরাহ করছেন তারা।

যেমনটি বলছিলেন চামড়া ব্যবসায়ী আকরাম আলী, ‘চামড়া একটা ভালো খাত ছিল দেশের জন্য। সেটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গেল বছরও (দাম না পাওয়ায়) অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছে। হাজার হাজার চামড়া সুরমা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এ বছরও প্রচুর চামড়া নষ্ট হবে।’

তিনি বলেন, ‘ট্যানারিগুলোতে আগের টাকাই পাওনা রয়েছে। এবার ফোন করলে তারা বলেছে, ‘চামড়া কিনবেন না, ঢাকা আসলে টাকা দিতে পারবো না। এবার তো ছাগলের চামড়া ট্যানারিগুলো রাখছেই না।’


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ৩ আগস্ট, ২০২০ / ডালিম

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.