Sylhet View 24 PRINT

এমসি কলেজের ছাত্রাবাস বহিরাগতদের অভয়ারণ্য, দায় নিচ্ছে না কেউ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১০-০১ ০০:১০:৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজের সঙ্গে ছাত্রাবাসও ঠাই করে নিয়েছে গৌরবময় ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু সুনাম ছড়ানো সেই ছাত্রাবাসকে বার বার কলঙ্কিত করছে কতিপয় দুর্বৃত্তরা।

২০১২ সালে শিবির ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জের ধরে আগুন দেওয়া হয় ছাত্রাবাসের ৪২টি কক্ষে। সেই অপকর্মের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি, এরই মাঝে গত শুক্রবার সন্ধ্যারাতে স্বামীর কাছ থেকে নববধূকে কেড়ে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

এদিকে, বর্বর এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বেশিরভাগই বহিরাগত বলে জানিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এর আগে একই বক্তব্য দিয়েছে কলেজ প্রশাসন।

চাঞ্চল্যকর এ গণধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি সার্বিক বিষয়ে বুধবার সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করেছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ ঘটনা ঘিরে কলেজ প্রশাসনের কোনো ত্রুটি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। করোনাকালের আগে ও পরে কলেজ ও ছাত্রাবাসগুলোর ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলাদা আলাদা নির্দেশনা ছিলো। এখানে কাদের কী দায়িত্ব ছিল, দায়িত্বে কোনো অবহেলা ছিলো কি-না এসব নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি।

তিনি বলেন, একশ ৪৪ একর জায়গার উপর থাকা বিশাল ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন তাতে যথেষ্ট গ্যাপ রয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। পুরো ছাত্রাবাসই অরক্ষিত। বহিরাগতরা অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে। ছাত্রাবাসটিতে আছে আলোর সংকট, নেই সীমানা প্রচীর।

প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী বলেন, শুক্রবার ঘটা দু:খজনক ঘটনায় জড়িত বলে যাদের নাম এসেছে এবং গ্রেফতার হয়েছে তাদের মধ্যে একজন কলেজের বর্তমান ছাত্র, আর বাকি সবাই বহিরাগত বলে জানা গেছে। বহিরাগতরা কীভাবে ছাত্রাবাসে থাকে- সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মাধ্যমে জানা গেছে, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অপকর্মের স্থল ২০৫ নম্বর কক্ষ। এই কক্ষ হচ্ছে সব অপরাধের হেডকোয়ার্টার। সন্ধ্যা নামলেই এই কক্ষেই ছুটে আসতো বহিরাগত ও বখাটে ছাত্রলীগ কর্মীরা। মাদকসেবন আর নারীদের নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে মত্ত হতো তারা এই কক্ষে। সবই দেখতেন আশেপাশের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ করতেন না। এমনকি ফিরেও চাইতেন না এই কক্ষের দিকে। ওখানে যা হতো সব যেনো বৈধ।

ছাত্রাবাসজুড়ে বহিরাগত আর ছাত্রলীগ নামধারী দুর্বৃত্তদের রাম-রাজত্ব থাকলেও রহস্যজনক কারণে কলেজ প্রশাসন সবসময়ই থাকে নিরব।

গণধর্ষণের ঘটনার পর ছাত্রাবাসে বহিরাগতদের থাকার বিষয়ে গণমাধ্যমকে অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, অধ্যক্ষ হিসেবে আমি কলেজের সব কিছুরই জিম্মাদার। দায় তো আর আমি এড়াতে পারি না। কিন্তু, কোনো ঘটনা ঘটার আগে তো আর বলা যায় না যে- এমন কিছু হবে।

অধ্যক্ষ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রাবাস বন্ধই ছিলো। অনেক সময় ছাত্রাবাসের গেটে তালা দেওয়া থাকে, অনেক সময় থাকে না। কারণ, ওখানে অনেক শিক্ষক, কর্মচারী এবং তাদের পরিবার থাকেন। ঘটনার সময় হয়তো গেটটা তালা দেওয়া ছিল না। তারা ভেতরে ঢুকে গেছে। ওখানে চার তলা ছাত্রাবাস আছে, পাঁচ তলার কাজ চলছে। ওই ছাত্রাবাসের শেষ মাথায় একটি টিলা আছে। ছাত্রাবাসের সামনের দিকে লাইট থাকলেও একদম পেছনের দিকে নেই। সেখানেই এই মেয়েটির সম্মানহানি করেছে ধর্ষকরা। এরা কলেজ থেকে পাশ করে বের হয়ে গেছে। এদের অধিকাংশই আমার শিক্ষার্থী না। সম্পৃক্ততার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে সেই ছয় জনের মধ্যে একজন বর্তমান শিক্ষার্থী, তিনজন পাশ করে বের হয়ে গেছে এবং দুইজন বহিরাগত ছিলো।

ছাত্রাবাসে বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত ও থাকার বিষয়ে এমসি কলেজের হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন সিলেটভিউ-কে বলেন, এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আমি অথরাইজড না। একমাত্র অধ্যক্ষ সারই এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে পারবেন।

অধ্যক্ষ সালেহ আহমদের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। মিটিংয়ে আছি।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সন্ধ্যারাতে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের শিকার হন এক নববধূ। এ ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদি হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করা হয়।

চাঞ্চল্যকর এ মামলায় এজাহারনামীয় সব আসামিসহ সিলেট রেঞ্জ পুলিশ ও র‌্যাব-৯ এর হাতে গ্রেফতার আটজনের মধ্যে সাতজনকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত ও রিমান্ডে নেয়া আসামিরা হচ্ছে- সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন, আইনুল ও মাহফুজুর রহমান মাছুম।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১ অক্টোবর ২০২০/ডালিম

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.